“খাবারের মান না বাড়ালে, দাম না কমালে কাসুন্দিতে আমরা খাব না,” ফেইসবুকে লিখেছেন আন্দোলনকারীদের একজন।
Published : 27 Jan 2023, 08:27 PM
‘মানহীন’ খাবার অতিরিক্ত দামে পরিবেশনের অভিযোগ তুলে ঢাকার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিন ‘কাসুন্দি’ বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা।
ওই ক্যান্টিনে বুধবার বেঞ্চ-টেবিলের ব্যারিকেড দিয়ে কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার পর ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সরব হয়েছেন সোশাল মিডিয়ায়। এরপর থেকে বন্ধ আছে ক্যান্টিনটি।
নর্থ সাউথের তিন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেকদিন ধরেই খাবারের মান নিয়ে ক্যান্টিন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের অসন্তোষ চলে আসছিল। চুক্তি নবায়নের সময় মান উন্নয়নের ব্যাপারে কথাও দিয়েছিল কাসুন্দি কর্তৃপক্ষ। তবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই জানুয়ারিতে দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে ক্যান্টিন বর্জন করে শিক্ষার্থীরা বাসা থেকে খাবার এনে খাচ্ছেন। অনেকেই বিভিন্ন অনলাইন ফুড ডেলিভারি অ্যাপে অর্ডার করে খাবার সংগ্রহ করছেন।
বিবিএ প্রোগ্রামের এক শিক্ষার্থী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "ওই ক্যান্টিন অনেক বাজে খাবার বিক্রি করে। দেখা যায় চুল থাকে, পোকা থাকে, গন্ধ হয়। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কিছুই করছিল না। এসব ব্যাপারে তারা বারবার বলেছে, ‘আমরা বদলে ফেলব’। কিন্তু কিছুই হয়নি।
“এসব নিয়ে শিক্ষার্থীরা যখন বলেছে- এসব খাবার আমরা খাব না। ছাত্রদের সাথে ঝামেলা হয়েছে। তখন কাসুন্দি কর্তৃপক্ষ বলেছে, 'আমরা নিজেরাই তিন দিন বন্ধ থাকব, তোমরা এমনি সোজা হয়ে যাবা'। এটা শুনে শিক্ষার্থীরা আরও ক্ষুব্ধ হয়েছে এবং কাসুন্দিকে বয়কট করেছে।"
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই শিক্ষার্থী বলেন, "মাঝখানে তারা দাম অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। ৪০ টাকার জিনিস ৬০ টাকা। আবার অনেক নতুন জিনিস তারা এনেছে। সেখানে দেখা যায় ১২০-১৫০ টাকা নিচ্ছে। একটা ক্যান্টিনের খাবারের তো এতো দাম হতে পারে না।"
জানতে চাইলে নর্থ সাউথের কাসুন্দি ক্যান্টিনের সুপারভাইজার সাইফুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে টেলিফোনে বলেন, “এটা নর্থ সাউথের অভ্যন্তরীণ বিষয় তো। কর্তৃপক্ষের সাথে এ বিষয়ে আমাদের কথা চলছে। রোববার শিক্ষার্থী ও কর্তৃপক্ষের সাথে আমাদের সভা আছে, আশা করছি সব ঠিক হয়ে যাবে।”
আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী শাদমান তাকী ফেইসবুকে লিখেছেন, “আমরা ক্যাফেটেরিয়ায় খাবারের অন্যায্য মূল্যের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছি। আমাদের প্রাক্তন ছাত্ররাও আমাদের সাথে আছেন। কাসুন্দির খাবারের মান না বাড়ালে, দাম না কমালে আমরা খাব না। ন্যায্য মূল্য নির্ধারণের জন্য লড়াই চালিয়ে যেতে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।"
এ বিষয়ে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আতিকুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটি আমার পর্যন্ত এখনও এসে পৌঁছায়নি। আমাদের প্রজেক্ট ডিরেক্টর এটি দেখছেন। যা শুনেছি, ক্যান্টিন কর্তৃপক্ষ তিন চার বছর ধরেই দাম বাড়াতে চাচ্ছে, কিন্তু ছাত্ররা চাচ্ছে না দাম বাড়ুক। কোনোকিছু দাম বাড়ুক কেউই চায় না। তবে ক্যান্টিনের লোকেরা বলছে, ‘সবকিছুর দাম বেড়েছে, আমাদেরও বাড়াতে হবে’। এখানে দুই পক্ষেরই কিছু যুক্তি আছে।
"আমি এসব ব্যাপারে কখনও মাথা ঘামাই না। আমি মাস্টার মানুষ, পড়ানো-রিসার্চ আমার কাজ। এসব ব্যবসায়িক দিক আমাদের বোর্ড দেখত। বর্তমান বোর্ড এসব ব্যাপারে ইন্টারেস্ট কম দেখাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত দাম কী হবে- তা বোর্ড দেখবে। বিষয়টা একটু অনিশ্চয়তার মধ্যেই আছে।“
তবে তার আশা দ্রুতই সব ঠিক হয়ে যাবে। তিনি বলেন, “ক্যান্টিন যদি তিন-চারদিনও বন্ধ থাকে- এটা তো শিক্ষার্থীদের জন্য অসুবিধার।”