সেপ্টেম্বরের শুরুতে পাকিস্তানে সেঞ্চুরির পর থেকে সব ধরনের ক্রিকেটে রান খরায় ছিলেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান, ঢাকা ক্যাপিটালসের গত ম্যাচে একাদশের বাইরেও ছিলেন তিনি।
Published : 10 Jan 2025, 09:00 PM
খেলা লাল বলে হোক বা সাদা, গায়ের পোশাক সাদা হোক কিংবা রঙিন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বা ঘরোয়া, গত চার মাসে লিটন কুমার দাস ছিলেন ধারাবাহিক। তবে সেই ধারাবাহিকতা ব্যর্থতার। একই হতাশার বৃত্তে তিনি ছিলেন বন্দি। অবশেষে সেই জাল ছিড়তে পারলেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান।
বিপিএলে শুক্রবার ঢাকা ক্যাপিটালসের হয়ে সিলেট স্ট্রাইকার্সের বিপক্ষে ৪৩ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলেন লিটন।
সব ধরনের ক্রিকেট মিলিয়ে ২৩ ইনিংস পর ফিফটি করতে পারলেন তিনি।
সবশেষ গত ১ সেপ্টেম্বর পাকিস্তান সফরে রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে ১৩৮ রানের ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। ওই টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে তাকে ব্যাট করতে হয়নি। এরপরই শুরু তার দুঃসময়ের।
ওই মাসেই ভারত সফরে দুই টেস্টে তার রান ছিল ২২, ১ , ১৩ ও ১। টি-টোয়েন্টি সিরিজের তিন ম্যাচে করেন ৪, ১৪ ও ৪২। দেশে ফিরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে একটি টেস্ট খেলে সংগ্রহ ছিল ৭ ও ১।
নভেম্বর-ডিসেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে টেস্ট সিরিজে চার ইনিংসে তিনি করতে পারেন ৪০, ২২, ১ ও ২৫। ওয়ানডে সিরিজে পারফরম্যান্স ছিল তার যাচ্ছেতাই (তিন ম্যাচ মিলিয়ে ছয়)। খুব একটা উন্নতি করতে পারেননি টি-টোয়েন্টি সিরিজেও (০, ৩ ও ১৪)।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের কঠিন দুনিয়া থেকে ঘরোয়ার ক্রিকেটের আঙিনায় ফিরলেও তার ব্যাটে সুসময় ফেরেনি। বিপিএলের প্রথম ম্যাচে ৩১ রান করলেও বল খেলেন ২৭টি। তার পরও কিছু রান করায় আশার উপকরণও ছিল কিছু। কিন্তু এরপর অবস্থা সেই আগের মতোই। পরের দুই ম্যাচে রান করেন ০ ও ২।
মিরপুর থেকে সিলেটে এসে তাকে নিয়ে আশা আর হতাশা, দুটিই ব্যক্ত করেন ঢাকা ক্যাপিটালসের কোচ খালেদ মাহমুদ।
“আমি নিজেই খুব চাপে থাকি, যখন লিটন রান না করে। আমার সবচেয়ে প্রিয় ক্রিকেটারদের একজন সে, বাংলাদেশের ক্রিকেটে। যদিও সবাই বারবার আমাকে বলে, তবে আমি বারবারই বলব, লিটন ১০ রান করলেও দলে রাখতে চাই। কারণ লিটনের এত বড় ভক্ত আমি। আমি জানি, ওর সামর্থ্য কতটা। সবাই জানে এটা, অনেক বছর ধরে যারা তার ব্যাটিং দেখছে।”
“লিটনের একটা ব্যাডপ্যাচ যাচ্ছে। সবারই যায় এটা। একটা ভালো ইনিংস দরকার। ভালো শুরু করেছিল প্রথম ম্যাচে। টি-টোয়েন্টির বিচারে স্ট্রাইক রেটের দিক থেকে খুব বড় ইনিংস নয়, তার পরও…ওর ব্যাটিং দেখলে ওই ৩০ রান দেখতেও ভালো লাগে। তখন ভাবলাম যে, ৩০ করেছে, তাহলে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়াবে। কিন্তু পরের দুটি ম্যাচে ব্যর্থ হলো। ও নিজেও জানে… বিশেষ করে শেষ ম্যাচে যখন স্পিনে মারতে গিয়ে আউট হলো, কতটা বাজে বলে আউট হলো, নিজেও জানে। আমার বলার দরকার নেই।”
১০ রান করলেও তাকে খেলানোর কথা বলেছিলেন কোচ। লিটন দুঃখজনকভাবে পরের ম্যাচে আউট হন ৯ রানে। এরপর শেষ পর্যন্ত ঢাকা ক্যাপিটালসের একাদশের বাইরে রাখা হয় তাকে। যদিও দল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি তার বাইরে থাকার কারণ, তবে সেটিকে বাদ ধরে নেওয়া যায় অনায়াসেই।
এক ম্যাচ বিরতির পর অবশেষে ফিরে পাওয়া গেল সেই প্রত্যাশিত লিটনকে।
সিলেট স্ট্রাইকার্সের বিপক্ষে এ দিন শুরু থেকেই বেশ সাবলিল মনে হয়েছে তাকে। চতুর্থ ওভারে টানা তিনটি বাউন্ডারি মারেন তিনি তানজিম হাসানকে। সেই গতিতে এগিয়ে ফিফটি করে ফেলেন ২৯ বলে।
ফিফটির পরও এগিয়ে যান কিছুটা। ষোড়শ ওভারে রাকিম কর্নওয়ালকে সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হয়ে থামে তার ১০ চার ও ১ ছক্কার ইনিংস।
তিনি নিজে যেমন কিছুটা স্বস্তির শ্বাস নিতে পারবেন এই ইনিংসে, বিপিএল প্রথম পাঁচ ম্যাচের সবকটি হেরে যাওয়া ঢাকা ক্যাপিটালসের ম্যানেজমেন্টও আশার ছোঁয়া পাবে নতুন করে।