ইতিহাসের হাতছানিতে রোমাঞ্চিত নিগার সুলতানা

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথমবার দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলার সুযোগে উচ্ছ্বসিত বাংলাদেশ অধিনায়ক মাঠের পারফরম্যান্সেও সমান তালে লড়তে চান বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের সঙ্গে।

শাহাদাৎ আহমেদ সাহাদশাহাদাৎ আহমেদ সাহাদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Feb 2024, 01:58 PM
Updated : 24 Feb 2024, 01:58 PM

বিপিএল শুরুর দিকের ঘটনা। মিরপুরের একাডেমি মাঠে তখনও দলগুলোর ব্যস্ততা শুরু হয়নি। তার আগেই সেখানে দেখা গেল নিগার সুলতানাসহ নারী দলের কয়েকজন ক্রিকেটারকে অনুশীলন করতে। সেই থেকে একাডেমি মাঠের নিয়মিত চিত্র এটি। বিপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর অনুশীলনের ফাঁকে সুযোগমতো নিজেদের ঝালিয়ে নিচ্ছেন নিগাররা। 

জাতীয় দলের অনুশীলন বা ক্যাম্প নয়, নিগারদের এই অনুশীলন পর্ব নিজেদের তাগিদেই। সামনেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ বলে কথা। নিজেদের প্রস্তুত রাখতে হবে তো! নিগার তো এই সিরিজে শুনতে পাচ্ছেন ইতিহাসের ডাক।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যে কোনো সংস্করণে এবারই প্রথম দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। তিনটি করে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি খেলতে মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে বাংলাদেশে আসবেন অ্যালিসা হিলি, এলিস পেরি, অ্যাশলি গার্ডনার, বেথ মুনিরা। এই দুই সংস্করণেই তারা বর্তমানের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। 

ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে এখন পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিন ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। তিনটিই বিশ্বকাপের মঞ্চে।

আইসিসি উইমেন’স চ্যাম্পিয়নশিপে জায়গা করে নেওয়ার পর এখন নিয়মিতই ম্যাচ খেলার সুযোগ পাচ্ছে বাংলাদেশ। সিরিজ ও সফর বেড়েছে অনেক। তার পরও এই সিরিজটি বাড়তি দোলা দিচ্ছে নিগারের মনে। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে শনিবার সেই রোমাঞ্চের কথাই বললেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।

“বিষয়টা মজার হলেও সত্যি, আমরা এখন যা-ই করছি ইতিহাসের অংশ হয়ে যাচ্ছে (হাসি)৷ কারণ এগুলো আমরা কখনও করিনি।”

“আমি বলব, এটা পুরোপুরি আল্লাহর রহমত। আর বিসিবির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ যে তারা আমাকে ইতিহাসের অংশ হওয়ার সুযোগ দিয়েছে। আমাদের দলের জন্যও অনেক বড় অর্জন, বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দলের বিপক্ষে সিরিজ খেলা।”

তাই বলে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে স্রেফ খেলার সুযোগ পেয়েই বর্তে যেতে চান না নিগার। বরং মাঠে ভালো ক্রিকেট খেলে নিজেদের সামর্থ্যের ছাপ রাখার প্রত্যয় এই কিপার-ব্যাটারের কণ্ঠে।

“নিজেদের মেলে ধরার জন্য আমাদের অনেক বড় একটা সুযোগ এই সিরিজ৷ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ভালো করতে পারলে দল হিসেবে আমাদের সুনামও বেড়ে যাবে। সবকিছুই কিন্তু আমরা লাভবান বেশি হব, যদি আমরা ভালো ক্রিকেট খেলতে পারি।” 

২০২৩ সালের শেষ ছয় মাস দারুণ কেটেছে বাংলাদেশের। ঘরের মাঠে ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ ড্র করেছে তারা। পাকিস্তানের বিপক্ষে জিতেছে টি-টোয়েন্টি সিরিজ। ভারতকেও হারিয়েছে সিরিজের শেষ ম্যাচে। বছরের শেষ দিকে দক্ষিণ আফ্রিকা গিয়ে একটি করে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি জিতে ফিরেছে নিগার সুলতানার দল। 

এবারের চ্যালেঞ্জ আরও কঠিন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ভালো করতে তাই প্রস্তুতিতে খামতি রাখতে চান না বাংলাদেশ অধিনায়ক। 

“আমাদের প্রস্তুতির ওপর নির্ভর করবে অনেক কিছু। গত ছয় মাসে আমরা যেমন ক্রিকেট খেলেছি ভারত সিরিজে… পাকিস্তান সিরিজে… দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে গিয়েও ভালো ক্রিকেট খেলেছি। এখন পর্যন্ত দল ভালো অবস্থায় আছে৷ অনেক ব্যাটার আছে যারা ছন্দে আছে, রান করছে। বোলাররা ভালো পারফর্ম করছে।”

“অস্ট্রেলিয়াও তো আমাদের হিসেবের মধ্যে রাখছে। কারণ ঘরের মাঠে সবাই শক্তিশালী। তাই তারা আমাদের হালকাভাবে নেবে না। আমরাও চাই তারা আমাদের হালকাভাবে না নিক।”  

গত মাস থেকে ক্রিকেটারদের ব্যক্তিগত অনুশীলন তো চলছেই। এখন দলীয় অনুশীলনের প্রক্রিয়াও শুরু হতে চলেছে। শনিবার মিরপুরের ইনডোরে একসঙ্গে ফিটনেস ট্রেনিং করেছেন তারা ট্রেনারের তত্ত্বাবধানে। আগামী বুধবার একাডেমি মাঠে শুরু হওয়ার কথা ৪ দিনের স্পিন ক্যাম্প।  

পরে পূর্ণাঙ্গ ক্যাম্প করতে খুলনা যাবে দল। শেখ আবু নাসের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আগামী ৪ মার্চ শুরু হয়ে প্রস্তুতি চলার কথা ১৬ তারিখ পর্যন্ত। এরপর মিরপুরে ফিরে শুরু হবে সিরিজের আনুষ্ঠানিক তোরজোড়।

এখনও সূচি প্রকাশিত হয়নি ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজের। ওয়ানডে সিরিজের ম্যাচগুলো আইসিসি উইমেন'স চ্যাম্পিয়নশিপের অন্তর্ভুক্ত। এখন পর্যন্ত ১৫ ম্যাচে ১৩ পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান আট নম্বরে।

এই চক্রে স্বাগতিক ভারত ও পয়েন্ট টেবিলের প্রথম পাঁচ দল পাবে সরাসরি ২০২৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলার টিকেট। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজে তাই পয়েন্ট টেবিলে নিজেদের অবস্থান উন্নতির দিকে মনোযোগ দিতে চান নিগার।

“প্রত্যেকটা সিরিজ আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমরা ওয়ানডেতে আইসিসি উইমেন'স চ্যাম্পিয়নশিপ চক্রে আছি। এখানে পয়েন্ট পেলে আমাদের জন্য অনেক ভালো হবে। বাছাইপর্ব না খেলে সরাসরি বিশ্বকাপে যাওয়ার সম্ভাবনাও বাড়বে৷”

“আমাদের নজর এখন সেদিকেই। যেন আমরা আমাদের সামর্থ্য ও প্রতিভার ১১০ ভাগ দিয়ে তাদের বিপক্ষে ভালো ক্রিকেট খেলতে পারি। ভালো ক্রিকেট খেলতে পারলে নির্দিষ্ট দিনে ফলও পক্ষে আসতে পারে।”