দেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে গণটিকাদান শুরু

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে ছয় দিনে ৩২ লাখ মানুষকে টিকা দিতে গণটিকাদান কর্মসূচি চলছে দেশজুড়ে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 August 2021, 05:03 AM
Updated : 7 August 2021, 07:20 AM

সকাল ৯টায় ১৫ হাজারের বেশি কেন্দ্রে টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। সকাল থেকেই কর্মসূচিতে সাড়া দিয়ে টিকাদান কেন্দ্রগুলোতে সাধারণ মানুষের ভিড় দেখা গেছে।

বিকাল ৩টা পর্যন্ত ক্যাম্পেইন চললেও মানুষের অনেক আগ্রহ থাকায় নির্ধারিত সময়ের টিকাদানের লক্ষ্য পূরণ হয়ে যাবে, বলছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।

গণটিকাদান কার্যক্রমের প্রথম দিন শনিবার শেরেবাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একাডেমিতে টিকা দেওয়া হচ্ছে। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

কোভিড-১৯ টিকা বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব ডা. শামসুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গ্রামে-গঞ্জে প্রচুর মানুষ টিকা নিতে এসেছে। আমরা মনে করি, এই গণটিকাদান কর্মসূচি মানুষের মধ্যে একটা উৎসাহ-উদ্দীপনার তৈরি করবে।”

দেশজুড়ে শুরু হওয়া এই কর্মসূচি সিটি কর্পোরেশন এলাকায় চলবে ৯ অগাস্ট পর্যন্ত। এছাড়া প্রথমদিন বাদ পড়া ইউনিয়ন ও পৌরসভা পর্যায়ের ওয়ার্ডে টিকা দেওয়া হবে ৮ ও ৯ অগাস্ট।

৮ ও ৯ অগাস্ট টিকা দেওয়া হবে দুর্গম ও প্রত্যন্ত এলাকায়। আর ১০ থেকে ১২ অগাস্ট ৫৫ বছরের বেশি বয়সী ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে টিকা কর্মসূচি চলবে।

গণটিকাদান কার্যক্রমের প্রথম দিন শনিবার শেরেবাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একাডেমিতে টিকা দেওয়া হচ্ছে। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

ডা. শামসুল হক বলেন, “আজকে আমরা টিকা কর্মসূচি শুরু করলাম। যদি কোনো এলাকায় আজকে শুরু করা না যায়, তাহলে আমরা সেখানে কালকে করব। মানুষকে বাদ দেওয়া হবে না। ছয়দিনব্যাপী এই কর্মসূচি সারাদেশের আনাচে-কানাচে আমরা ছড়িয়ে দেব।”

২৫ বছরের নিচে দেওয়া হচ্ছে না

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দেখা যায় শেরেবাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একাডেমির সামনের রাস্তায় জমে থাকা পানির একপাশ দিয়ে হেঁটে সারিবদ্ধ মানুষ জড়ো হয়েছেন টিকা নিতে।

ফটকে দাঁড়িয়ে থাকা এক তরুণ সবাইকে বলছিলেন, ‘আজ ভরে গেছে কাল আসেন, ২৫ বছরের নীচে হলে ১৪ তারিখের পর’।

গণটিকাদান কার্যক্রমের প্রথম দিন শনিবার শেরেবাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একাডেমিতে টিকা দেওয়া হচ্ছে। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

একাডেমির ভেতরে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, এই কেন্দ্রে একদিনে সাড়ে ৩০০ মানুষকে টিকা দেওয়া হবে। প্রথম দিন সকালেই সেই সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে।

টিকার বুথ থেকে লাইনগুলো একেবেঁকে ভবনের বাইরে পর্যন্ত চলে এসেছে। নারীদের লাইনের শেষের দিকে দাঁড়িয়েছেন ফিরোজা বেগম। বাসাবাড়িতে কাজ করেন তিনি।

ফিরোজা বলেন, পশ্চিম আগারগাঁও এলাকায় তার বাসা। নিবন্ধন করতে পারেননি বলে এতদিন টিকা দেওয়া হয়নি। সকালে কাজে গিয়ে টিকা দেওয়ার কথা শুনে জাতীয় পরিচয়পত্র হাতে করে চলে এসেছেন। ঘণ্টাখানেক লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে তখনও ভবনের ভেতরে ঢুকতে পারেননি।

