ছয় দিনে ৩২ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্য

করোনাভাইরাসের ডেল্টা ধরনের ব্যাপক বিস্তার নিয়ন্ত্রণে আনতে শনিবার থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে শুরু হতে যাওয়া গণটিকাদান কর্মসূচির মাধ্যমে ছয় দিনে ৩২ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 August 2021, 07:58 AM
Updated : 7 August 2021, 03:52 PM

শুক্রবার ঢাকার মহাখালীতে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনসের সভাকক্ষে টিকা কার্যক্রম নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম এই পরিকল্পনার বিস্তারিত তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, “করোনাভাইরাস প্রতিরোধে টিকাদানের পরিসর বাড়াতে যাচ্ছে সরকার। এর অংশ হিসেবে আগামী ৭ থেকে ১২ অগাস্ট ছয় দিনে সারা দেশের ১৫ হাজারের বেশি টিকাদান কেন্দ্রে প্রায় ৩২ লাখ মানুষকে প্রথম ডোজ টিকা দেওয়া হবে।” 

ফাইল ছবি

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এর আগে ৭ অগাস্ট থেকে সাত দিনে প্রায় এক কোটি মানুষকে টিকা দেওয়ার লক্ষের কথা বললেও শেষ মুহূর্তে তা কিছুটা কমিয়ে আনা হল।

এর আগে ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী সবাইকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনার কথা বলা হলেও ছয় দিনের কর্মসূচিতে তা হচ্ছে না বলে জানালেন খুরশীদ আলম।

এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “১৮ বছর বয়সীদের অনেকের ভোটার আইডি কার্ড নেই। এতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। তাই টিকাদানের বয়স ১৮ না করে ২৫ নির্ধারণ করা হয়েছে।”

তবে ওই বয়সসীমার ওপরে যারা আগেই সুরক্ষা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন, তাদের নিবন্ধনের সময় উল্লেখ করা কেন্দ্রে গিয়েই এসএমএস পাওয়ার ভিত্তিতে টিকা নিতে হবে।

আর ইউনিয়ন, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন এলাকায় ছয় দিনের বিশেষ ‘ক্যাম্পেইনের’ টিকাদান আলাদাভাবে পরিচালিত হবে। পঁচিশোর্ধ্ব যারা নিবন্ধন করতে পারেননি, তারাও এসময় টিকা নিতে পারবেন বলে জানিয়েছেন জানালেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।

তিনি বলেন, “পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়স্ক জনগোষ্ঠী, নারী ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এবং দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগোষ্ঠী এক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন।”

যেভাবে ৬ দিনের টিকাদান

# ৭ অগাস্ট: দেশের সব ইউনিয়ন, পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনে টিকা কার্যক্রম শুরু হবে

# ৮ ও ৯ অগাস্ট: ইউনিয়নের যেসব ওয়ার্ডে ৭ তারিখ নিয়মিত টিকাদান চালু ছিল, সেসব ওয়ার্ডে এবং পৌরসভার বাদ পড়া ওয়ার্ডে টিকা দেওয়া হবে    

# ৭ থেকে ৯ অগাস্ট: সিটি করপোরেশন এলাকায় ভ্যাকসিনেশন চলবে 

# ৮ ও ৯ অগাস্ট: দুর্গম ও প্রত্যন্ত এলাকায় টিকাদান হবে

# ১০ থেকে ১২ অগাস্ট: ৫৫ বছরের বেশি বয়সী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মাঝে টিকাদান কার্যক্রম চলবে।

# সারা দেশে ৪৬০০টি ইউনিয়ন, ১০৫৪টি পৌরসভা, সিটি করপোশেন এলাকার ৪৩৩টি ওয়ার্ডে চলবে এই বিশেষ টিকাদান কর্মসূচি

# ১৫ হাজারের বেশি টিকাদান কেন্দ্রে ৩২ হাজার ৭০৬ জন টিকাদানকারী এবং ৪৮ হাজার ৪৫৯ জন স্বেচ্ছাসেবী এই কর্মসূচিতে যুক্ত থাকবেন

