মাইলফলকের চেয়ে দলের জন্য ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলতে পারাই গুরুত্বপূর্ণ, বলছেন রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে ১৯১ রানে আউট হওয়া ব্যাটসম্যান।
Published : 25 Aug 2024, 12:06 PM
হাতছানি দিয়েও মিলিয়ে গেছে ‘২০০।’ তবে সেই অপ্রাপ্তিতে তাকাচ্ছেন না মুশফিকুর রহিম। তাকে বরং তৃপ্তি দিচ্ছে ৫২২ মিনিট ক্রিজে কাটানো আর ৩৪১ বল খেলতে পারা এবং বড় কয়েকটি জুটি গড়তে পারা। বাংলাদেশের অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান বললেন, ব্যক্তিগত মাইলফলকের চেয়ে ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলতে পারাই তার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
পাকিস্তানের বিপক্ষে রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে অসাধারণ ব্যাট করেও একটুর জন্য ক্যারিয়ারের চতুর্থ ডাবল সেঞ্চুরি পাননি মুশফিক। ম্যাচের চতুর্থ দিনে শনিবার তিনি আউট হন ১৯১ রানে।
শেষ দিনের খেলা শুরুর আগে টিভিতে সাক্ষাৎকারে ৩৭ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান বললেন, দলের জন্য কার্যকর কিছু করতে পেরে স্বস্তি পাচ্ছেন তিনি।
“ভালো লাগছে। দলের জন্য অবদান রাখতে পারাটা দারুণ। আশা করিম আজকের দিন শেষে আমরা ওপরে থাকব।”
মুশফিকের ম্যারাথন ইনিংস, মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে সপ্তম উইকেটে রেকর্ড গড়া জুটি ও আরও কয়েকটি কার্যকর জুটিতে ৫৬৫ রান তুলে প্রথম ইনিংসে ১১৭ রানের লিড নেয় বাংলাদেশ।
এই ইনিংসের পথে তামিম ইকবালকে ছাড়িয়ে দেশের বাইরে টেস্টে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরি ও রানের রেকর্ড নিজের করে নেন মুশফিক। ক্যারিয়ারে তৃতীয়বার ৫০০ মিনিট উইকেটে কাটান তিনি। ব্যক্তিগত আরও কিছু মাইলফলক ও অর্জন ধরা দেয় তার।
তবে শেষ পর্যন্ত ইনিংসের সমাপ্তিটা তার প্রত্যাশামতো হয়নি। ১৯১ রানে আউট হয়ে ফেরার সময় তার শরীরী ভাষায় হতাশা ফুটে ওঠে পরিষ্কারভাবেই।
তবে তাৎক্ষনিক সেই হতাশা তার ইনিংসর সামগ্রিক প্রতিক্রিয়া নয়। ডাবল সেঞ্চুরি না পাওয়ার আফসোস নেই বলেই দাবি করলেন। বরং দলের জন্য বড় কিছু করতে পেরে তিনি উচ্ছ্বসিত।
“সত্যি বলতে, মাইলফলক আমার জন্য কেবল একটি সংখ্যা। যতক্ষণ পর্যন্ত দলে অবদান রাখতে পারছি, বিশেষ করে সেঞ্চুরি করতে পারছি এবং সেটাকে বড় সেঞ্চুরিতে রূপ দিতে পারছি, ম্যাচ শেষে সেটিই ম্যাচ জেতানো ইনিংস হতে পারে। আমার লক্ষ্য সবসময় এটিই থাকে।”
“২০০-২৫০ এসব স্রেফ সংখ্যা। ক্রিজে লম্বা সময় কাটাতে পেরে ও সতীর্থ কয়েকজনের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ জুটি গড়তে পেরেই আমি খুশি।”
বয়স তার ৩৭ পেরিয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কাটিয়ে দিয়েছেন ১৯ বছরের বেশি। বর্তমানে সক্রিয় ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে পুরোনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারই তিনিই। পারফরম্যান্সে এখনও দলের সেরাদের একজন তিনি।
মুশফিকের মতে, প্রতিনিয়ত নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার তাড়নাই এখনও তার সেরাটা বের করে আনছে।
“নিজের সঙ্গে সৎ থাকার চেষ্টা করি ও প্রতিটি দিন উন্নতির চেষ্টা করি। নিজের সঙ্গে লড়াই করার চেষ্টা করি। এটিই এখনও পর্যন্ত আমার রহস্য।”
“সত্যি বলতে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে লম্বা সময় টিকতে হলে বা দেশের হয়ে ধারাবাহিকভাবে খেলতে হলে মাঠের ভেতরে ও বাইরে অনেক কাজ করতে হয়। খাদ্যাভ্যাসও এটার অংশ, জিমে ও মাঠে বাড়তি কাজ করতে হয়। কেউ সেটা দেখতে পারবে না। তবে নিজের কাজ করে যেতে হয়।”
এবারের পাকিস্তান সফরের আগে লম্বা সময় ধরে প্রস্তুতির সুযোগ পেয়েছেন মুশফিকরা কয়েকজন। দেশে যদিও ক্রিকেট মৌসুম ছিল না। বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দল ব্যস্ত ছিল বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ও পরে বিশ্বকাপের আসরে। টেস্ট দলের সম্ভাব্য যারা টি-টোয়েন্টিতে ছিলেন না, তাদেরকে বাংলাদেশ টাইগার্সের হয়ে অনুশীলনে রাখার ব্যবস্থা করেছিল বিসিবি। মুশফিক, মিরাজ, তাইজুল ইসলামরা কঠিন অনুশীলনে ঘাম ঝরান চট্টগ্রামে।
মুশফিক বললেন, সেই প্রস্তুতি তাকে দারুণভাবে তৈরি করে দিয়েছে নতুন মৌসুমের জন্য।
“এবারের প্রস্তুতি পর্বে যেটা হয়েছে, সত্যি বলতে, ক্যারিয়ারে মনে হয় প্রথমবার আড়াই মাসের মতো সময় ফাঁকা পেয়েছি। দেশে ক্রিকেট খুব একটা ছিল না, কারণ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ছিল। খুব ভালো একটা ‘উইন্ডো’ পেয়েছি দুই-আড়াই মাসের। সেটা নিয়ে পরিকল্পনা করে সেই অনুযায়ী কাজ করেছি।”
“ফিটনেস নিয়ে অনেক কাজ করেছি তখন, পরে স্কিলও ঝালিয়ে নিয়েছি। বিসিবি ও বাংলা টাইগার্স এটার জন্য ধন্যবাদ, স্থানীয় সব কোচের প্রতি কৃতজ্ঞতা।”
রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে পাকিস্তানের চেয়ে ৯৪ রানে এগিয়ে থেকে শেষ দিন শুরু করেছে বাংলাদেশ। পাকিস্তানিদের উইকেট আছে ৯টি। ম্যাচ ড্র হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তবে নাটকীয় কিছুর আশা ছাড়ছেন না মুশফিক।
“আমরা খুব ভালো অবস্থানে আছি। যদিও উইকেট এখনও খুব ভালো (ব্যাটিংয়ের জন্য), তবে আমরা নিজেদের সেরাটা দিয়ে চেষ্টা করব। প্রথম সেশনে তিন-চারটি উইকেট নিতে পারলে, কে জানে… ক্রিকেট খেলায় তো মজার অনেক কিছুই হয়!”