বিপিএল
এবারের বিপিএলে অবিশ্বাস্য রকমের বড় ওয়াইড ও নো বল, বেশ কয়েকবার পিচের বাইরে বল করা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে তুমুল, সিলেট স্ট্রাইকার্সের এই ম্যাচেও দেখা গেল এমন অস্বাভাবিক কিছু।
Published : 20 Jan 2025, 09:07 PM
ম্যাচের শুরুতে ফাইন লেগে জাকের আলি, থার্ড ম্যানে জাকির হাসান আর কাভারে জর্জ মানজি। সিলেট স্ট্রাইকার্সের আগের ম্যাচগুলোতে পর্যায়ক্রমে তারা ছিলেন গ্লাভস হাতে উইকেটের পেছনে। সেই তিনজন একাদশে থাকার পরও অষ্টম ম্যাচে কিপিংয়ের দায়িত্ব পেলেন রনি তালুকদার, গত ৯ বছরে স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে যিনি কিপিং করেছেন মোটে দুই ম্যাচে!
জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে সোমবারের ম্যাচে উইকেটকিপিং ছাড়াও সিলেটের খেলায় ছিল আরও কিছু অস্বাভাবিকতা। এলোমেলো বোলিংয়ে ২৫ রান তারা দেয় অতিরিক্ত। প্রথম তিন ওভারে চমৎকার বোলিং করা টিপু সুলতান শেষে শুরু করেন ওয়াইডের ছড়াছড়ি। একাদশে থেকেও বোলিং পাননি অভিজ্ঞ পেসার আল আমিন হোসেন।
সিলেটের বোলারদের আলগা বোলিংয়ের সুযোগ কাজে লাগাতে ভুল করেনি ঢাকা ক্যাপিটালস। লিটন কুমার দাস, থিসারা পেরেরাদের দারুণ ব্যাটিংয়ে ১৯৬ রানের পুঁজি দাঁড় করায় তারা। পরে রনি, জাকের, আরিফুল হকরা ব্যাট হাতে লড়াই করলেও ১৯০ রানের বেশি যেতে পারেনি সিলেট।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, টস হওয়ার পর অনুশীলনে কাঁধে চোট পান আল-আমিন। ঢাকার কাছে তাই বদলি ক্রিকেটার খেলানোর সম্মতি চান সিলেট। দলটির প্রধান কোচ খালেদ মাহমুদ রাজি হলেও তাতে সায় দেননি অধিনায়ক থিসারা পেরেরা। পুরো ইনিংস বদলি হিসেবে ফিল্ডিং করেন দ্বাদশ ব্যক্তি নিহাদ উজ জামান।
তবে রনি যে উইকেটকিপিং করবেন, সেটি আগে থেকেই ঠিক করে রাখে সিলেট। টসের সময় একাদশ তালিকায় জাকের, জাকির ও মানজির নাম থাকলেও কিপিংয়ে উল্লেখ ছিল রনির নামই। সেই দায়িত্বে অনুমেয়ভাবেই ভালো করতে পারেননি অনিয়মিত এই কিপার।
ঢাকার ইনিংসে 'বাই' থেকে ৫ রান দেন ৩৪ বছর বয়সী ক্রিকেটার। সপ্তদশ ওভারে প্রথম বল তার হাতের নিচ দিয়ে চলে যায় সোজা সীমানায়। এর বাইরে পাঁচটি ওয়াইড ডেলিভারিও হাতে রাখতে পারেননি তিনি। সেখান থেকে আরও বাড়তি ৫ রান পেয়ে যায় ঢাকা।
তিনজন কিপার থাকার পরও অনিয়মিত কিপার থাকার কারণ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কাছে ব্যাখ্যা করলেন সিলেটের প্রধান কোচ একেএম মাহমুদ ইমন।
“আসলে কী বলব... শুরু থেকেই আমাদের সঙ্গে নেতিবাচক কিছু না কিছু হচ্ছেই। জাকের আলি অনিকেরই কিপিং করার কথা। কিন্তু পিঠে ব্যথা অনুভব করায় ওকে কিপিং থেকে দূরে থাকতে বলা হয়। পরে জাকির হাসানকে দিলাম। কুচকির টানে তাকেও শুধু ব্যাটিং করতে বলা হয়েছে।”
“আগের দুই ম্যাচে জর্জ মানজি কিপিং করেছে। সেও আঙুলে চোট পাওয়ায় বাধ্য হয়ে রনিকে দিতে হয়েছে। অনেকদিন পর কিপিং করেছে সে। আপনারাও দেখেছেন কিছু ভুল হয়েছে। নিয়মিত কিপিং করলে হয়তো এগুলো ঠেকাতে পারত। আরও কিছু কম রান যেত।”
জাকের ও জাকিরের চোট সমস্যায় প্রায় দশ বছরের স্বীকৃত টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে প্রথমবার ওই দুই ম্যাচে কিপিং করে মানজি।