মহাপরিচালক জানান, ৭ থেকে ১২ অগাস্টের মধ্যে প্রতি জেলায় এক দিন করে এই কর্মসূচি চলবে।

দেশে টিকার ঘাটতি থাকলেও সবাইকেই টিকা দিতে সরকার ‘বদ্ধপরিকর’ জানিয়ে তিনি বলেন, “কোভ্যাক্স এবং বিভিন্ন ভ্যাকসিন উৎপাদনকারীদের সঙ্গে কথা হয়েছে। দেশেও ভ্যকসিন উৎপাদনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।”

‘নেতিবাচক চিন্তা ও কুসংস্কার’ পরিহার করে টিকা নিয়ে সবাইকে কোভিড প্রতিরোধে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান ডা. এবিএম খুরশীদ আলম।

করোনাভাইরাস মহামারীতে আক্রান্ত ও মৃত্যু ঠেকাতে সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের বাংলাদেশে সরকার ৮০ শতাংশ অর্থাৎ ১৪ কোটি নাগরিককে বিনামূল্যে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে।

এরপর গত ৭ ফেব্রুয়ারি গণটিকাদান শুরু হলেও ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে কেনা টিকা সময়মতো না পাওয়ায় তার গতি ব্যাহত হয়।

ফাইল ছবি

সেই সঙ্কট সামলে গত দশ দিনে দেশে ৩০ লাখ ডোজ কোভিড টিকা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা যদি বড় আকারে ভ্যাকসিন ক্যাম্পেইন না করতে পারি, তাহলে বিরাট জনগোষ্ঠীকে কাভার করা যাবে না। এটা আমাদের কাছে একটি পাইলট প্রজেক্ট। এ থেকে আমরা শিক্ষা গ্রহণ করছি।”

এখন পর্যন্ত দেশে ১ কোটি ৯৯ হাজারের বেশি মানুষকে টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক  নাসিমা সুলতানা, এমআইএস পরিচালক অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান, ইপিআই কর্মসূচির ব্যবস্থাপক ডা. মওলা বক্স চৌধুরী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

উন্নয়নশীল বিশ্বে টিকাদান পর্যবেক্ষণে আইএমএফ, বিশ্ব ব্যাংক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত টাস্ক ফোর্সের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, কোভিড-১৯ টিকাদানে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কা থেকে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ।

ভারত থেকে টিকা না আসায় চীন থেকে টিকা কিনছে সরকার। পাশাপাশি টিকা সরবরাহের বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্ম কোভ্যাক্স থেকেও টিকা আসতে শুরু করেছে।

বাংলাদেশে অ্যাস্ট্রাজেনেকা, মডার্না, ফাইজার ও সিনোফার্মের টিকা দেওয়া হচ্ছে। প্রত্যেকটিরই দুটি ডোজ নিতে হয়।

সরকারের কেনা, উপহার পাওয়া এবং কোভ্যাক্সের মাধ্যমে পাওয়া টিকা মিলিয়ে এ পর্যন্ত দেশে এসেছে ২ কোটি ৫৬ লাখ ৪৩ হাজার ৯২০ ডোজ টিকা।

টিকাদান টাস্কফোর্স বলছে, বাংলাদেশে ৪০ শতাংশ নাগরিককে টিকা দিতে ১৩ কোটি ১৮ লাখ ডোজ টিকা লাগবে। আর ৬০ শতাংশকে টিকা দিতে লাগবে প্রায় ২০ কোটি ডোজ টিকা।

বাংলাদেশ এখন যে হারে টিকা দিচ্ছে, তাতে এই বছর নাগাদ ১৯ দশমিক ৬৪ শতাংশকে টিকা দেওয়া সম্ভব হবে বলে টাস্ক ফোর্সের অনুমান।