“এটা একাডেমিক কোনো সংকট নয়। এই জাতীয় সংকট তৈরি হয়েছে পলিটিক্যাল স্থবিরতার কারণে। জাতীয় সংকট জাতীয়ভাবেই সমাধান করা প্রয়োজন।”
Published : 03 Aug 2024, 04:05 PM
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উদ্ভুত হওয়া সংকট নিরসনে জাতীয় ঐক্য ও সংলাপ জরুরি বলে জানিয়েছেন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান।
তিনি বলেন, “এই মুহূর্তে যেটি প্রয়োজন এবং আমি দাবি রাখি, সেটি হলো একটি জাতীয় ঐক্যের। সেটির জন্য সংলাপের বিকল্প নাই।”
শনিবার বেলা সাড়ে ১১ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে আওয়ামী লীগ সমর্থক শিক্ষকদের সংগঠন নীল দল আয়োজিত এক মানববন্ধনে এ কথা বলেন সাবেক এই উপাচার্য।
এই সংলাপ ও ঐক্য তৈরিতে সরকারের উচ্চ মহল থেকে উদ্যোগ আসা প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন এই অধ্যাপক।
তিনি বলেন, “এখন যে সংকট তৈরি হয়েছে, এটা জাতীয় সংকট। এটা একাডেমিক কোনো সংকট নয় ।এই জাতীয় সংকট তৈরি হয়েছে পলিটিক্যাল স্থবিরতার কারণে। জাতীয় সংকট জাতীয়ভাবেই সমাধান করা প্রয়োজন।”
এ সময় শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ জানিয়ে অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, “তারা কিন্তু জাতিকে আরেকটি শিক্ষা দিল এবং তারা ইতিহাসের একটি অংশ হল। ন্যায্যতা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কীভাবে নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন-সংগ্রাম পরিচালনা করতে হয়, সেটি বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনায় শিক্ষার্থীরা যেভাবে প্রমাণ করেছিল, তার পুনরাবৃত্তি ঘটল ১ জুলাই থেকে।
“শিক্ষার্থীরা মূলত দেখিয়েছে নিরস্ত্র অবস্থায় কীভাবে দলমত নির্বিশেষে সকল শ্রেণিপেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে ন্যায়সঙ্গত ও যৌক্তিক দাবি আদায় করতে হয়। এজন্য আমি তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ দেই।”
দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, “আমরা ছাত্রশূণ্য ক্যাম্পাস দেখতে চাই না। আমরা চাই অবিলম্বে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হোক। যাতে শিক্ষার্থীরা নিজ ক্যাম্পাসে এসে জীবন গড়ার সুযোগ পায়, সেই কাজটি আমাদের অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত।
“কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের দাবি থাকবে, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করে তাদের নিরাপত্তা এবং বিভিন্ন ভবনাদিতে যে ক্ষতি হয়েছে সেগুলো সংস্কার সাপেক্ষে যত দ্রুত সম্ভব বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া হোক”
মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, “ আমরা সবসময় কোটার যৌক্তিক সমাধান চেয়েছি। তবে তৃতীয় পক্ষ শিক্ষার্থীদের বিপথে পরিচালনা করে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে।
“বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোটা নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করেছে। কিন্তু তৃতীয় পক্ষ তাদেরকে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছে। তারপর অনুপ্রবেশকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকে শিক্ষার্থীদের বিপথে পরিচালিত করে হল দখল, রুম ভাঙচুর, শিক্ষকদের হামলা করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা লাশ ফেলার চেষ্টা করেছে।”
‘বোরখা পরে অপশক্তি রোকেয়া হলে’ ঢুকেছে মন্তব্য করে নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, “তারা রোকেয়া হলের প্রভোস্টকে অবরুদ্ধ করেছিল, শিক্ষার্থীদের গায়ে হামলা করেছিল। মুখোশ পরে, বোরখা পরে তারা রোকেয়া হলে প্রবেশ করেছিল। এই যে অপশক্তির এই অপকর্ম করেছিল আমরা তার তীব্র নিন্দা জানাই।
মানববন্ধন শেষে শিক্ষকরা মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্য ঘুরে ৫ দফা দাবিতে উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাদের কার্যালয়ে গিয়ে স্মারকলিপি দেন। এর আগে মানববন্ধনে স্মারকলিপিটি পড়ে শোনান নীলদলের আহ্বায়ক অধ্যাপক মোহাম্মদ আমজাদ আলী।
এই দাবিগুলো হল- কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে ক্যাম্পাসে সংঘটিত সকল ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের অবিলম্বে শাস্তির ব্যবস্থা করা। আবাসিক হলগুলোতে বৈধ এবং নিয়মিত শিক্ষার্থীদের অবস্থান নিশ্চিত করতে নীতিমালা প্রণয়ন করা।
আবাসিক হলগুলোতে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ, শিক্ষার্থীদের জীবনমানের উন্নয়ন, স্বাধীন মতপ্রকাশ এবং যেকোনো ধরনের নির্যাতন-নিপীড়ন রোধে নীতিমালা প্রণয়ন করা। গ্রন্থাগারগুলোতে শুধু বৈধ শিক্ষার্থীদের প্রবেশ নিশ্চিতকরণে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।