শিক্ষার্থী ‘হয়রানি’: ঢাবির জিয়া হলের প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগ দাবি

শুক্রবার বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ থেকে এ দাবি জানানো হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 August 2022, 03:52 PM
Updated : 19 August 2022, 03:52 PM

ছাত্রলীগ নেতাদের ‘কথা মত’ শিক্ষার্থীকে থানায় দিয়ে ‘হয়রানি’ করার অভিযোগ তুলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়াউর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেনের পদত্যাগ দাবি করেছে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ।

শুক্রবার বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ থেকে এ দাবি জানানো হয়।

একইসঙ্গে ছাত্রলীগের হামলার তদন্ত করে দোষীদের বিচারের আওতায় আনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান সংগঠনের নেতারা।

সহপাঠীদের মেসেঞ্জার গ্রুপে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মেফতাহুল মারুফের এক বক্তব্যকে ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ আখ্যা দিয়ে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে তাকে প্রক্টরিয়াল টিমের মাধ্যমে শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করেন প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক বিল্লাল। ভুক্তভোগীর দাবি, হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাসিবুল হোসেন শান্তর কথায় তাকে থানায় দেওয়া হয়েছে।

পরে অভিযোগের কোনো ‘প্রমাণ না পাওয়ায়’ শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে ওই শিক্ষার্থীর মুচলেকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।

মারুফকে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়ার পর তাকে ‘হয়রানির’ প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেন বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা। মিছিলে কবি জসীমউদদীন হল শাখা ছাত্রলীগের একদল কর্মী হামলা চালালে ছাত্র অধিকারের তিন নেতাকর্মী আহত হয় বলে অভিযোগ করেন পরিষদের নেতারা।

পরে মারুফকে ‘হয়রানি’ এবং ছাত্রলীগের ‘হামলার’ প্রতিবাদে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমাবেশে পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থী তাদের নিজস্ব মত স্বাধীনভাবে প্রকাশ করার অধিকার রয়েছে। কিন্তু তার পরও কেন মত প্রকাশ করার কারণে থানায় পাঠানো হল? তাহলে হল প্রাধ্যক্ষের কাজ কী?

“স্বাধীন মত প্রকাশ করার অধিকার কেউ করুণা করে দেয়নি। স্বাধীন মত প্রকাশ করার অধিকার এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ছিনিয়ে এনেছে। যারা আজকে ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের উপর হাত দিয়েছেন, আপনাদের হাত পুড়ে যাবে। বুয়েটের আবরারকে যারা হত্যা করেছে তারা কেউ রেহাই পায়নি, আপনারাও রেহাই পাবেন না।”

ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা তারিকুল ইসলামের সঞ্চালনায় বিক্ষোভ মিছিল পূর্ব সমাবেশে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম আদিব, পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আখতার হোসেন, নাট্য ও বিতর্ক সম্পাদক নুসরাত তাবাসসুম বক্তব্য দেন।

অভিযোগের বিষয়ে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মেসেঞ্জার গ্রুপে সে যা লিখেছে, আমাদের কাছে তা রাষ্ট্রবিরোধী মনে হয়েছে। তাছাড়া জঙ্গি সংগঠনের দুটি পেইজে সে লাইক দিয়েছে। আমাদের পক্ষ যতটুকু সম্ভব আমরা যাচাই করেছি।

“বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ তৈরি হওয়ায় তাকে পুলিশে দেওয়া হয়, যাতে অধিকতর তদন্ত করে সত্যটা উদঘাটন করা যায়।”

ছাত্র ফ্রন্ট ও ছাত্র কাউন্সিলের প্রতিবাদ

এদিকে শিক্ষার্থীকে থানায় সোপর্দ করে ‘হয়রানির' দায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেনের বিরুদ্ধে 'প্রশাসনিক ব্যবস্থা' নেওয়ায় দাবি জানিয়েছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ও গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল।

শুক্রবার সন্ধ্যায় বামপন্থি এ দুই সংগঠন পৃথক বিবৃতিতে এ দাবি জানায়।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি রাজীব কান্তি রায় ও সাধারণ সম্পাদক সুহাইল আহমেদকে উদ্ধৃত করে বিবৃতিতে বলা হয়, “শিক্ষার্থীর রাজনৈতিক পরিচয় অনুসন্ধান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাজ নয়। বরং শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও তার পরিপূরক গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করাই প্রশাসনের কাজ। ভিন্ন দল মত ধারণ করার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে ক্ষমতাসীন ছাত্র নির্যাতনের ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার।

“আবাসন সংকটকে জিম্মি করে শিক্ষার্থীদের জোরপূর্বক দলীয় কর্মসূচিতে নেওয়া ও গেস্টরুম নির্যাতনের কোনো ঘটনারই কোনো বিচার হয় না। অথচ ক্ষমতাসীন দলের সমালোচনা করায় হল প্রাধ্যক্ষ কর্তৃক শিক্ষার্থীকে পুলিশে সোপার্দের ঘটনা প্রশাসদের মেরুদণ্ডহীন দলদাস চেহারার উন্মোচন ঘটিয়েছে।”

বিবৃতিতে জিয়া হলের প্রাধ্যক্ষ মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানোর পাশাপাশি হল-ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক সহাবস্থান ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়।

গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের বিবৃতিতে বলা হয়, “বিশ্ববিদ্যালয় অবাধ জ্ঞান চর্চা ও মুক্তচিন্তার আধার, ভিন্নমতের প্রতি সহনশীল মানুষ তৈরি করা বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব। অথচ সামান্য একটা সমালোচনাকে কেন্দ্র করে প্রভোস্ট আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও হলের নিরাপত্তা নিয়ে তার উদ্যোগ নেই৷

“বিশ্ববিদ্যালয়ের হল আজ কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে পরিণত হয়েছে৷ রাজনৈতিক বিষয়ে স্বাধীন মতামত প্রকাশের অধিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থীর আছে৷ তার যৌক্তিক প্রতুত্তরও হতে পারে। কিন্তু এটাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থী নির্যাতন হলের ভয়াবহ পরিস্থিতির ইঙ্গিত করে৷"

বিবৃতিতে বলা হয়, “যে প্রভোস্ট তার শিক্ষার্থীকে শুধুমাত্র মত প্রকাশের দায়ে পুলিশে সোপর্দ করতে পারে, তার ওই দায়িত্বশীল চেয়ারে বসার নৈতিক অধিকার অবশিষ্ট থাকে বলে আমরা মনে করি না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের কাজ শিক্ষার্থীকে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চায় উদ্বুদ্ধ করা, সেখানে শিক্ষকদের নির্বিকার অবস্থান তাদের নৈতিক মূল্যবোধকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।“