পাকিস্তানের অধিনায়কত্ব থেকে আবারও পদত্যাগ করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হলে সবকিছু খোলাসা করেই দায়িত্ব ছাড়বেন বাবর আজম।
Published : 17 Jun 2024, 08:02 AM
এই তো, মাত্রই কিছুদিন আগে সাদরে আমন্ত্রণ জানিয়ে বেশ আয়োজন করে পাকিস্তানের নেতৃত্বে ফেরানো হয় বাবর আজমকে। সেই হাওয়া পাল্টে যেতে সময় লাগেনি। আড়াই মাস পরই তিনি এখন আছেন তোপের মুখে। তাকে সরানোর তোড়জোড় কিংবা আলোচনা চলছে। বাবর অবশ্য সিদ্ধান্তটি বোর্ডের ওপরই ছেড়ে দিয়েছেন। তবে একটি বার্তাও তিনি দিয়ে রেখেছেন, এবারও পদত্যাগ করতে হলে সবকিছু খোলাসা করেই ঘোষণা দেবেন তিনি।
পদত্যাগের অভিজ্ঞতা এক দফায় হয়ে গেছে বাবরের। ওয়ানডে বিশ্বকাপে পাকিস্তানের ব্যর্থতার পর প্রবল সমালোচনার মুখে অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেন তিনি। তখন তাকে নেতৃত্ব ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছিল বা সেরকম পরিস্থিতির তৈরি করা হয়েছিল বলে খবর প্রকাশিত হয়েছিল পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমে। পরে টেস্ট দলের নেতৃত্ব দেওয়া হয় শান মাসুদকে, টি-টোয়েন্টি দলের দায়িত্ব পান শাহিন শাহ আফ্রিদি। ওয়ানডেতে কোনো খেলা ছিল না বলে অধিনায়ক তখন ঘোষণা করা হয়নি।
তবে আফ্রিদির নেতৃত্বের অধ্যায় শেষ হয় স্রেফ এক সিরিজেই। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডে (পিসিবি) পালাবদলের পর গত ৩১ মার্চ আবার অধিনায়ক করা হয় বাবরকে। এবার তিনি দায়িত্ব পান সীমিত ওভারের দুই সংস্করণে। কিন্তু এই অধ্যায়ও এখন দোলাচলে পড়ে গেছে।
তার নতুন দফার দায়িত্বে দ্বিতীয় সারির নিউ জিল্যান্ড দলের সঙ্গে সিরিজ ড্র করেছে পাকিস্তান, আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জিতলেও হেরে গেছে একটি ম্যাচে, বিশ্বকাপের ঠিক আগে সিরিজ হেরেছে ইংল্যান্ডের কাছে। এরপর বিশ্বকাপের ভরাডুবি। প্রথম দুই ম্যাচেই যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের কাছে হেরে বসে তারা। এরপর কানাডার সঙ্গে জিতলেও ছিটকে পড়তে হয় গ্রুপ পর্ব থেকেই। এমনকি শেষ ম্যাচেও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ১০৭ রান তাড়ায় অনেক কষ্টে জিততে পারে তারা।
ম্যাচ শেষে বাবরের সংবাদ সম্মেলনে প্রথম প্রশ্নটিই হলো নেতৃত্ব নিয়ে। পিসিবি তো তাকে সরিয়ে দিতেই পারে, তিনি নিজেও কি সরে যাওয়ার কথা ভাবছেন? বাবর সিদ্ধান্তটি ছেড়ে দিলেন বোর্ডের ওপরই।
“যখন নেতৃত্ব ছেড়ে দিয়েছিলাম (গত বছর), আমার মনে হয়েছিল, এখন আমার এটা করা উচিত নয়। এজন্যই তা ছেড়ে দিয়েছিলাম এবং নিজেই ঘোষণা করেছিলাম। এরপর যখন আমাকে তা ফিরিয়ে দেওয়া হলো, সেটি ছিল পিসিবির সিদ্ধান্ত।”
“এখানে যা হলো, তা নিয়ে দেশে ফেরার পর আমরা আলোচনা করব। নেতৃত্ব যদি ছাড়তেই হয়, প্রকাশ্যেই তা ঘোষণা করব। কোনো কিছুর আড়ালে লুকাব না। যা হবে, প্রকাশ্যেই হবে। তবে এই মুহূর্তে কিছু ভাবিনি এখনও। সিদ্ধান্ত যা হবে, তা পিসিবির ব্যাপার।”
নেতৃত্বের প্রসঙ্গ তবু চলতেই থাকল। অধিনায়ক হিসেবে এই হারের দায় তিনি নিচ্ছেন কি না কিংবা বোর্ড তাকে নেতৃত্ব ছেড়ে দেওয়ার চাপ দেওয়া হলে তিনি কী করবেন, এটা জানতে চাওয়া হলো। বাবর বললেন, দায় শুধু তার একার বা কোনো একজনের নয়।
“আমি তো বলেছিই, একজনের কারণে আমরা হারিনি। আমরা জিতি দল হিসেবে, হারিও দল হিসেবেই। আপনি আমার দিকে আঙুল তুলছেন আমি অধিনায়ক বলে, কিন্তু আমি তো প্রতিটি ক্রিকেটারের জায়গায় খেলতে পারব না। ১১ জন ক্রিকেটার মাঠে নামে, সবারই আলাদা ভূমিকা আছে। এজন্যই তারা এখানে বিশ্বকাপ খেলতে এসেছে।”
“আমার মনে হয়, আমরা দল হিসেবে খেলতে পারিনি। পরিকল্পনা অনুসরণ করতে পারিনি, খেলা শেষ করতে পারিনি। থিতু হয়ে এটা আমাদের মেনে নিতে হবে যে, আমরা দল হিসেবে ভালো খেলিনি।”
একইরকম প্রসঙ্গ আরও একবার উঠল, এই ব্যর্থতার দায় তাহলে কার, অধিনায়ক, কোচ নাকি নির্বাচকদের? বাবরের উত্তর থাকল আগের মতোই।
“একজনকে দায় দেওয়া যাবে না। দল হিসেবে আমরা ভালো খেলিনি। কিছু কিছু সময় আমরা ভালো খেলেছি, কিন্তু তা ধরে রাখতে পারিনি। সবাই এতে হতাশ। সমর্থকদের মতো আমরাও ভীষণ হতাশ। কোনো একজনের দোষ নেই এখানে।”
নিজেদের ব্যর্থতা মেনে নিতে অবশ্য আপত্তি নেই বাবরের। তবে আবারও বললেন, এটি গোটা দলের সামগ্রিক ব্যর্থতা।
“আমরা মেনে নিচ্ছি যে, প্রত্যাশা পূরণ করতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। যে ধরনের দল ছিল আমাদের, যতটা অভিজ্ঞতা ছিল, আমরা সেভাবে পারফর্ম করতে পারিনি। দলের একজন ক্রিকেটার ও অধিনায়ক হিসেবে কোনো একজনের দিকে আঙুল তুলব না আমি। ব্যর্থতার দায় ১৫ জনের সবারই।”
“আমরা এটা নিয়ে বসব ও আলোচনা করব (দেশে ফিরে)। অধিনায়ক হিসেবে আমার দায়িত্ব হলো, সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের কাছে মতামত জানানো।”