ঢাবিতে সব ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থানের দাবি সাদা দলের

ছাত্রলীগ হলগুলোতে ছায়া প্রশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একধরনের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে বলে অভিযোগ করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Oct 2022, 06:46 PM
Updated : 2 Oct 2022, 06:46 PM

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলকে ঢুকতে বাধা এবং তাদের উপর হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে ক্যাম্পাসে সব ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থানের দাবি জানিয়েছে বিএনপি-জামায়াত সমর্থক শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল।

রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান বলেন, “আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, গত এক যুগের বেশি সময় ধরে ক্যাম্পাসকে সরকার সমর্থক ছাত্র সংগঠনের একক আধিপত্যের লালনভূমিতে পরিণত করা হয়েছে। শুধু রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, সাধারণ শিক্ষার্থীরাও আজ প্রতিনিয়ত তাদের নির্মম নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।

“গেস্টরুম নামক এক অপসংস্কৃতির মাধ্যমে আবাসিক হলগুলোতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নির্যাতন-নিপীড়ন করা হচ্ছে। তারা বারবার ‘গেস্টরুম’ নামক ‘মিনি টর্চার সেল’ বন্ধের দাবি জানালেও এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা দেখা যায়নি।

“বিশ্ববিদ্যালয়-হল প্রশাসনের নির্বিকার ভূমিকার সুযোগে ছাত্রলীগ হল ও ক্যাম্পাসকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভয়ারণ্যে পরিণত করে ফেলেছে। হলগুলোতে তারা ছায়া প্রশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একধরনের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে।”

গত মঙ্গলবার ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নতুন কমিটি উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করতে ক্যাম্পাসে ঢুকতে গিয়ে ছাত্রলীগের বেধড়ক মারধরের শিকার হন। তবে ছাত্রলীগ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, এটা ছাত্রদলের ‘অভ্যন্তরীণ কোন্দলের’ ফল।

হামলার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ব্যর্থতাকে দায়ী করে অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, “ছাত্রদলের ক্যাম্পাসে আগমন প্রতিহত করার ঘোষণা আগেই দিয়েছিল ছাত্রলীগ। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ছাত্রদলের সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত সৌজন্য সাক্ষাৎ বাতিল করেননি উপাচার্য।

“বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি তার দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে। তাদের এই ব্যর্থতার কারণে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ছাত্রলীগের হামলার শিকার হয়ে রক্তাক্ত হয়েছেন। তারা এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।”

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তরফে ছাত্রদল নেতাদের হাসপাতালে দেখতে না যাওয়ার নিন্দা জানিয়ে সাদা দলের আহ্বায়ক লুৎফর বলেন, “দুঃখজনক হলেও সত্য যে আজ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তি আহত ছাত্রদল নেতাকর্মীদের দেখতে হাসপাতালে যাননি

“এমন পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উত্থাপনের সুযোগ রয়েছে যে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ওপর ন্যক্কারজনক এই হামলার পরিকল্পনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কি প্রচ্ছন্ন সায় বা মদদ ছিল? যদি তা নাই হবে, তবে কেন পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচিতে আসা ছাত্রদল নেতাকর্মীদের নিরাপদে উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়টি নিশ্চিত করতে প্রক্টরিয়াল বডি নিষ্ক্রিয় ছিল?”

ইডেন কলেজের সাম্প্রতিক অস্থিরতা নিয়ে লুৎফর রহমান বলেন, “ছাত্রলীগ বাংলাদেশের নারী শিক্ষার এই ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীদের জীবনকে কীভাবে দুঃসহ করে তুলেছে, প্রতিষ্ঠানটির মানমর্যাদাকে কীভাবে ভূলুণ্ঠিত করেছে, সেখানকার ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে তা জাতির সামনে প্রকাশিত হয়েছে।

“আমরা শিক্ষক হিসেবে এ ঘটনায় লজ্জিত ও মর্মাহত। এ ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে দ্রুত শাস্তির আওতায় আনতে হবে। শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা ইডেন কলেজ নয়, সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর চিত্রও কম-বেশি একই রকম।”

সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সাবেক আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান খান, সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. মো. মহিউদ্দিন, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আবুল কালাম সরকার উপস্থিত ছিলেন।