প্রযুক্তির এই যুগে মার্ক্স আরও বেশি প্রাসঙ্গিক: অধ্যাপক শোভনলাল

“যারা মার্ক্সের তত্ত্বের ঘোরতর বিরোধিতা করেন, তারাও সমাজ বিকাশের ইতিহাস ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মার্ক্সের গুরুত্ব অস্বীকার করতে পারবেন না।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 May 2023, 03:57 PM
Updated : 5 May 2023, 03:57 PM

প্রযুক্তিকেন্দ্রিক বর্তমান যুগে জার্মান দার্শনিক কার্ল মার্ক্সের প্রাসঙ্গিকতা ‘উপেক্ষা করার সুযোগ নেই’ বলে মনে করেন ভারতের মার্ক্সবাদী সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক শোভনলাল দত্তগুপ্ত। 

তিনি বলেছেন, “অনেকে প্রশ্ন করেন, বর্তমান প্রযুক্তিকেন্দ্রিক যুগের সঙ্গে মার্ক্সের পরিচয় ছিল না। আমরা বলতে চাই, প্রযুক্তির এই যুগে মার্ক্স আরও বেশি প্রাসঙ্গিক। আজকের এই বৈশ্বিক সংকট ও মানব সভ্যতার বিপর্যয়ের সময় মার্ক্স আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছেন।” 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচার থিয়েটার ভবনের সিরাজুল ইসলাম অডিটোরিয়ামে শুক্রবার বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তব্য দিচ্ছিলেন শোভনলাল। 

কার্ল মার্ক্সের ২০৫তম জন্মজয়ন্তী এবং বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দিনব্যাপী এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। 

‘মার্ক্স ভাবনা- আজ ও আগামীকাল’ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নিয়ে অধ্যাপক শোভনলাল বলেন, “মার্ক্সের প্রাসঙ্গিকতা উপেক্ষা করার কোনো জায়গা নেই। যারা মার্ক্সের তত্ত্বের ঘোরতর বিরোধিতা করেন, তারাও সমাজ বিকাশের ইতিহাস ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মার্ক্সের গুরুত্ব অস্বীকার করতে পারবেন না। 

“এক কথায় মার্ক্সকে ব্যাখ্যা করা যাবে না। তার সমাজ বিকাশের ইতিহাস ব্যাখ্যা করার পদ্ধতি অবলম্বন করে মার্ক্সবাদ ব্যাখ্যা করতে হবে। গোটা পৃথিবীর শোষিত মানুষের ইতিহাস, শোষণের কারণ তিনি আলোচনা করে গেছেন।” 

অধ্যাপক শোভনলাল বলেন, “এই যুগটাকে আমরা বৈদ্যুতিক যুগ বলছি, কম্পিউটার ও গুগল শাসিত, সোশাল মিডিয়া নিয়ন্ত্রিত অত্যাধুনিক প্রযুক্তিকেন্দ্রিক এ বিশ্ব, যেখানে সময় ও স্থানের ভাবনা ঘুচে গেছে। আমরা একটা ভার্চুয়াল রিয়েলিটির যুগে ঢুকে যাচ্ছি।

“বলা হয়, এই বিশ্বের সঙ্গে মার্ক্সের পরিচয় ছিল না। বর্তমান বিশ্বকে একচেটিয়াভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে কতগুলো বহুজাতিক সংস্থা। তবে শ্রম ও শোষণের ধারণা কিন্তু পাল্টে যায়নি। নতুন প্রযুক্তির জন্ম হয়েছে পুঁজিবাদী বিশ্বে, কিন্তু মার্ক্স যেটাকে উৎপাদিকা শক্তি বলেছেন, উৎপাদিকা শক্তি বিকাশেরেই একটা রূপ হচ্ছে আমরা এখন যা দেখছি।” 

শোভনলালের মতে, এর ভালো-মন্দ দুটো দিকই আছে, তার তফাৎ করতে পারতে হবে। মার্ক্স বেঁচে থাকলে সেটা পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার করতেন। 

এর আগে সকালে প্রথম অধিবেশনে ‘বাংলায় মার্ক্স’ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নিয়ে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির নেতা ভানুদেব দত্ত বলেন, “মার্ক্সের মতবাদ, যেটা মার্ক্স-এঙ্গেলসের কাছ থেকে আমরা পেয়েছি, ওই সময়ই কেন ভারতবর্ষ ওই মতবাদ পায়নি? কেন দেরি হল? এর বড় কারণ হল মার্ক্সবাদের জন্ম হয়েছিল একটি সামাজিক-অর্থনৈতিক পটভূমিতে। আর সে সময়ে ভারতের সামাজিক-অর্থনৈতিক পটভূমি ছিল একেবারে ভিন্ন। 

“সেই সময় ইউরোপে পুঁজিবাদ অনেক বিকশিত হয়েছিল, আর আমাদের এখানে পুঁজিবাদের কেবল সূচনা হয়েছিল। সেজন্য ১৮৪৮ এর দিকে ইউরোপে মার্ক্সবাদ যেভাবে প্রসারিত হয়েছে, আমাদের এখানে তা হয়নি। আমরা সেটা পেয়েছি অনেক পরে৷” 

অন্যদের মধ্যে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) তাত্ত্বিক শান্তনু দে, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বর্তমান সভাপতি শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অধ্যাপক এম এম আকাশ এবং প্রেসিডয়াম সদস্য ও তত্ত্ব শিক্ষা, গবেষণা বিভাগের শাহীন রহমান আলোচনায় অংশ নেন।