ওই আট শিক্ষকের শাস্তির দাবি তুলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট কমিটি নিজেদের ‘নৈতিক দেউলিয়াপনা ও ভিন্নমতের প্রতি অশ্রদ্ধার’ প্রকাশ ঘটিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন তারা।
শনিবার সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে এই অভিমত দিয়েছেন তারা। বিবৃতিদাতাদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নেহাল করিম, আকমল হোসেন, কাবেরী গায়েন, রোবায়েত ফেরদৌস, জাহাঙ্গীরনগরের অধ্যাপক আনু মুহাম্মাদ, মানস চৌধুরী, যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আলী রিয়াজ ও সান ফ্রান্সিসকো স্টেট ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক মাহমুদ হোসেইনও রয়েছেন।
২৮ বছর পর গত ১১ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসু ও হল সংসদের নির্বাচন হয়। নির্বাচনের দিনই অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ তুলে ছাত্রলীগ ছাড়া সব প্যানেল ভোট বর্জনের ঘোষণা দেয়।
এই নির্বাচনে কোনো পর্যবেক্ষক না রাখা হলেও স্ব-উদ্যোগে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের আটজন শিক্ষক। ভোট শেষে পর্যবেক্ষণে বিভিন্ন ‘অনিয়ম’ তুলে ধরে নতুন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরামর্শ দিয়েছিলেন তারা।
ওই আট শিক্ষক হলেন- গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ফাহমিদুল হক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান, অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুশাদ ফরিদী, উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম, ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাহমিনা খানম ও অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক অতনু রব্বানী।
ডাকসু নির্বাচনে ভোটগ্রহণ নিয়ে এই আটজন শিক্ষক বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন অভিযোগ করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে উপাচার্যের কাছে দাবি জানিয়েছেন হল প্রাধ্যক্ষরা। যদিও নির্বাচনে অনিয়মের মূল অভিযোগ ভোটগ্রহণের দায়িত্বে থাকা এসব প্রাধ্যক্ষের বিরুদ্ধেই।
প্রাধ্যক্ষদের এই অবস্থানের কঠোর সমালোচনা করেছেন বিবৃতিদাতা শিক্ষকরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা স্বাক্ষরিত ওই বিবৃতিতে বলা হয়, নির্বাচনের দিন ছাত্রদের হলে বুথ ‘জ্যামিং’ করে, ভোটকেন্দ্রের বাইরে নানাভাবে ভয়-ভীতি দেখিয়ে অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের ভোট দেওয়া থেকে বিরত রাখার প্রচেষ্টা যে জারি ছিল, তার প্রমাণ গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসেছে।
“নির্বাচনের পরদিন থেকে অনশনে বসা ছয়-সাতজন শিক্ষার্থীর অনশন ভাঙাতে গিয়ে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন যে, নির্বাচনটি সর্বাঙ্গীণ সুষ্ঠু হয়নি।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যের সাথে তুলনা করলে এসব অনিয়ম ও অনিয়মের চেষ্টা প্রায় শতবর্ষী এ বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা ‘ভূলুণ্ঠিত করেছে’ বলে মন্তব্য করা হয় বিবৃতিতে।
বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলে সিলসহ ব্যালট উদ্ধারের ঘটনা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় দাবি করে বিবৃতিতে বলা হয়, “এটা স্পষ্টতই শিক্ষার্থী-শিক্ষক সম্পর্কের বিশ্বাসযোগ্যতার মূল বাঁধনটিকে ছিঁড়ে ফেলেছে।”
বিবৃতিতে বলা হয়, “১৯৭৩ এর অধ্যাদেশের বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোনো শিক্ষকের প্রক্টোরিয়াল ক্ষমতা আছে এবং তা তিনি প্রয়োগ করার অধিকার রাখেন। কাজেই আট শিক্ষকের পর্যবেক্ষণের অধিকার আছে এবং জনগণকে তা জানাবার অধিকারও আছে। এছাড়া চিফ রিটার্নিং অফিসারের কাছ থেকে তারা পর্যবেক্ষণের মৌখিক অনুমতিও পেয়েছিলেন। এক্ষেত্রে তারা অননুমোদিত কোনো কাজ করেননি।
“দ্বিতীয়ত, যারা ভোট চুরি করল এবং চুরি করতে সাহায্য করল তারা বিশ্ববিদ্যলয়ের ও শিক্ষকদের ভাবমূর্তির যে ক্ষতি করলেন, তা পঞ্চাশ বছর পরেও জাতি মনে রাখবে। কাজেই আট শিক্ষক পর্যবেক্ষণ করে ভাবমূর্তি নষ্ট করেননি, ভাবমূর্তি আগেই নষ্ট হয়েছিল। অনিয়মের কথা গণমাধ্যমে জানিয়ে তারা বরং ক্ষতিপূরণে প্রশাসনের পক্ষেই কাজ করেছিলেন। তাদের পর্যবেক্ষণ আমলে নিলে পরবর্তী সময়ে প্রশাসনেরই লাভ হত, সম্মান কিছুটা ফিরত।
“তৃতীয়ত, আশ্চর্যের ব্যাপার হল, এমনকি প্রভোস্টরা এও দাবি করলেন যে, তাদের কাছে কোনো শিক্ষার্থী ভোট দিতে না পারা নিয়ে কোনো অভিযোগ করেননি। অথচ গণমাধ্যমে আমরা দেখেছি যে, নির্বাচনের দিনই চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে ৫টি প্যানেলের শিক্ষার্থীরা লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছে। এমনকি ১৮ মার্চ উপ-উপাচার্যের কাছে অভিযোগ দিয়েছে কয়েকজন শিক্ষার্থী। অথচ একই দিনে অনুষ্ঠিত প্রভোস্টদের সভায় দাবি করা হল, কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি।”
বিবৃতিদাতা শিক্ষকরা হলেন -
১। নেহাল করিম, অধ্যাপক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
২। আনু মুহাম্মাদ, অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