গণটিকাদান কার্যক্রমের প্রথম দিন শনিবার শেরেবাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একাডেমিতে টিকা দেওয়া হচ্ছে। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

লাইনে দাঁড়ানো খায়রুন নাহার এসেছেন পুত্রবধূকে সঙ্গে নিয়ে। কিন্তু পুত্রবধূর বয়স ২৫ বছরের কম হওয়ায় তাঁকে লাইনে দাঁড়াতে দেওয়া হয়নি।

২৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফোরকান হোসেন কর্মীদের নিয়ে কেন্দ্রেই ছিলেন। শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশের একটি দলও মাইক হাতে শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করে।

স্থানীয় যুবলীগ ও তরুণদের দল টিকা বুথের সামনে মানুষের তথ্য সংগ্রহ করে কার্ড লিখে দেন। সেই কার্ড নিয়ে আবার তাঁদের লাইনে দাঁড়াতে হয়।

মহামারীতে আক্রান্ত ও মৃত্যু ঠেকাতে ১৪ কোটি নাগরিককে বিনামূল্যে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।

গত ৭ ফেব্রুয়ারি গণটিকাদান শুরু হলেও ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে কেনা টিকা সময়মতো না পাওয়ায় তার গতি ব্যাহত হয়।

ভারত থেকে টিকা না আসায় চীন থেকে টিকা কিনছে সরকার। পাশাপাশি টিকা সরবরাহের বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্ম কোভ্যাক্স থেকেও টিকা আসতে শুরু করেছে।

বাংলাদেশে অ্যাস্ট্রাজেনেকা, মডার্না, ফাইজার ও সিনোফার্মের টিকা দেওয়া হচ্ছে।

গণটিকা কার্যক্রম শুরুর দিন শনিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের একটি কেন্দ্রে সকাল থেকেই লাইনে দাঁড়িয়ে মানুষ। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

সরকারের কেনা, উপহার পাওয়া এবং কোভ্যাক্সের মাধ্যমে পাওয়া টিকা মিলিয়ে এ পর্যন্ত দেশে এসেছে দুই কোটি ৫৬ লাখ ৪৩ হাজার ৯২০ ডোজ টিকা।

তবে নতুন করে টিকা আসতে থাকায় বড় পরিসরে ভ্যাকসিন ক্যাম্পেইন করে বিরাট জনগোষ্ঠীকে নিয়ে আসতেই পরীক্ষামূলক ধাপ হিসেবে এবার টিকা দেওয়া হচ্ছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এর আগে ৭ অগাস্ট থেকে সাত দিনে প্রায় এক কোটি মানুষকে টিকা দেওয়ার লক্ষের কথা জানিয়েছিলেন।

শেষ মুহূর্তে তা অনেকটা কমিয়ে শুক্রবার প্রায় ৩২ লাখ মানুষকে প্রথম ডোজ টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ বি এম খুরশীদ আলম।

এই কর্মসূচিতে পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়স্ক, নারী ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এবং দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগোষ্ঠীকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।

গণটিকা কার্যক্রম শুরুর দিন শনিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের একটি কেন্দ্রে সকাল থেকেই লাইনে দাঁড়িয়ে মানুষ। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

এখন পর্যন্ত দেশে এক কোটির বেশি মানুষকে টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে। ৪৪ লাখের বেশি মানুষ টিকার দুটি ডোজই নিতে পেরেছেন।

সরকারের টিকাদান টাস্কফোর্স বলছে, বাংলাদেশে ৪০ শতাংশ নাগরিককে টিকা দিতে ১৩ কোটি ১৮ লাখ ডোজ টিকা লাগবে। আর ৬০ শতাংশকে টিকা দিতে লাগবে প্রায় ২০ কোটি ডোজ টিকা।

বাংলাদেশ এখন যে হারে টিকা দিচ্ছে, তাতে এই বছর নাগাদ ১৯ দশমিক ৬৪ শতাংশকে টিকা দেওয়া সম্ভব হবে বলে টাস্ক ফোর্সের অনুমান।