৩৬ বছর বয়সে অবসর ভেঙে টেস্ট ক্রিকেটে ফেরার কথা বিবেচনা করছেন মইন আলি। যে সংস্করণ থেকে প্রায় দুই বছর ধরে দূরে আছেন তিনি, দলের প্রয়োজনে সেই সংস্করণে ফেরার কথা গুরুত্ব দিয়েই ভাবছেন ইংল্যান্ডের এই অলরাউন্ডার।
ক্রিকেট ওয়েবসাইট ইএসপিএনক্রিকইনফোকে মইন নিশ্চিত করেছেন, এবারের অ্যাশেজে খেলতে ইংল্যান্ডের টিম ম্যানেজমেন্ট অনুরোধ করেছে তাকে।
মূলত ইংল্যান্ডের প্রথম পছন্দের স্পিনার জ্যাক লিচ চোটের কারণে ছিটকে যাওয়াতেই আবার মইনকে ফেরানোর তাড়না অনুভব করেন ইংল্যান্ডের কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ও অধিনায়ক বেন স্টোকস।
মইন টেস্ট ক্রিকেট ছাড়ার পর এই নিয়ে দ্বিতীয় দফায় তাকে ফেরার অনুরোধ জানাল টিম ম্যানেজমেন্ট। গত বছর পাকিস্তান সফরের আগেও তাকে ফেরার প্রস্তাব দিয়েছিলেন কোচ ম্যাককালাম। তবে ইংল্যান্ডের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে ব্যস্ততা মিলিয়ে ঠাসা সূচির কারণে শেষ পর্যন্ত অনুরোধ রাখতে পারেননি মইন।
২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের বিপক্ষে ওভাল টেস্টের পর লাল বলের ক্রিকেটে আর কোনো ম্যাচ খেলেননি এই অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার। ইংল্যান্ডের হয়ে সাদা বলের ক্রিকেটে বেশি মনোযোগ দিতে ও বিশ্বজুড়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলতে টেস্ট থেকে অবসর নেন তিনি।
এরপর চেন্নাইয়ের হয়ে আইপিএলে প্রতি মৌসুমেই খেলেছেন মইন। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে খেলেছেন বিপিএলে। এই সময়ে কুমিল্লার হয়ে বিপিএলে দুটি শিরোপা জেতেন তিনি। চেন্নাইয়ের হয়ে জিতে নেন সবশেষ আইপিএলের শিরোপা। ইংল্যান্ডের গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শিরোপা জয়েও তার ছিল অবদান। নিজ দেশে টি-টোয়েন্টি ব্লাস্ট ও দা হান্ড্রেড তো খেলছেনই। উস্টারশায়ার থেকে আপন ঠিকানা ওয়ারউইকশায়ারে ফিরে তিনি বার্মিংহাম বিয়ার্সের নেতৃত্বও দিচ্ছেন এখন।
এবারের অ্যাশেজে বিশ্লেষক হিসেবে কাজ করার কথা তার। তবে নাটকীয়ভাবে এখন মাঠের লড়াইয়েও দেখা যেতে পারে।
মইনের ঘরের মাঠ এজবাস্টনে এবারের অ্যাশেজ শুরু আগামী ১৬ জুন থেকে। টেস্টের তৃতীয় দিনে ৩৬ বছর পূর্ণ হবে এই অলরাউন্ডারের।
অ্যাশেজের আগে লিচের চোট ইংল্যান্ডের জন্য এসেছে বড় ধাক্কা হয়ে। ম্যাককালাম-স্টোকসের জমানায় টেস্ট ক্রিকেটে ইংল্যান্ডের অপ্রতিরোধ্য পথচলায় ১৩ টেস্টের সবকটিতে খেলেছেন এই বাঁহাতি স্পিনার। এই সময়ে দলের সর্বোচ্চ ৪৫ উইকেট তার। বোলিং করেছেন ৫১৫ ওভারের বেশি। নিজ দলে তো বটেই, এই সময়ে গোটা বিশ্বেই এত ওভার বোলিং করেননি কেউ। পেসারদের ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বোলিং করাতে অন্য প্রান্ত থেকে লিচের টানা বোলিং করে যাওয়া এই দলের জন্য ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
