ভারত-নিউ জিল্যান্ড সিরিজ
রাভিন্দ্রা জাদেজা ও ওয়াশিংটন সুন্দারের দারুণ বোলিংয়ে মুম্বাই টেস্টের প্রথম দিন নিউ জিল্যান্ডকে আড়াইশর নিচে আটকে দিলেও, স্বস্তিতে দিন শেষ করতে পারেনি ভারত।
Published : 01 Nov 2024, 05:57 PM
রিভার্স সুইপের চেষ্টায় বোল্ড ইয়াসাসভি জয়সওয়াল। ‘নাইটওয়াচম্যান’ হিসেবে নেমে প্রথম বলেই আউট মোহাম্মদ সিরাজ। চমৎকার শটে চার মারার পরের বলেই রান আউট ভিরাট কোহলি। ৮ বলের মধ্যে নেই ৩ উইকেট! রাভিন্দ্রা জাদেজা ও ওয়াশিংটন সুন্দারের দারুণ বোলিংয়ে নিউ জিল্যান্ডকে আড়াইশর নিচে আটকে দিলেও, শেষ বিকেলের ওই ঝড়ে বিপাকে এখন ভারত।
মুম্বাইয়ে সিরিজের তৃতীয় টেস্টের প্রথম দিন দুই দল মিলিয়ে পতন হয়েছে ১৪ উইকেটের।
একটা পর্যায়ে ৩ উইকেটে ১৫৯ থেকে ব্যাটিং ধসে ২৩৫ রানে গুটিয়ে যায় নিউ জিল্যান্ড। ৭৬ রানে হারায় তারা শেষ ৭ উইকেট।
জবাবে ১ উইকেটে ৭৮ থেকে ভারতের স্কোর হয়ে যায় ৪ উইকেটে ৮৪। আর কোনো উইকেট না হারিয়ে শুক্রবারের খেলা শেষ করে তারা ৮৬ রান নিয়ে। এখনও ১৪৯ রানে পিছিয়ে আছে হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর লড়াইয়ে নামা রোহিত শার্মার দল।
ওয়াংখেড়েতে তীব্র গরমের প্রথম দিনেই উইকেট থেকে বেশ টার্ন পেয়েছেন স্পিনাররা। দুই স্পিন অলরাউন্ডার জাদেজা ও ওয়াশিংটন মিলে নিয়েছেন ৯ উইকেট। বাঁহাতি স্পিনে টানা ২২ ওভারের স্পেলে জাদেজার শিকার ৬৫ রানে ৫টি, অফ স্পিনে ওয়াশিংটন ৮১ রানে নিয়েছেন ৪টি।
শেষ বেলায় পরপর দুই বলে দুটি উইকেট নিয়েছেন নিউ জিল্যান্ডের বাঁহাতি স্পিনার এজাজ প্যাটেল।
ব্যাটিংয়ে উইল ইয়াং ও ড্যারিল মিচেল ছাড়া নিউ জিল্যান্ডের আর কেউ উল্লেখ করার মতো কিছু করতে পারেননি। ১২৯ বলে ৩টি করে চার ও ছক্কায় ৮২ রান করেন মিচেল। ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ১৩৮ বলে ৭১ রান করেন ইয়াং।
পুনেতে আগের ম্যাচে ১৩ উইকেট নিয়ে নিউ জিল্যান্ডের জয়ের নায়ক মিচেল স্যান্টনার মুম্বাই টেস্টে নেই সাইড স্ট্রেইন চোটের কারণে। টিম সাউদির জায়গায় ফেরানো হয়েছে ম্যাট হেনরিকে। জাসপ্রিত বুমরাহর অসুস্থতায় ভারতের একাদশে ফিরেছেন সিরাজ।
টস জিতে অনুমিতভাবে ব্যাটিং নেন কিউই অধিনায়ক টম ল্যাথাম। প্রথম দুই টেস্টে দারুণ ব্যাটিং করা ডেভন কনওয়ে এবার টিকতে পারেননি। চতুর্থ ওভারে পেসার আকাশ দিপের বলে এলবিডব্লিউ হন তিনি।
প্রথম ঘন্টায় আর কোনো উইকেট পড়েনি। পরের ঘন্টায় চমৎকার দুটি ডেলিভারিতে ল্যাথাম ও রাচিন রাভিন্দ্রাকে বোল্ড করে দেন ওয়াশিংটন। টানা তিন ইনিংসে তার বলে বোল্ড হলেন রাভিন্দ্রা।
