ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অসাধারণ ডাবল সেঞ্চুরিতে স্তুতির জোয়ারে ভাসছেন ভারতের এই তরুণ ওপেনার।
Published : 03 Feb 2024, 06:33 PM
স্যার ডন ব্র্যাডম্যানকে মনে করা হয় সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান। ব্যাটিং সাফল্যের কোনো কিছুতে তার নাম মনে করিয়ে দিতে পারাই যে কোনো ব্যাটসম্যানের জন্য বিশেষ কিছু। সেখানে ইয়াশাসবি জয়সওয়াল যে একটি জায়গায় ব্র্যাডম্যানের ওপরে আছেন, সেটিই মনে করিয়ে দিলেন ভারতের সাবেক ব্যাটসম্যান আকাশ চোপড়া। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ডাবল সেঞ্চুরির পর ভারতের তরুণ ওপেনার স্তুতির জোয়ারে ভাসছেন ক্রিকেট বিশ্বজুড়েই।
বিশাখাপাত্নাম টেস্টের প্রথম দিন শুক্রবার রাজত্ব ছিল জয়সওয়ালের। ভারতের বাকিরা যেখানে ব্যর্থ, সেখানে ইংলিশ বোলারদের সামনে একাই দলকে টানেন তিনি। চোখধাঁধানো ব্যাটিংয়ে প্রথম দিনে অপরাজিত ছিলেন ১৭৯ রানে। দ্বিতীয় দিন ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির স্বাদ পান বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। তার ২০৯ রানের সৌজন্যে প্রথম ইনিংসে ৩৯৬ রান করে ভারত। দলের আর কোনো ব্যাটসম্যান ৩৫ রানও করতে পারেননি।
দুর্দান্ত ব্যাটিং দিয়ে মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন তিনি বেশ আগেই। তবে এই টেস্টে ব্যাট হাতে যে দক্ষতা ও পরিপক্বতা দেখিয়েছেন তিনি, সেটা এখন সবার মুখে মুখে।
প্রথম দিনের খেলা শেষে নিজের ইউটিউব চ্যানেলে আকাশ চোপড়া তুলে ধরেন জয়সওয়ালের ব্যাটিং নিয়ে নিজের ভাবনা। ভারতের সাবেক ব্যাটসম্যান ও ক্রিকেট বিশ্লেষক মনে করিয়ে দেন, ফিফটিকে সেঞ্চুরিতে রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্র্যাডম্যানের চেয়ে এগিয়ে তরুণ এই ভারতীয়।
“সবচেয়ে চমৎকার পারফরম্যান্সটি এসেছে জয়সওয়ালের ব্যাট থেকে। বাচ্চা ছেলেটা কী দারুণ ব্যাটিং করেছে! জিমি অ্যান্ডারসন ছিলেন একমাত্র পেসার, তার ডেলিভারিগুলো সে একের পর এক ছেড়ে দিয়েছে। জেমস অ্যান্ডারসনের বোলিংকে অনেক সম্মান দিয়েছে সে।”
“যখন স্পিনার আক্রমণে আনা হয়, প্রথম ওভারে দুটি চার মারে সে। এরপর দেখিয়ে দেয়, কেন এই ক্রিকেটারটি এতটা বিশেষ একজন। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১০ বা এর বেশি সেঞ্চুরি করেছে এমন খেলোয়াড়দের মধ্যে ফিফটিকে সেঞ্চুরিতে রূপান্তর করার হার জয়সওয়ালের বেশি, এমনকি এই জায়গায় সে স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের চেয়ে এগিয়ে।”
