“আমরা আশা করি আমরা চেষ্টার মাধ্যমে একদিন মেধা ও জ্ঞানের ভিত্তিতে সমাজ গঠনে সক্ষম হব, তখন তোমরা উচ্চশিক্ষা শেষে আবার দেশে ফিরে আসবে”, বলেন তিনি।
Published : 07 Dec 2024, 09:13 PM
গত ২০ থেকে ৩০ বছরে মেধাবীদের বেশিরভাগ দেশের বাইরে চলে গেছে বলে মনে করেন শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি আশা করছেন, একদিন এমন সমাজ হবে, সেখানে শিক্ষার্থীরা উচ্চ শিক্ষা শেষে দেশে ফিরে আসবে।
শনিবার পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ২৫তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
অর্থনীতির শিক্ষক ওয়াহিদ বলেন, “তোমাদের আগের গ্র্যাজুয়েটদের অনেকে বিদেশে চলে গেছে। গত ২০-৩০ বছরে মেধাবীদের বেশিরভাগ বিদেশে চলে গেছে, যেটাকে আমরা ‘ব্রেইন ড্রেইন’ বলছি। তবে আমরা আশা করি আমরা চেষ্টার মাধ্যমে একদিন মেধা ও জ্ঞানের ভিত্তিতে সমাজ গঠনে সক্ষম হব, তখন তোমরা উচ্চশিক্ষা শেষে আবার দেশে ফিরে আসবে। সেটাকে আমরা বলব ‘ব্রেইন সার্কুলেশন’।”
সরকার দেশকে গণতান্ত্রিক শাসনের শান্তিপূর্ণ রূপান্তর করার চেষ্টা করছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা মনে করি ছাত্রজনতার এই অভ্যুত্থান সফল হবে যদি আমরা একটি সুন্দর আদর্শ গণতান্ত্রিক দেশে রূপান্তরিত হতে পারি।”
রাষ্ট্রপতি ও আচার্য মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের পক্ষে অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষা উপদেষ্টা। সেখানে ৮ হাজার ১৯ জন শিক্ষার্থীকে গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রি দেওয়া হয়।
সমাজ ও অর্থনীতিতে কিছুটা অস্থিরতা আছে উল্লেখ করে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, “তোমাদের কেউ কেউ হয়ত বিদেশে চলে যাবে। কেউ কেউ এখানে থাকবে চাকরি বা কর্মজীবনের সূত্রে। এ অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে তোমাদের কেউ কেউ এখনই হয়ত কর্মজীবনে প্রবেশ করতে সমস্যায় পড়তে পার। তবে আমি বিশ্বাস করি তোমরা শিক্ষা জীবনে যথেষ্ট উদ্ভাবনী শক্তি অর্জন করেছে যা দিয়ে তোমরা চাকরি বা দেশের জন্য কিছু করার চেষ্টা করবে।
“আর যদি কিছু করতে না পার, এ মুহূর্তে যদি চাকরি বা অর্থ উপার্জন করার সুযোগ না পাও, তাহলে তোমার গ্রাম বা মহল্লায় ফিরে গিয়ে অন্তত কিছু কমিউনিটি বেসড কাজ কর। এখন আমাদের সবার সামনে যে চ্যালেঞ্জ, আমরা একটি সুন্দর গণতান্ত্রিক সমাজ তৈরি করব; তাতে তোমাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কমিউনিটি বেসড চেষ্টা অবদান রাখবে।”
নবীন গ্র্যাজুয়েটদের কাজ খোঁজার ক্ষেত্রে বেতনের চেয়ে ভালো লাগাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার তাগিদও দেন শিক্ষা উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, “যে পেশা বেতন বেশি দেয় সেটার দিকে যেও না। এমন পেশায় প্রবেশ করো যে কাজটি তুমি ভালো কর ও পছন্দ কর। কারণ, যখন নিজের কাজকে পছন্দ করবে তখন তুমি কর্মজীবনে উপভোগ করবে।
“তোমরা কতটা সফলতা নির্ভর করবে দুইটি বিষয়ের ওপর। একটি হল তোমরা যে পেশাকে বেছে নেবে। আর দ্বিতীয়টি হল তুমি কাকে তোমার জীবনসঙ্গী হিসাবে বেছে নেবে। এ দুটিই সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ তোমার জীবন কতটা সফল হবে তা নির্ধারণে।”
দেশ ও জাতির প্রতি গ্র্যাজুয়েটদের দায়িত্বের কথা মনে করিয়ে দিয়ে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তোমরা ৩০ শতাংশ জ্ঞান অর্জন করেছ। বাকি ৭০ শতাংশ জ্ঞান অর্জন করবে কর্মজীবনে। যে শিক্ষা তোমরা পেয়েছ, তা তোমাদের প্রস্তুত করেছে কর্মজীবনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে।
“সবাই ভালো ক্যারিয়ার গড়তে চায়। তবে মনে রাখবে দেশ ও জাতির প্রতি তোমাদের একটা দায়িত্ব আছে।”
অনুষ্ঠানে কৃতিত্বপূর্ণ ফলের জন্য ২০ জন গ্র্যাজুয়েটের হাতে চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক তুলে দেন উপদেষ্টা।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. মামুন মোল্লা।
সমাবর্তন বক্তা বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস বলেন, “বাংলাদেশ এখন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা ও ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই চালিয়ে যাওয়া নির্ভর করছে আপনাদের উপর। আগামী প্রজন্মকে আশা, সম্মান এবং সাম্যের আলোকবর্তিকা হিসাবে নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব আপনাদের।”
উদ্বোধনী বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয় বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান আজিম উদ্দিন আহমেদ, উপাচার্য আবদুল হান্নান চৌধুরীও বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের পাশাপাশি এনএসইউর বোর্ড সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। আইনি জটিলতায় বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চার জ্যেষ্ঠ সদস্য এম এ কাশেম, রেহানা রহমান, বেনজীর আহমেদ ও মোহাম্মদ শাহজাহান উপস্থিত ছিলেন না বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।