ছাত্র রাজনীতিকে মানুষ আর সম্মানের চোখে দেখে না: রাষ্ট্রপতি

“বড় বড় ব্যবসায়ী শিল্পপতিরাই বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে স্বেচ্ছায় ঋণখেলাপি হন,” বলেন তিনি।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Feb 2023, 06:22 PM
Updated : 25 Feb 2023, 06:22 PM

দেশে ছাত্র রাজনীতির জৌলুস হারিয়ে যাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

তিনি বলেছেন, “দখলবাজি আর চাঁদাবাজির কারণে ছাত্র রাজনীতিকে এখন আর মানুষ আগের মতো সম্মানের চোখে না দেখে নেতিবাচকভাবে দেখে।“

শনিবার বিকালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ষষ্ঠ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে আচার্য হিসেবে তিনি বক্তব্য রাখছিলেন।

রাষ্ট্রপতি তার বক্তব্যে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ, টেন্ডারে অনিয়মের খবরে অসন্তোষ প্রকাশ করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্টদের সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বলে বাসস জানিয়েছে।

আবদুল হামিদ বলেন, “ইদানীংকালে পত্রপত্রিকা খুললেই দেখা যায়, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ বাণিজ্য ও টেন্ডারবাজির নেতিবাচক খবর... নিজেদেরকে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির ঊর্ধ্বে রাখবেন।”

দলীয় লেজুড়বৃত্তির ঊর্ধ্বে উঠে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের রাজনীতি করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “পড়াশোনার জায়গাটা ঠিক রেখে তারপরে রাজনীতি, সমাজসেবা, সাংস্কৃতিক বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রমে নিজেদের যুক্ত করতে পারেন। কোনোভাবেই লেখাপড়ার ক্ষেত্রে আপস করা যাবে না।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য আবদুল হামিদ বলেন, “দুর্নীতি আমাদের উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে অন্যতম বড় অন্তরায়। তাই দুর্নীতির বিরুদ্ধে সকলকে সচেতন থাকতে হবে।”

তিনি বলেন, “উপাচার্য, শিক্ষকবৃন্দ ও শিক্ষার্থীগণ মুক্তবুদ্ধির চর্চা করেন। তারা রাজনীতির অনুশীলন এবং সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণও করেন। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু ও পরিচ্ছন্ন রাজনীতি প্রত্যাশিত।”

বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অস্তিত্ব খুঁজে না পাওয়ায় রাষ্ট্রপ্রধান হতাশা প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, “শুধু সনদসর্বস্ব শিক্ষা দিয়ে দেশ ও দশের উন্নয়ন সম্ভব না। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সাথে বাস্তব জীবনের যোগসূত্র স্থাপন করতে পারলে তবেই সেই শিক্ষা সফল হয়েছে বলা যায়।”

বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে তাগিদ দিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, “উপাচার্য ও শিক্ষকদের মনে রাখতে হবে শিক্ষাদান ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মূল এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। আর শিক্ষার্থীদের মূল কাজ লেখাপড়া ও জ্ঞান অর্জন।”

গ্র্যাজুয়েট ও শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “প্রতিটি শিক্ষার্থীকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিকতা, মূল্যবোধ, দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবোধের শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে।

“… দেশের উন্নয়ন ও ইতিবাচক পরিবর্তনে মেধাবী তরুণদের যথাযথ পরিচর্যার জন্য আমাদের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বমানের করে গড়ে তুলতে হবে।”

গ্র্যাজুয়েটদের দেশ-জাতির কল্যাণে ভূমিকা রাখার পরামর্শ দিয়ে আচার্য বলেন, “একক নয়, পরিবার, সমাজ ও জাতীয় উন্নয়নের দিকেও মনোযোগ দিতে হবে।”

উচ্চশিক্ষা গ্রহণকারী বেশির ভাগের মানসিকতা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, “চাকরিতে ঢুকেই কিভাবে গাড়ি-বাড়ির মালিক হওয়া যায় সেই চিন্তায় বিভোর থাকেন। নিজের ক্ষুদ্র স্বার্থের জন্য অনেক সময় দেশ ও জাতির বড় স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিতেও পিছপা হন না।”

তিনি বলেন, “ব্যবসায়ী শিল্পপতিরাও ব্যবসা শুরু করেই নীতি-নৈতিকতাকে বাদ দিয়ে কীভাবে শুধু নিজে বড়লোক হতে পারবে সেই চিন্তাভাবনায় ব্যস্ত থাকেন।

“বড় বড় ব্যবসায়ী শিল্পপতিরাই বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে স্বেচ্ছায় ঋণখেলাপি হন।”

এবারের সমাবর্তনে অংশগ্রহণকারী মোট ১৫ হাজার ২১৯ শিক্ষার্থীর মধ্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে তিনটি ক্যাটাগরিতে ১৬ জন শিক্ষার্থীকে স্বর্ণপদক দেন রাষ্ট্রপতি।

সমাবর্তনে অংশ নেওয়াদের মধ্যে নিয়মিত স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্নকারী হলেন ১১ হাজার ৪৪৪ জন, উইকেন্ড প্রোগ্রামের ৩ হাজার ৪৬১ জন, এমফিল ডিগ্রির ৩৪ জন এবং পিএইচডি সম্পন্নকারী ২৮০ জন।

অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন।

অন্যদের মধ্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলম, উপ উপাচার্য অধ্যাপক শেখ মো. মনজুরুল হক, ট্রেজারার অধ্যাপক ড. রাশেদা আখতার, রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।