প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারে ১১৭ সেঞ্চুরি ও ৬৯ ফিফটি করেছেন ব্র্যাডম্যান। তার ফিফটিকে সেঞ্চুরিতে রূপান্তর করার হার প্রায় ৬৩ শতাংশ। আর জয়সওয়ালের এই হার ৭৩ শতাংশের বেশি। এখন পর্যন্ত ৪ ফিফটি ও ১১ সেঞ্চুরি করেছেন ২২ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান।
ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টেও কেবল একজন বিশেষজ্ঞ পেসার নিয়ে খেলছে ইংল্যান্ড। একাদশে রাখা হয়েছে টেস্ট ইতিহাসের সফলতম পেসার জেমস অ্যান্ডারসনকে। অভিজ্ঞ এই পেসারকে যেভাবে সামাল দিয়ে ব্যাটিং করেছেন জয়সওয়াল, তা মনে ধরেছে ধারাভাষ্যকার ও ভারতের সাবেক ব্যাটসম্যান সাঞ্জায় মাঞ্জরেকারের।
“এমনটা নয় যে, জিমি অ্যান্ডারসন খুব বেশি বোলিং করেননি, তিনি অনেক বোলিং করেছেন। আমার মনে হয় না, তার বলে একটি বাউন্ডারিও মেরেছে জয়সওয়াল। এটাই পরিপক্বতা। সে বুঝতে পেরেছিল যে, এই বোলার তাকে মারার বল দেবে না।”
“সে আক্রমণাত্মক ক্রিকেটার, আধুনিক যুগের ব্যাটসম্যান এবং আইপিএল তারকাও। তবে আজকের বেশিরভাগ শটই সে বোলারকে এলোমেলো করতে কিংবা বাজবল খেলার চেষ্টা করতে খেলেনি। সে আলগা বলগুলোকে মেরেছে এবং এটাই জয়সওয়ালের সবচেয়ে চমৎকার দিক ছিল। পাল্টা-আক্রমণ করে নয়, স্বাভাবিক ব্যাটিং করে জয়সওয়াল আধিপত্য বিস্তার করতে শুরু করে। এটাই দারুণ লক্ষণ।”
জয়সওয়ালের শট নির্বাচনের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ভারতের সাবেক বাঁহাতি স্পিনার প্রজ্ঞান ওঝা। এই তরুণের ফিফটিকে সেঞ্চুরিতে রূপ দেওয়ার হারে মুগ্ধ তিনিও।
“চাপের মুখে সে দমে যায়নি। একপাশে উইকেট পড়ছিল এবং সে তার অভিজ্ঞ সঙ্গী রোহিত শর্মাকে হারায়। তার অন্য সঙ্গীরাও খেলেছে এবং জুটি গড়েছে, কিন্তু সে যেভাবে খেলেছে, কেবল একটি শটের কথাই মনে পড়ছে, যেখানে অফ-স্পিনারের বিপক্ষে সে কিছুটা ধৈর্য হারিয়ে ফেলেছিল।”
“এছাড়া সে যে মানসিকতা দেখিয়েছে এবং যে ছন্দে ব্যাটিং করেছে, সে বুঝে খেলেছে এবং আজ দেখিয়েছে তার পরিসংখ্যান এত ভালো কেন এবং তার রূপান্তরের হার (ফিফটিকে সেঞ্চুরিতে) কেন এত বেশি।”
ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক ও ব্যাটিং গ্রেট অ্যালেস্টার কুক বিবিসির সঙ্গে আলাপচারিতায় বললেন, বয়সের তুলনায় অনেক বেশি পরিণত জয়সওয়াল।
“দলের প্রয়োজনের সময়েই নিজেকে মেলে ধরেছে সে। ২২ বছর বয়সের তুলনায় অনেক পরিপক্ক ও স্কিলসমৃদ্ধ ইনিংস এটি।”
“ইয়াশাসবি জয়সওয়াল অসাধারণ খেলেছে। বেশ ভালো উইকেটে ভারতের বাকিদের সংগ্রহ ৬ উইকেটে ১৫৮। তাকে যদি দলের বাইরে রাখা হয়, তাহলে ব্যাটিং লাইন-আপের ভঙ্গুর দশা ফুটে উঠবে।”