সেই দায়িত্বেই এখন মইনকে আবার চায় দল। বাড়তি হিসেবে বড় পাওনা তো আছেই তার ব্যাটিং। ম্যাককালাম-স্টোকসের ইংল্যান্ড দলের আগ্রাসী ঘরানার সঙ্গে দারুণভাবে মানিয়ে যায় মইনের ধরন।
মইনের ফেরার সম্ভাবনায় রোমাঞ্চিত তার সতীর্থরাও। অভিজ্ঞ পেসার স্টুয়ার্ট ব্রড সোমবার স্কাই স্পোর্টসকে বললেন সেই কথাই।
“আমরা সবাই জানি যে মো (মইন) দুর্দান্ত একজন ক্রিকেটার। বাজ (ম্যাককালাম) ও স্টোকসের দর্শনের সঙ্গেও সে দারুণভাবে মানিয়ে যায়। জানি না এখন তাকে নির্বাচকরা আবার বিবেচনা করবেন কি না বা সে নিজেও লাল বলের ক্রিকেটে ফিরবে কি না। তবে সে অসাধারণ ক্রিকেটার।”
মইন শেষ পর্যন্ত না ফিরলে বিকল্প হতে পারেন আরেক স্পিনিং অলরাউন্ডার লিয়াম ডসন। তাকে লিচের উপযুক্ত বদলি মনে করছেন সাবেক অধিনায়ক অ্যালেস্টার কুক। তবে ইংল্যান্ডের হয়ে ১২ হাজারের বেশি রান করা সাবেক ওপেনারের মতে, স্টোকসের অনুরোধ উপেক্ষা করা কঠিন হবে মইনের জন্য।
“এই ভূমিকার জন্য আমি হয়তো ডসনকে বেছে নেব… তবে আমার মনে হয়, ইংল্যান্ড আরেকটু আগ্রাসী পথে হাঁটবে। তারা মইনকে ফেরানোর চেষ্টা করছে। মইনের জন্য এটা কঠিন হবে (অনুরোধ ফেরানো), কারণ সে স্টোকসকে হতাশ করতে চাইবে না। তার খুব ঘনিষ্ঠ সে। তবে মইনের জন্য কাজটা কঠিন। বিশেষ করে, অ্যাশেজের মতো লড়াই মানসিকভাবে অনেকটাই শুষে নেয়। লড়াইয়ে নিজেকে ঢেলে দিতে হয়।”
“গত কয়েক বছরে তার মনে হয়েছে যে, টেস্ট ক্রিকেটে তার সময় শেষ হয়ে গেছে। এখন ব্যাপার হলো, এই দুই বছর দূরে থেকে তার ভাবনা কিছুটা বদলেছে কি না। ফোনে অনুরোধ পেয়ে ‘হ্যাঁ’ বলে দেওয়া খুব সহজ। কিন্তু মানসিকভাবে, অমন চাপের মধ্যে সত্যিই খেলার তাড়না কি আছে? বড় প্রশ্ন।”
কুকের নেতৃত্বেই ২০১৪ সালে টেস্ট অভিষেক মইনের। তার অধিনায়কত্বে খেলেছেন ৩৭ টেস্ট। পরে জো রুটের নেতৃত্বে খেলেছেন ২৭টি। মোট ৬৪ টেস্টের ক্যারিয়ারে তার উইকেট ১৯৫টি, রান করেছেন ৫ সেঞ্চুরিতে ৩ হাজারের কাছাকাছি।
মইন শেষ পর্যন্ত রাজি না হলে ডসন ছাড়াও বিবেচনায় থাকবেন উইল জ্যাকস, ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি যিনি অফ স্পিনও করেন। এছাড়াও জোর বিবেচনায় থাকবেন তরুণ লেগ স্পিনিং অলরাউন্ডার রেহান আহমেদ। এমনকি ব্যাটিংয়ের সঙ্গে লেগ স্পিন মিলিয়ে লিয়াম লিভিংস্টোনকেও রাখা হতে পারে।