কোভিডে এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু, রেকর্ড শনাক্ত

ঈদের আগে লকডাউনের বিরতি দেওয়ায় ঝুঁকির কথা বলেছিলেন বিশেষজ্ঞরা, তা ভয়ঙ্করভাবে সত্যি করে একই দিনে পুরনো সব রেকর্ড ভেঙে দিল শনাক্ত কোভিড রোগী আর মৃত্যুর সংখ্যা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 July 2021, 11:53 AM
Updated : 26 July 2021, 01:13 PM

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, সোমবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে রেকর্ড ৫১ হাজার নমুন পরীক্ষা করে ১৫ হাজার ১৯২ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। আর আক্রান্তদের মধ্যে আরও ২৪৭ জনের প্রাণ গেছে এ ভাইরাসের কারণে।

গতবছর মার্চে দেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরুর পর এক দিনে এরচেয়ে বেশি রোগী আর কখনও শনাক্ত হয়নি, এত মৃত্যুও আর কখনও দেখতে হয়নি বাংলাদেশের মানুষকে।

নতুন আক্রান্তদের নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৮২৭ জনে। আর আক্রান্তদের মধ্যে মোট ১৯ হাজার ৫২১ জনের মৃত্যু হয়েছে।

সরকারি হিসেবে এক দিনে সেরে উঠেছেন ১১ হাজার ৫২ জন। তাদের নিয়ে এই পর্যন্ত সুস্থ হলেন ১০ লাখ ৯ হাজার ৯৭৫ জন। অর্থাৎ, এখনও সারা দেশে সক্রিয় সংক্রমণ রয়েছে দেড় লাখের বেশি মানুষের দেহে।  

কেরোনাভাইরাসের দাপটে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা গত ২৭ জুন থেকেই একশর উপরে থাকছিল প্রতিদিন। ৭ জুলাই তা প্রথমবারের মত ২০০ ছাড়িয়ে যায়। সর্বশেষ ১৯ জুলাই ২৩১ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, এতদিন সেটাই ছিল রেকর্ড।  

শনাক্ত ও মৃত্যু হু হু করে বাড়তে থাকায় গত ১ জুলাই থেকে সারা দেশে লকডাউনের কঠোর বিধিনিষেধ জারি করা হয়। তবে তাতে সংক্রমণের বিস্তারে তেমন কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যায়নি।

বিধিনিষেধের মধ্যেই  ৬ জুলাই প্রথমবারের মত দৈনিক শনাক্ত রোগী ১০ হাজার ছাড়ায়। তারপর ১২ জুলাই ১৩ হাজার ৭৬৮ জন নতুন রোগী শনাক্তের খবর দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এটাই ছিল এতদিন সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড।

এমন পরিস্থিতিতেই কোরবানির ঈদ সামনে রেখে ১৫ জুলাই থেকে লকডাউন শিথিল করে বলা হয়, ঈদের ছুটির পর আবার কঠোর বিধিনিষেধ শুরু হবে। অফিস-আদালত, হাট-বাজার, যানবাহন- সবই চলেছে এই নয় দিনে, গাদগাদি করে মানুষ গ্রামে গেছে প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ করতে।

কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ তখন বলেছিলেন, দেশে যখন করোনাভাইরাসের রোগী শনাক্ত ও মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি, তখন সব বিধি-নিষেধ তুলে নেওয়ায় সংক্রমণের বাড়ার ঝুঁকি তৈরি হল।

ঈদের ছুটির মধ্যে দৈনিক নমুনা পরীক্ষা কমে যাওয়ায় প্রতিদিন শনাক্ত রোগীর সংখ্যাও কমে গিয়েছিল। নমুনা পরীক্ষা বাড়ায় রোববার শনাক্ত কোভিড রোগীর সংখ্যা ফের ১১ হাজার ছাড়িয়ে যায়; সেই সঙ্গে মৃত্যু হয় সোয়া দুইশ মানুষের।

তার পরদিনই রেকর্ড নমুনা পরীক্ষার সঙ্গে রেকর্ড শনাক্ত আর এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ মৃত্যুর খবর এল।

গত এক দিনে শুধু ঢাকা বিভাগেই ৭ হাজার ৯৫৩ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছে যা দিনের মোট আক্রান্তের অর্ধেকের বেশি।

