ঢাবির সাংবাদিকতা বিভাগের হীরকজয়ন্তী উৎসব

অনুষ্ঠানে আবেদ খান বলেন, সাংবাদিক হওয়ার বদলে সবাই এখন কর্মচারী, সম্পাদকের বদলে সিইও হয়ে যাচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Sept 2022, 01:06 PM
Updated : 28 Sept 2022, 01:06 PM

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের হীরকজয়ন্তী উৎসব পালিত হয়েছে।

বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে তা উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান।

অনুষ্ঠানে সাংবাদিক-কলামনিস্ট আবেদ খান বলেন, “এখন সাংবাদিক হওয়ার বদলে সবাই কর্মচারী হয়ে যাচ্ছে, সেখানে সম্পাদক থাকছে না, থাকছে সিইও। সিইও যখন থাকে তখন কর্পোরেট কালচার আধিপত্য করে।”

বাংলাদেশে সাংবাদিকতার ক্ষেত্র বাড়লেও নিজেদের ব্যক্তি চেতনার পরিবর্তে অন্ধ অনুকরণ দেখা যায় বলেও মনে করছেন এই সম্পাদক।

তিনি বলেন, সাংবাদিকতার ক্ষেত্র অনেক বাড়ছে। কিন্তু কোথাও যেন একটা অন্ধকার জায়গায় পৌঁছে গেছে। সাংবাদিকতায় আমরা যে ডেডিকেশন, বিশ্বাস, স্বার্থত্যাগ দেখেছি, এই জায়গাটা ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে।

“সাংবাদিকতা হচ্ছে বহতা নদীর মতো। নতুন নতুন জিনিস নিয়ে আসা, নতুন নতুন স্বপ্ন তৈরি করতে হয়। এখানে যদি চিন্তাভাবনার স্ফুরণ না ঘটে, মুক্তভাবে কাজ করা না যায়, সাংবাদিকতার বিকাশ ঘটবে না। সাংবাদিককে মুখ খুলে দিতে হবে এবং মুক্তভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে।”

অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান দক্ষ ও যুগোপযোগী গ্র্যাজুয়েট তৈরিতে একাডেমিয়া-ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্ক জোরদারের উপর গুরুত্বারোপ করেন।

তিনি বলেন, একাডেমিয়া-ইন্ডাস্ট্রি সমন্বয় এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের একটি উপায়। গ্র্যাজুয়েটদের কর্মদক্ষতা ও গুণগত মান বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ইন্ডাস্ট্রির পরামর্শ ও সুপারিশ গ্রহণ করা উচিত।

সমাজ ও জাতির চাহিদা পূরণে কার্যকর ভূমিকা পালনের জন্য তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটদের প্রতি আহ্বান জানান।

সাংবাদিকতা শিক্ষাসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক শিক্ষা ও গবেষণার উন্নয়নে দেশের গণমাধ্যম সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে বলে আশা প্রকাশ করেন উপাচার্য।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক আবুল মনসুর আহাম্মদের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সহযোগী অধ্যাপক শবনম আযীম। এতে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক জিয়া রহমান বক্তব্য দেন।

একাডেমি ও ইন্ডাস্ট্রি বিষয়ক গোলটেবিল

উদ্বোধনী শেষে অনুষ্ঠান শেষে ‘ইন্টারেকশন অ্যান্ড ইন্টারডিপেন্ডেন্স বিটুইন একাডেমিয়া অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’ শীর্ষক গোলটেবিল আলেচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়।

এতে সাংবাদিক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, “মিডিয়ার উপর জনগণের বিশ্বাস কমে গেছে। জনগণ যে কন্টেন্ট জানতে চাচ্ছে, সেগুলো পাচ্ছে না। বড় ধরনের ব্যর্থতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের সাংবাদিকতা।”

সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, “সাংবাদিকতা করতে সাংবাদিকতা বিভাগের পড়ার প্রয়োজন হচ্ছে না। সাংবাদিকতা ডিপার্টমেন্টের ছাত্ররা কি শুধু মিডিয়ায় চাকরি করবে বা এরকম ছেলে-মেয়ে তৈরি করবে? বাংলাদেশে মিডিয়া নিয়ে তো পণ্ডিত নাই। মিডিয়া নিয়ে গবেষণা করে না কেউ। এ ধরনের গবেষক তৈরি করা সাংবাদিকতা বিভাগের কাজ হওয়া উচিৎ।

“আমরা রয়টারস ইনস্টিটিউট থেকে যে গবেষণা পাই, বাংলাদেশে তো এরকম গবেষণা নাই। বাংলাদেশের মিডিয়া আত্মহত্যার দিকে যাচ্ছে, তারপরও তারা গবেষণা করে না।”

সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সাংবাদিতা বিভাগের সিলেবাস পরিবর্তনের আহ্বানও জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনেট সদস্য বুলবুল।

বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌসের সঞ্চালনায় গোলটেবিলে অন্যদের মধ্যে শিক্ষক অধ্যাপক নাদির জুনাইদ, সাবেক শিক্ষক ও আজকের পত্রিকার সম্পাদক গোলাম রহমান, আমাদের নতুন সময়ের সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান, লেখক আনিসুল হক, ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, দৈনিক ইত্তেফাক সম্পাদক তাসমিমা হোসেন, নাট্যব্যক্তিত্ব পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, সাংবাদিক ও কলামনিস্ট স্বদেশ রায়, সাংবাদিক ও প্রশিক্ষক কুররাতুল আইন তাহমিনা, অভিনেত্রী ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ত্রপা মজুমদার, সাংবাদিক মুন্নী সাহা, সুমনা শারমিন অংশ নেন।