এসব সমস্যা একপাশে রেখে মাঠের ক্রিকেটে বোলিংয়ের দিক থেকেও ঠিক ছন্দে নেই সিলেট।
পরপর দুই ম্যাচে ২০ বা তার বেশি রান অতিরিক্ত দিয়েছে সিলেট। ঢাকার বিপক্ষে ওয়াইড থেকে ১৬ রানসহ মোট ২৫ রান প্রতিপক্ষকে 'বোনাস' দিয়েছে তারা। বিপিএলে এক ইনিংসে এর চেয়ে বেশি অতিরিক্ত রানের ঘটনা আছে আর মাত্র একটি।
এত বেশি অতিরিক্ত খরচের পথে তাদের বোলিংও ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। বিপিএল অভিষেকে প্রথম ৩.৩ ওভারে মাত্র ১৫ রানে ২ উইকেট নেন টিপু। কিন্তু বাকি তিন বলও যে শেষ করতে হবে, তা যেন বেমালুম ভুলেই যান বাঁহাতি স্পিনার। হঠাৎ করেই লাইন-লেংথের দিশা হারিয়ে ফেলেন তিনি।
পেরেরাকে লেগ স্টাম্পের বাইরে বড় দুটি ওয়াইড করেন তিনি। লিটন স্ট্রাইকে যাওয়ার পরও লেগ স্টাম্পের বাইরে দেন বিশাল ওয়াইড। বিশেষজ্ঞ কিপারের পক্ষেও সেটি থামান হতো বেশ কঠিন।
স্পেলের শেষ তিন বল করতে চারটি ওয়াইড করেন টিপু। তিন বলে রান দেন ১১। পরের ওভারে সুমন খানের একটি ওয়াইডও ছিল বেশ বড়।
এবারের বিপিএলে এরকম বিশাল ওয়াইড, বেশ কয়েকবার পিচের বাইরে বল ফেলে ‘নো’ বল হওয়া, স্পিনার হয়েও অবিশ্বাস্য রকমের বড় ‘ফ্রন্ট ফুট নো বল’ হওয়ায়, এগুলো আলোচনা ও কৌতূহলের খোরাক জোগাচ্ছে প্রায়ই। আগের কোনো আসরে এসব এত বেশি সংখ্যক দেখা যায়নি।
সিলেটের এই ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে পরাজয়ের পেছনে মূল কারণ হিসেবে এত বেশি অতিরিক্ত রান দেওয়ার কথাই বলেন আফগান অলরাউন্ডার সামিউল্লাহ শিনওয়ারি।
“অবশ্যই হতাশ। ম্যাচ জেতার খুব খুব কাছে চলে গিয়েছিলাম। আমরা ভালো খেলেছি। খুব সম্ভবত আমরা ১৫-২০ রান অতিরিক্ত দিয়েছি। এটিই আসলে মূল কারণ।”
প্রধান কোচ মাহমুদের কণ্ঠেও একই সুর। তবে নিয়মিত এত অতিরিক্ত রান কেন হচ্ছে, সেই কারণ জানা নেই তারও।
“আজকেই ছেলেদের সঙ্গে অতিরিক্ত রান নিয়ে কথা বলেছি। স্লগ ওভারে বোলিং-ই করতে পারছি না। ওভার ৬ বলে শেষ হচ্ছে না। বাইরে তো কথাবার্তা সব ঠিকই থাকে। মাঠে কেন করতে পারছে না, বুঝতে পারছি না। অতিরিক্তগুলো বড় সমস্যা করে দিচ্ছে আমাদের।”
একদম শেষ মুহূর্তে আল-আমিনকে হারানোয় বড় ক্ষতি হওয়ার কথাও বলেন সিলেট কোচ।
“আমাদের দুর্ভাগ্য দেখেন, আজকে খেলা শুরুর অল্প কিছুক্ষণ আগে আল-আমিন ব্যথা পেল। আর খেলতেই পারল না। ওকে তো মূল বোলার হিসেবে নিয়েছিলাম। আল-আমিন থাকলে হয়তো ১৬০-১৭০ রানে আটকাতে পারতাম। তখন রান তাড়াও সহজ হতো।”
সিলেটের এলোমেলো বোলিংয়ের সাজা উপযুক্তভাবেই দেন পেরেরা ও লিটন। দুজনের ২৮ বলে ৮১ রানের জুটিতে অতিরিক্ত থেকে আসে ২০ রান। তবে সংবাদ সম্মেলনে সিলেটের বোলারদের পাশেই দাঁড়ান ঢাকা অধিনায়ক পেরেরা।
“বোলিংয়ের দিক থেকে আমরা সবসময় অতিরিক্ত না দেওয়ার কথা বলি। তবু আমরা প্রায়ই ১০ রান দিয়ে ফেলি। মাঝেমধ্যে এমন হয়ে যায়। আমরা রোবট নই। তাই ব্যর্থতা আসবেই। তবে হ্যাঁ, অতিরিক্ত রানের পরিমাণ কমাতে পারলে অবশ্যই দলের জন্য সুবিধা।”
সব মিলিয়ে আট ম্যাচে মাত্র দুই জয়ে এখন পয়েন্ট টেবিলে সবার নিচে সিলেট। কাগজে-কলমে প্লে-অফে খেলার সম্ভাবনা বেশ ভালোভাবে টিকে থাকলেও সার্বিক পারফরম্যান্সে খুব একটা আশার আলো নেই ২০২৩ সালের রানার্স-আপদের।