৩। তাসনীম সিরাজ মাহবুব, সহযোগী অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
৪। মাইদুল ইসলাম, সহকারি অধ্যাপক, সমাজতত্ত্ব বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
৫। সামিনা লুৎফা, সহযোগী অধ্যাপক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
৬। নাসির উদ্দিন আহমদ, সহযোগী অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
৭। মানস চৌধুরী, অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
৮। আর রাজী, সহকারী অধ্যাপক, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
৯। সায়মা আলম, সহকারী অধ্যাপক, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
১০। কাজী মামুন হায়দার, সহকারী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
১১। কাজলী সেহরীন ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
১২। মুনাসির কামাল, সহকারী অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
১৩। শামসুল আরেফিন, প্রভাষক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
১৪। সুবর্না মজুমদার, সহকারী অধ্যাপক, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
১৫। মির্জা তাসলিমা সুলতানা, অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
১৬। সাঈদ ফেরদৌস, অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
১৭। সাদাফ নূর, সহযোগী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
১৮। মাসুদ ইমরান মান্নু, সহযোগী অধ্যাপক, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
১৯। নাসরিন খন্দকার, সহযোগী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
২০। খাদিজা মিতু, সহযোগী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
২১। জাভেদ কায়সার, সহকারী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, শাবিপ্রবি!
২২। রায়হান শরীফ, সহযোগী অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
২৩। সৌম্য সরকার, সহকারী অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
২৪। ওয়াকিলুর রহমান, অধ্যাপক, গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
২৫। নাফীসা তানযীম, সহকারী অধ্যাপক, গ্লোবাল স্টাডিজ, উইমেন্স, জেন্ডারঅ্যান্ড সেক্সুয়ালিটি বিভাগ, লেসলি বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাষ্ট্র।
২৬। কাজী শেখ ফরিদ, সহযোগী অধ্যাপক, গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
২৭। মাহমুদুল সুমন, অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
২৮। হিয়া ইসলাম, প্রভাষক, মিডিয়া স্টাডিজ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ইউনিভার্সিটি অফ লিবারাল আর্টস, বাংলাদেশ (ইউল্যাব)
২৯। আলী রিয়াজ, ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর, রাস্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাষ্ট্র
৩০। আকমল হোসেন, সাবেক অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
৩১। খন্দকার হালিমা আক্তার রিবন, সহযোগী অধ্যাপক, নাট্য ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
৩২। পারভীন জলী, সহযোগী অধ্যাপক, ইতিহাস বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
৩৩। মাহমুদ হোসেইন, সহযোগী অধ্যাপক, মার্কেটিং বিভাগ, সান ফ্রান্সিসকো স্টেট ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাষ্ট্র
৩৪। লুৎফুন হোসেন, সাবেক শিক্ষক, প্রাণীবিদ্যা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
৩৫। দীপ্তি দত্ত, প্রভাষক, প্রাচ্যকলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
৩৬। অভিন্যু কিবরিয়া ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক, অনুজীববিজ্ঞান বিভাগ, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
৩৭। অর্পিতা শামস মিজান, প্রভাষক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
৩৮। আইনুন নাহার, অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
৩৯। মোশরেকা অদিতি হক, সহকারী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
৪০। মোশাহিদা সুলতানা, সহযোগী অধ্যাপক, একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
৪১। রায়হান রাইন, সহযোগী অধ্যাপক, দর্শন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
৪২। অধ্যাপক সুমন সাজ্জাদ, বাংলা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
৪৩। রোবায়েত ফেরদোউস, অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
৪৪। ড. তৈয়েবুর রহমান, অধ্যাপক, উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
৪৫। ড আব্দুর রাজ্জাক খান, সহযোগী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
৪৬। সিউতি সবুর, সহযোগী অধ্যাপক, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়
৪৭। গোলাম হোসেন হাবীব, সহকারী অধ্যাপক, ইংরেজী বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
৪৮। হিমেল বরকত, অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
৪৯। স্বাধীন সেন, অধ্যাপক, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
৫০। কাবেরী গায়েন, অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়