৩ উইকেটে ৯২ রান নিয়ে প্রথম সেশন শেষ করে নিউ জিল্যান্ড। লাঞ্চ বিরতির পর দলকে এগিয়ে নেন ইয়াং ও মিচেল। জমে ওঠে তাদের জুটি। ইয়াং ফিফটি করেন ৯৪ বলে।
ইয়াংকে ফিরিয়েই ১৫১ বল স্থায়ী ৮১ রানের জুটি ভাঙেন জাদেজা। স্লিপে ধরা পড়েন ব্যাটসম্যান। ওই ওভারেই জাদেজার দারুণ ডেলিভারিতে বোল্ড হন টম ব্লান্ডেল।
এরপর আর কোনো বড় জুটি হয়নি। উইকেট পড়ে নিয়মিত। মিচেল এক প্রান্তে বাড়ান রান। কয়েকটি বড় ছক্কা মারেন তিনি।
গ্লেন ফিলিপসকে বোল্ড করার পর একই ওভারে ইশ সোধি ও হেনরিকে ফিরিয়ে পাঁচ উইকেট পূর্ণ করেন জাদেজা। টেস্ট ক্যারিয়ারে ১৪ বার এই স্বাদ পেলেন তিনি। মিচেলকে থামিয়ে ওই ওভারেই এজাজকে ফিরিয়ে কিউইদের ইনিংস গুটিয়ে দেন ওয়াশিংটন।
বিস্ময়করভাবে, ১৪ ওভার হাত ঘুরিয়ে কোনো উইকেটের দেখা পাননি রাভিচান্দ্রান অশ্বিন! নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে তাদের অল আউট হওয়া কোনো ইনিংসে এই প্রথম কোনো উইকেট পেলেন না এই অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার।
জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে রোহিতকে দ্রুত হারায় ভারত। ১৫ রানে একবার জীবন পেয়েও ভারত অধিনায়ক ১৮ রানে ফেরেন হেনরির বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে।
দলকে এগিয়ে নেন এরপর জয়সওয়াল ও গিল। তাদের জুটিতে পঞ্চাশ পূর্ণ হয় কেবল ৫৮ বলে। এরপরই দিনের শেষ ১৫ মিনিটের ঝড়ে এলোমেলো হয়ে যায় স্বাগতিকদের ইনিংস।
এজাজের লেগ স্টাম্পের বলে রিভার্স সুইপ করে উইকেট বিলিয়ে আসেন জয়সওয়াল (৫২ বলে ৩০)। পরের বলে এলবিডব্লিউ হন সিরাজ। রাভিন্দ্রাকে একটি বাউন্ডারির পর অযথাই রান নিতে গিয়ে আউট হন কোহলি। মিড অন থেকে দৌড়ে এসে সরাসরি থ্রোয়ে বোলার প্রান্তের স্টাম্প ভেঙে দেন হেনরি।
মাথা নিচু করে মাঠ ছাড়েন কোহলি। দিনের বাকি তিনটি বল নিরাপদে কাটিয়ে দেন গিল ও রিশাভ পান্ত।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৬৫.৪ ওভারে ২৩৫ (ল্যাথাম ২৮, কনওয়ে ৪, ইয়াং ৭১, রাভিন্দ্রা ৫, মিচেল ৮২, ব্লান্ডেল ০, ফিলিপস ১৭, সোধি ৭, হেনরি ০, এজাজ ৭, ও’রোক ১*; সিরাজ ৬-০-১৬-০, আকাশ ৫-০-২২-১, অশ্বিন ১৪-০-৪৭-০, ওয়াশিংটন ১৮.৪-২-৮১-৪, জাদেজা ২২-১-৬৫-৫)
ভারত ১ম ইনিংস: ১৯ ওভারে ৮৬/৪ (জয়সওয়াল ৩০, রোহিত ১৮, গিল ৩১*, সিরাজ ০, কোহলি ৪, পান্ত ১*; হেনরি ৫-১-১৫-১, ও’রোক ২-১-৫-০, এজাজ ৭-১-৩৩-২, ফিলিপস ৪-০-২৫-০, রাভিন্দ্রা ১-০-৮-০)