ডলার নিন কার্ডে, পরামর্শ বিদেশগামীদের

আমদানির তুলনায় রপ্তানি ও রেমিটেন্স আসছে না, তাই ডলার সঙ্কট বলে জানালেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 August 2022, 06:15 PM
Updated : 11 August 2022, 06:15 PM

ব্যাংক ও খোলা বাজারে দরের ঊর্ধ্বগতি ও সরবরাহ সঙ্কটের এই সময়ে বিদেশ ভ্রমণে কার্ডের মাধ্যমে ডলার নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় এই পরামর্শ দেন।

বৃহস্পতিবার ব্যাংকের চেয়ে খোলাবাজারে নগদ অর্থে ডলারের দরের পার্থক্য ১০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। ফলে কিনে ডলার নেওয়ার চেয়ে কার্ডে নেওয়াই সাশ্রয়ী।

গ্রাহকদের কাছে নগদ অর্থে কাগুজে ও কার্ডে দুই ভাবেই ডলার বিক্রি করে ব্যাংক। কাগুজে ডলার কিনতে যেখানে খরচ হয়েছে ১০৯.৫০ টাকা পর্যন্ত, সেখানে ব্যাংক কিংবা কার্ডের মাধ্যমে ডলার কেনায় ৯৮ টাকা পর্যন্ত দর উঠেছিল।

বৃহস্পতিবার বেসরকারি দ্য সিটি ব্যাংক কার্ডের মাধ্যমে ডলার বিক্রি করেছে ৯৫ টাকায়, সেখানে কাগুজে ডলার বিক্রি করেছে ১০৯.৫০ টাকা দরে। কার্ডের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সেবার মূল্য এই দরে পরিশোধ করা যাচ্ছে।

বিদেশে ভ্রমণেয় কার্ডে ডলার নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে সিরাজুল বলেন, “প্রতি বছর যে পরিমাণ পর্যটক দেশে আসছেন, তার চেয়ে বেশি যাচ্ছেন আমাদের দেশ থেকে। বিশেষ করে শিক্ষা, চিকিৎসা, সেমিনার ও ‍ভ্রমণে তারা ডলার নিয়ে যাচ্ছেন।

“তারা হাতে (কাগুজে) ডলার না নিয়ে কার্ডে নিলে খরচ অনেক কম পড়বে। এখন সব জায়গাতেই অনলাইন মাধ্যম বড় হচ্ছে। বিদেশ ভ্রমণে কার্ডের মাধ্যমেও ডলার নিয়ে যাওয়া সম্ভব। সেক্ষেত্রে খোলাবাজার ও ব্যাংকের চেয়েও তুলনামূলক কম দরে পাবেন তারা।”

ডলারের দাম চড়ার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “পণ্য আমদানিতে যে পরিমাণ ডলার খরচ হয়, সে তুলনায় রপ্তানি ও রেমিটেন্স আসছে না। একটি গ্যাপ থেকেই যাচ্ছে। এ কারণে ডলারের দর বাড়ছে।”

বুধবার খোলা বাজারে ডলারের দর উঠেছিল ১১৯ টাকা পর্যন্ত, এর একদিন পরেই বৃহস্পতিবার ৬ টাকা কমে দর নেমেছে ১১৩ টাকায়।

অন্যদিকে ব্যাংকগুলোতে নগদ অর্থে ডলার কিনতে খরচ হচ্ছে ১০৭ থেকে ১০৯.৫০ টাকা পর্যন্ত।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, নগদ অর্থে ব্যাংকগুলোতে কাগুজে ডলার কিনতে গ্রাহককে ১০৯.৫০ টাকা পর্যন্ত খরচ করতে হচ্ছে গ্রাহককে।

কিন্তু কার্ডে নিলে তাতে বর্তমানে খরচ পড়ছে ৯৫ টাকার মতো। কয়েকদিন পূর্বেও যেখানে ৯৭-৯৮ টাকায় উঠেছিল, তখন খোলাবাজারেও কাগুজে ডলারের দর ছিল ১০৮ টাকার উপরে। আর ব্যাংকে ছিল ১০৪ টাকা থেকে ১০৫ টাকার মতো।

ডলারের বাজারে ভারসাম্য রাখতে বৃহস্পতিবারও ১২ কোটি ২০ লাখ ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক, বিভিন্ন ব্যাংককে তা দেওয়া হয়েছে ৯৫ টাকা দরে।

সুইস ব্যাংকের কাছে অর্থপাচারের তথ্য চাওয়া হয়েছে

গত বুধবার ‘ডিক্যাব টক” এ অংশ নিয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাতালি শুয়া বলেছিলেন, সুইস ব্যাংকে অর্থ জমা করা বাংলাদেশিদের বিষয়ে কোনো তথ্য সরকার তাদের কাছে চায়নি।

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলামের কাছে এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “দেশের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্ট ইউনিট (বিএফআইইউ) একাধিকবার বিভিন্ন দেশের কাছে বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য চেয়েছে। একাধিকবার তাদের (সুইস) কাছে চিঠিও দিয়েছে। সেই সংগ্রহ করা তথ্য রিপোর্ট আকারেও প্রকাশ করেছে বিএফআইইউ।”

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনও বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেছেন, সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত ‘মিথ্যা’ বলেছেন।

সুইস ব্যাংকের কাছ থেকে তথ্য চাওয়া-পাওয়ার বিষয়ে বিএফআইইউ আনুষ্ঠানিকভাবে সর্বশেষ সাংবাদিকদের জানিয়েছিল গত ১৮ জুন।

সেদিন এক সেমিনারে বিএফআইইউ অতিরিক্ত পরিচালক মো. কামাল হোসেন বলেছিলেন, “সুইস অথরিটির কাছে প্রতিবারের ন্যায় এবারও তথ্য চাওয়া হয়েছে বিএফআইইউর পক্ষ থেকে।

“পাচার করা অর্থ উদ্ধার জটিল কাজ। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের ৬৭ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অর্থ সম্পর্কে তথ্য পেয়েছে বিএফআইইউ সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের কাছে। সেই তথ্য বাংলাদেশের বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, দুদক ও তদন্তকারী সংস্থাকে দেওয়া হয়েছে।”