আর এই সময়ে যে ২৪৭ জন মারা গেছেন, তাদের ৭২ জনই ছিলেন ঢাকা বিভাগের। চট্টগ্রাম বিভাগে ৬১ জন এবং খুলনা বিভাগে ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।

বিশ্বে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ইতোমধ্যে ৪১ লাখ ৬২ হাজার ছাড়িয়েছে। আর শনাক্ত হয়েছে ১৯ কোটি ৪২ লাখের বেশি রোগী।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত এক দিনে সারা দেশে মোট ৫০ হাজার ৯৫২টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৭৫ লাখ ৬ হাজার ২৩৩টি নমুনা।

নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় দৈনিক শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ২৯ দশমিক ৮২ শতাংশে, যা আগেরদিন ৩০ দশমিক ০৪ শতাংশ ছিল।

 

গত এক দিনে ঢাকা জেলায় দেশের সর্বোচ্চ ৬ হাজার ৪০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া ঢাকা বিভাগের ফরিদপুরে ১১৭ জন, গাজীপুরে ২৫৭ জন, গোপালগঞ্জে ১৩২ জন, কিশোরগঞ্জে ১৭৫ জন, মানিকগঞ্জে ১৬৯ জন, নারায়ণগঞ্জে ১৮১ জন, নরসিংদীতে ২৪০ জন, রাজবাড়ীতে ১৭৫ জন, শরীয়তপুরে ১৩১ জন এবং টাঙ্গাইল জেলায় ২১৩ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে।

চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ৮৪৮ জন, কক্সবাজারে ১৭৭ জন, নোয়াখালীতে ১৪৫ জন, চাঁদপুরে ১৫৮ জন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১৫৬ জন এবং কুমিল্লায় ৭০১ জন আক্রান্ত হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়।

রাজশাহী বিভাগের মধ্যে রাজশাহী জেলায় ২৬৭ জন, নাটোরে ১৪১ জন, পাবনায় ২০২ জন এবং বগুড়ায় ১৭০ জন নতুন রোগী পাওয়া গেছে গত একদিনে।

খুলনা বিভাগের মধ্যে চুয়াডাঙ্গায় ১১০ জন, যশোরে ১৬৮ জন, খুলনায় ২৫৩ জন, কুষ্টিয়ায় ২২৩ জন এবং সাতক্ষীরায় ১১২ জন করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়েছেন গত ২৪ ঘণ্টায়।

অন্য বিভাগগুলোর মধ্যে ময়মনসিংহে ৩৭০ জন, শেরপুরে ১১৬ জন, বরিশালে ৩৮২ জন, পটুয়াখালীতে ১০৭ জন, ভোলায় ১৩৭ জন, সিলেটে ২৪৯ জন, সুনামগঞ্জে ১০৭ জন, হবিগঞ্জে ১৪৬ জন, রংপুরে ১৫৫ জন এবং দিনাজপুরে ১০৩ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়।

ঢাকা বিভাগে গত এক দিনে যে ৭২ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের ৩৬ জনই ছিলেন ঢাকা জেলার। চট্টগ্রাম বিভাগে মারা যাওয়া ৬১ জন জনের মধ্যে ২৭ জুন কুমিল্লার এবং খুলনা বিভাগে মারা যাওয়া ৪৬ জনের মধ্যে ১২ জন কুষ্টিয়া জেলার বাসিন্দা  ছিলেন।

এছাড়া রাজশাহী বিভাগে ২১ জন, বরিশাল বিভাগে ১২ জন, সিলেট বিভাগে ১৪ জন, রংপুর বিভাগে ১৬ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৫ জনের মৃত্যু ঘটেছে গত এক দিনে।

মৃত ২৪৭ জনের মধ্যে ১৩৭ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি। এছাড়া ৫৯ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ৩০ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ১৬ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, ৩ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে এবং ২ জনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ছিল।

তাদের মধ্যে ১৪১ জন ছিলেন পুরুষ, ১০৬ জন ছিলেন নারী। ১৬৫ জন সরকারি হাসপাতালে, ৫৫ জন বেসরকারি হাসপাতালে এবং ২৬ জন বাসায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ১ জনকে হাসপাতালে মৃত অবস্থায় নিয়ে আসা হয়েছিল বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে।