সাকিব-বিরোধী দেয়াল লিখন বা বিভিন্ন প্রচারণাকেও মানুষের সাংবিধানিক অধিকার বলে মনে করেন ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া।
Published : 13 Oct 2024, 04:13 PM
সাকিব আল হাসানের দেশে ফেরা ও পরে দেশ ছাড়ার ক্ষেত্রে কোনো বাধা থাকার কথা নয় বলেই মনে করেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। তার মতে, এই দেশের নাগরিক হিসেবে সাকিবের ও বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রেরই দায়িত্ব। তবে সাকিব-বিরোধী দেয়াল লিখন ও আন্দোলনকে মানুষের অধিকার বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়াম পরিদর্শনে এসে রোববার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে সাকিবের দেশে ফেরা নিয়ে নানা প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন ক্রীড়া উপদেষ্টা।
সম্প্রতি ভারত সফরে কানপুর টেস্টের আগে সাকিব ঘোষণা করেন, দেশের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মিরপুর টেস্ট খেলে এই সংস্করণকে বিদায় জানাতে চান তিনি। তবে বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হওয়ায় তার দেশে ফেরা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে এখনও।
ক্রীড়া উপদেষ্টা যদিও সাকিবের ফেরা বা পরবর্তীতে দেশ ছাড়া নিয়ে সমস্যার কিছু দেখছেন না। তবে আইনী ব্যাপারের গভীরেও তিনি যেতে চান না।
“(সাকিব আল হাসানের) দেশে আসা কিংবা বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো বাধা তো থাকার কথা না, আমি যতটুকু জানি। আর আইনের বিষয়টা আইন মন্ত্রণালয় উত্তর দিতে পারবে। আমি বিশেষজ্ঞও না কিংবা আইন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বেও না।”
“আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমাদেরও কথা হয়েছে। আসিফ নজরুল স্যার (আইন উপদেষ্টা) এর মধ্যেই বলেছেন সংশ্লিষ্টতা না পেলে প্রাথমিক তদন্তেই আসলে… যে মামলা হয়েছে, হত্যা মামলা, সেখান থেকে নাম বাদ পড়ে যাবে।”
সবশেষ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লিগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন সাকিব। বিদায়ী টেস্ট খেলতে তার দেশে ফেরা নিয়ে নানা টানাপোড়েনের এক পর্যায়ে কিছুদিন আগে ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেছিলেন, সাকিবকে তার রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে।
সেটির সূত্র ধরেই কদিন আগে সামাজিক মাধ্যমে নিজের অবস্থান তুলে ধরেন সাকিব। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দুই মাসের বেশি সময় পর সেই লেখায় তিনি রাজনীতিতে আসার কারণ ব্যাখ্যা করেন এবং বিদায়ী টেস্ট খেলতে দেশে আসার কথাও জানিয়ে দেন।
এরপর গত কয়েক দিন ধরে শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের আশেপাশে সাকিব-বিরোধী নানা কর্মসূচি পালন করেছেন অনেকে। স্টেডিয়ামের দেয়ালে তাকে নিয়ে নানারকম প্রতিবাদী লেখা ও গ্রাফিতি আঁকা হয়েছে। স্লোগান-মিছিল থেকে শুরু করে সাকিব-বিরোধী প্রচারণা চলছে। সাকিবের পক্ষের ও বিপক্ষের লোকজনের মুখোমুখি অবস্থানকে ঘিরে উত্তেজনাও ছড়িয়েছে বেশ।
এসব কর্মসূচিকে মানুষের সাংবিধানিক অধিকার বলছেন ক্রীড়া উপদেষ্টা। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভাবমূর্তির ব্যাপারটিও ভাবনায় রাখার অনুরোধ করলেন তিনি।
“একজন ক্রিকেটার তিনি খেলবেন এবং তিনি বাংলাদেশের নাগরিক, আসার ক্ষেত্রে তো কোনো বাধা আমি দেখি না। তবে যেটা দেয়াল লিখনের কথা বলছেন বা সোশাল মিডিয়ায় কিছু দেখেছি, এটা তো আসলে আবেগের ব্যাপার। তাদেরও ওই অধিকার আছে, গণতান্ত্রিক দেশ, সাংবিধানিক অধিকার, যে কোনো ধরনের মুভমেন্ট বা যে কোনো কিছু করার। তবে এক্ষেত্রে আমার ‘ইয়ে’ থাকবে কারও নিরাপত্তা যেন হুমকির মুখে যেন না ফেলি।”
“যদি আইনগত কোনো বিষয় থাকে, আইন তো আইনের গতিতে চলবে। সেটা নিয়ে আমিও কোনো মন্তব্য করতে পারব না। তবে নিরাপত্তার বিষয়ে সর্বোচ্চ শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত। যেহেতু এখানে দক্ষিণ আফ্রিকা আসবে, আমাদের পরিবেশটাও ভালো রাখতে হবে। না হলে বাইরের দেশগুলো দেশে খেলতে আসতে নিরাপত্তার সমস্যাটা অনুভব করবে।”
দেশে ফেরার পর একজন ক্রিকেটার বা দেশের নাগরিক হিসেবে সাকিবের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাখলেন উপদেষ্টা। তবে এই অলরাউন্ডারের বিরুদ্ধে হওয়া হত্যা মামলার ব্যাপারে তিনি সরাসরি মন্তব্য করতে চাইলে না।
“রাষ্ট্রের জায়গা থেকে প্রত্যেক নাগরিকেরই নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। এবং ক্রিকেট দলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সেটা আমরা নিশ্চিত করব। এবং আমি মনে করি যে আবেগের জায়গাটা অবশ্যই আছে। যেহেতু বড় একটা আন্দোলন হয়েছে এবং আগের ফ্যাসিবাদি সরকারের সঙ্গে সাকিবের সম্পৃক্ততা ছিল। যেটা উনি ক্লিয়ারেন্স দিয়েছেন উনার পোস্টে। তারপরও কিছু ইমোশন রয়ে গেছে। সেটি যৌক্তিক বা অযৌক্তিক, আমি ওই প্রশ্নে যাব না। সেটা অন্য বিতর্ক।”
“তবে কোনো আইনি সমস্যা এখন পর্যন্ত নেই, এমনটা দেখা যাচ্ছে। আইন তো আসলে আইনের মতো চলে। আমার মনে হয় বাংলাদেশের মানুষ আইনের প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল। এবং এটা আগেও প্রমাণিত হয়েছে। বাংলাদেশে এত বড় একটা অভ্যূত্থান হয়েছে। এরপর আসলে যেটা হয়, বিভিন্ন দেশে যে ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়, সেক্ষেত্রে এদেশের মানুষ আইনের প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল জায়গাটা ধরে রেখেছে। আমরা ওই ধরনের পরিস্থিতির দিকে আসলে এত বেশি যায় নাই, যেটা যাওয়ার কথা ছিল এবং সবাই ধারনাও করছিল খুব বাজে অবস্থা হতে পারে।”
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মিরপুর টেস্ট শুরু হবে আগামী ২১ অক্টোবর। সেই টেস্টের জন্য বাংলাদেশের স্কোয়াড ঘোষণা করা হয়নি এখনও। দল ঘোষণা করা হলেই হয়তো আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত হয়ে যাবে সাকিবের ফেরা বা না ফেরার ব্যাপারটি।