কর্মস্থলের বাইরে থাকা নিয়ে যা বললেন ঢাবি উপাচার্য

কাউকে দায়িত্ব ‘না দিয়ে’ তিন দিন কর্মস্থলের বাইরে থাকা নিয়ে শিক্ষকদের একটি অংশের আলোচনার মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেছেন, ডিজিটাল যুগে এটা কোনো সমস্যা নয়।

রাসেল সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 March 2022, 01:43 PM
Updated : 30 March 2022, 01:43 PM

বুধবার এ বিষয়ে প্রশ্নের উত্তরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি টেলিফোনে বলেন, “আমাদের অনেকগুলো উইং আছে, যার যার দায়িত্ব সে সে করে। বাড়িতে থেকেও অনেক কাজ আমরা করে নিতে পারি। ডিজিটাল যুগে আমরা কিন্তু এখন ২৪ ঘণ্টাই ডিউটিতে থাকি।”

অধ্যাপক আখতারুজ্জামান গত ২৮ মার্চ সকালে তার গ্রামের বাড়ি বরগুনার পাথরঘাটায় যান। তিনি ছুটি নিয়েছেন কি না, নিয়ে থাকলে কাউকে উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করতে দিয়ে গেছেন কি না, এই প্রশ্নগুলো উঠলে শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়। 

বুধবার উপাচার্যের কার্যালয়ে গেলে সেখানকার কর্মকর্তারা জানান, তিনি ঢাকার বাইরে আছেন, বৃহস্পতিবার ফিরবেন। পরে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকারও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে একই কথা বলেন।

এ ধরনের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম ব্যাখ্যা করে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ বলেন, “একাধিক কার্যদিবস কর্মস্থলের বাইরে থাকলে শিক্ষামন্ত্রণালয়ের সচিব এবং আচার্যের সচিব বরাবর চিঠি ইস্যু করে ছুটি নিতে হয়।

“যতদিন ছুটিতে থাকবেন ততদিন চিঠিতে উল্লেখ করতে হয়। উপাচার্যের অনুপস্থিতিতে তার রুটিন দায়িত্ব পালনে একজনের নাম চিঠিতে প্রস্তাব করতে হয়। সাধারণত উপ-উপাচার্য দুজনের মধ্যে যিনি সিনিয়র তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।”

সচিব বরাবর চিঠির পাঠানোর পরবর্তী ধাপগুলোর বিষয়ে সামাদ বলেন, “প্রস্তাব অনুযায়ী একজনকে রুটিন দায়িত্ব দিয়ে তার কাছে চিঠি পাঠানো হয় এবং সেখানে ‍উল্লেখ করা হয় কতদিন এই দায়িত্ব পালন করতে হবে।

“ওই চিঠির বিষয়টা পুরো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেও জানিয়ে দিতে হয়। আমার কাছে এরকম কোনো চিঠি আসেনি।”

উপ-উপাচার্য সামাদ বলেন “উপাচার্যের অনুপস্থিতিতে আমাকে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য মনে করে অনেকে কাজের জন্য আমার কাছে আসছে। কিন্তু আমাকে কোনো দায়িত্ব দিয়ে যাওয়া হয়নি।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক এএসএম মাকসুদ কামাল বলেন, উপাচার্যের ছুটির কোনো বিষয় তার জানা নেই।

“আমাকেও কোনো দায়িত্ব দিয়ে যাওয়া হয়নি। কয়দিনের জন্য গিয়েছেন, এটাও আমি জানি না।”

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান টেলিফোনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দেশের বাইরে গেলে একজনকে রুটিন দায়িত্ব দিয়ে যেতে হয়। সেটা মহামান্য রাষ্ট্রপতির অনুমোদন নিয়েই যেতে হয়।

“দেশের ভেতরে হলে কাউকে দায়িত্ব দেওয়া লাগে না। কাজ করে নেওয়া যায়।… কারো কোনো কাজ থাকলে যোগাযোগ করতে পারে।”

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলছেন, এক কার্য দিবসের বেশি সময় কর্মস্থলের বাইরে থাকলে অন্য কাউকে উপাচার্যের রুটিন দায়িত্ব দিয়ে যাওয়াই ‘নিয়ম’।

“এটা স্বাভাবিক, ছুটিতে গেলে একজনকে দায়িত্ব দিয়ে যেতে হয়। বিদেশে যেতে হলে তো রাষ্ট্রপতির অনুমোদন নিয়েই যেতে হয়। সরকারি প্রজ্ঞাপন ছাড়া বিদেশে যাওয়াই যায় না।

“যখন ভিসি অফিসিয়াল কাজে ঢাকা থেকে দেশের অন্য শহরে যান, তখন তা লাগে না। যদি সকালে গিয়ে বিকালে চলে আসে তথন কাউকে দায়িত্ব না দিলেও চলে। কারণ তখন তো কার্যদিবসের মধ্যেই ফিরে আসতেছেন।

“কিন্তু যদি এক কার্য দিবসে ফিরে না আসেন, কিংবা দুইদিন, তিন দিন বা চার-পাঁচ দিন ঢাকার বাইরে বা কর্মস্থলের বাইরে থাকলে, তো একজনকে রুটিন দায়িত্ব দিয়ে যাওয়াটাই সমীচীন।”

সেক্ষেত্রে উপ-উপাচার্যই এই দায়িত্বে থাকেন জানিয়ে আরেফিন সিদ্দিক বলেন, “এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য তার দায়িত্ববোধ থেকেই দিয়ে যান।”

সাবেক উপাচার্য একে আজাদ চৌধুরীও একই মত দিয়েছেন। তিনি বলেন, “সাধারণত  একজনকে দায়িত্ব দিয়ে যাওয়াটা শ্রেয়। ভাইস চ্যান্সেলর ছুটিতে থাকলে পদাধিকার বলে প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর  রুটিন দায়িত্ব পাবেন।”

বুধবার বিকালেই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হবেন বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানিয়েছেন উপাচার্য আখতারুজ্জামান।