ডেমরায় সংগঠনের এক কর্মীকে মারধরের জেরে এ ঘটনা ঘটে।
Published : 21 Jan 2025, 09:08 PM
রাজধানীর বাংলামোটরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংগঠনের কিছু নেতাকর্মী মারামারিতে জড়িয়েছেন।
মঙ্গলবার বিকালের এ ঘটনায় আহত এক নারী শিক্ষার্থীসহ সাতজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মো. ফারুক।
আগের দিন রাজধানীর ডেমরায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক কর্মীকে মারধরের ঘটনা নিয়ে মঙ্গলবার সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মারামারিতে জড়ায় দুই অংশ। ডেমরা থেকে আসা সংগঠনটির নেতাকর্মীরা তাদের উপর হামলার অভিযোগ এনেছে।
আহতদের একজন ইমরান ঘটনার বর্ণনা দিয়ে হাসপাতালে সাংবাদিকদের বলেন, “ডেমরার এক সহযোদ্ধাকে সোমবার সমন্বয়কদের সামনে মারধর করা হয়। আজ বিকালে আমদেরকে বাংলামোটরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মীমাংসার জন্য ডাকা হয়েছিল। সেখানে যাওয়া মাত্র বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সদস্য নাঈমের নেতৃত্বে ৮/১০ জন মিলে আমাদের মারধর করে।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মহিউদ্দিন ‘কিছু সংখ্যক নেতাকর্মীর’ মারামারিতে জড়ানোর তথ্য দিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "এ নিয়ে নির্বাহী কমিটি বৈঠকে বসেছে। বৈঠক শেষে বিস্তারিত জানা যাবে।"
এ ঘটনা নিয়ে সংগঠনের পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ ঘটনার সঙ্গে যুক্ত কেউ সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নয়। তদন্ত শেষে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আহতরা হলেন- কবি নজরুল কলেজের স্নাতক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আনতা মিম (২০), দনিয়া কলেজের রাবেয়া (১৯), তেজগাঁও কলেজের আশরাফ উদ্দিন বাবু (১৯), ইস্ট-ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমরান হোসেন (২২) এবং বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ডিপ্লোমা কোর্সের শিক্ষার্থী মাকছুদুর রহমান (২৪), আল আমিন (২২) ও মো. হাসিব (২০)।
ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক ফারুক বলেন, “তাদের সবাইকে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।”
মারামারির পর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যান সংগঠনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। তখন তাকে ঘিরে ধরেন একদল বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী।
ঘটনায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের তরফে বলা হয়, সোমবার ডেমরায় মারামারির ঘটনায় তারা মঙ্গলবার বিকালে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধনের উদ্যোগ নেন। কিন্তু মানববন্ধন করতে তাদের বাধা দেওয়া হয়। পরে তাদের মারধর করা হয়।
তাদের ভাষ্য, ঘটনার সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক রিফাত রশিদ উপস্থিত ছিলেন।
তবে এ বিষয়ে জানতে রিফাত রশিদকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ধরেননি।
পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দপ্তর সেলের দায়িত্বরত জাহিদ আহসান সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, “নির্বাহী কমিটির একজন এই ঘটনায় আহত হয়েছেন।”
সেখানে বলা হয়, “বাংলামোটরে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিপথগামী কয়েকজন মানুষ এসে বিভিন্ন অপ্রীতিকর স্লোগান দিতে থাকে। এক সময় তারা জোর-জবরদস্তি করে কার্যালয়ের ফটক বন্ধ করে দেয়। এতে অফিস রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
“পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে পেরে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য রিফাত রশিদ, আহনাফ সাঈদ খান, নাঈম আবেদিন, আসাদ বিন রনি সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে আগত ব্যক্তিদের দাবি-দাওয়া শুনতে চান।
“কিন্তু তারা সহযোগিতার বদলে নির্বাহী সদস্যদের ওপরও চড়াও হন। নির্বাহী সদস্য নাঈম আবেদিন এতে আহত হন। পরবর্তী সময়ে অন্যান্য নেতাকর্মী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এলে পরিস্থিতি উত্তপ্তকারীরা কার্যালয় ত্যাগ করতে বাধ্য হন।”
এ বিষয়ে সংগঠনের অবস্থান তুলে ধরে বলা হয়, "সহিংসতার বদলে সৌন্দর্য এবং সম্প্রীতির বিকাশ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পাথেয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মনে করে, সাংগঠনিক সকল সমস্যার সমাধান আলোচনার মাধ্যমে সম্ভব। আলোচনার বদলে যারা সহিংসতার পথ বেছে নেবে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তাদের বিষয়ে বিন্দুমাত্র সহানুভূতি প্রদর্শন করবে না।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী ‘নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বিনির্মাণে বদ্ধ পরিকর’ বলে বিজ্ঞপ্তিতে তুলে ধরা হয়। সেখানে বলা হয়, “নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তে সহিংসতার বদলে সংহতি এবং সম্প্রীতি প্রাধান্য পাবে।"
এ ঘটনার তদন্তে ঢাকা মহানগরের দায়িত্বশীল এবং ঘটনাকালীন সময়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে উপস্থিত নির্বাহী সদস্যদের সমন্বয়ে একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি এরইমধ্যে কাজও শুরু করেছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।
তেজগাঁও কলেজের সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে মোহাম্মদ আল-আমিন অভিযোগ করেন, সমন্বয়ক রিফাত রশিদসহ কেন্দ্রীয় সমন্বয়করা তাদের উপর হামলা করেছেন।
তার অভিযোগ, "রূপায়ণ টাওয়ারে রিফাত রশিদসহ কেন্দ্রীয় সমন্বয়করা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শাটার বন্ধ করে মারধর করে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের হেনস্তা এবং মারধর করে।”
‘মনে হয় তারা ছাত্রলীগ হয়ে উঠতে চায়’
মারামারির পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডাকে একটি পক্ষ। সেখানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানজিম মোহাম্মদ সৌরভ রেজা বলেন, “বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কার্যক্রম দেখে মনে হচ্ছে তারা ছাত্রলীগ হয়ে উঠতে চায়। সেই ধরনের কার্যকলাপই তারা শুরু করেছেন।”
সৌরভের ভাষ্য, “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সভায় অংশগ্রহণ শেষে ফেরার পথে সোমবার রাতে বাস থামিয়ে তাদের ওপর হামলা করা হয়। এতে হাফিজ নাঈম হামিদ মিঠু, মোহাম্মদ বাদশা, সাব্বিরসহ কয়েকজন আহত হন। পরবর্তীতে জানা যায়, হামলার পেছনে ছিলেন আশিকুর রহমান হৃদয়।”
সৌরভ বলেন, ওই ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে মঙ্গলবার দুপুরে তারা সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে যান। সেখানে কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য নাঈমুল আবেদীন তাদের চলে যেতে বলেন। পাশাপাশি রিফাত রশিদ হামলার নির্দেশ দিলে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কর্মীরা হামলা চালায়।”
হামলায় ২১ জন আহত হয়েছেন বলে দাবি করেন সৌরভ।
আরও পড়ুন
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কার্যালয়ে 'হাতাহাতি'