আমদানিকারকের দেওয়া সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য কেটে বেশি মূল্য লিখে দেন অনেক খুচরা বিক্রেতা, বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।
Published : 10 Nov 2022, 11:32 PM
দেশি বিদেশি ব্র্যান্ডের নামি-দামি প্রসাধনী পণ্যের ব্যবসার আড়ালে পদে পদে অনিয়ম ও ভোক্তা ঠকানোর কারবার চলছে বলে উঠে এসেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদনে।
দেশে প্রসাধনীর বড় বাজার ধরতে এসব অনিয়মের সঙ্গে বেসরকারি পর্যায়ের পাশাপাশি সরকারের শুল্ক কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার অভিযোগের কথাও এসেছে এ প্রতিবেদনে।
বৃহস্পতিবার অধিদপ্তর থেকে সংবাদমাধ্যমে পাঠানো ওই প্রতিবেদনে প্রসাধনী খাতের বিভিন্ন অনিয়মগুলো তুলে ধরার পাশাপাশি কারসাজির কারবার দূর করতে দেওয়া হয় একগুচ্ছ সুপারিশ।
ব্যক্তির কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে এবং স্বপ্রণোদিত হয়ে দেশজুড়ে তদারকিমূলক অভিযান পরিচালনা করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। আবার ঢাকার প্রধান কার্যালয়ে এ খাতের ব্যবসায়ীদের নিয়ে মতবিনিময়ও করেছে সংস্থাটি।
অভিযান ও মতবিনিময় থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই তৈরি করা হয়েছে প্রতিবেদনটি।
দোকানের তাকে সাজানো প্রসাধনীগুলোতে আমদানিকারকের তথ্য, মেয়াদোত্তীর্ণ ও উৎপাদনের তারিখ, সর্বোচ্চ খুচরা বিক্রয়মূল্যসহ আবশ্যকীয় তথ্য উল্লেখ না থাকার বিষয়টি এর আগেও বারবার উল্লেখ করেছে ভোক্তা অধিকার।
“নকল, অনুমোদনহীন, মেয়াদ উত্তীর্ণ কসমেটিকস পণ্য বিক্রয়সহ বেশ কিছু অনিয়ম পাওয়া যায়। একইসাথে নকল, নিম্নমানের, অনুমোদনহীন, মেয়াদ উত্তীর্ণ কসমেটিকস পণ্য ব্যবহার করে চর্মরোগসহ মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছেন মর্মে অনেক ভোক্তাদের নিকট থেকে অভিযোগও পাওয়া গেছে,” বলা হয় প্রতিবেদনে।
এতে আরও বলা হয়, যথাযথ প্রক্রিয়ায় কসমেটিকস পণ্য আমদানি না হওয়ায় সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য উল্লেখ না থাকায় দামের দিক থেকে ভোক্তারাও প্রতারিত হচ্ছেন।
বাজারের অধিকাংশ প্রসাধনীতে ভেজাল: ভোক্তা অধিদপ্তর
ব্র্যান্ডের নকল প্রসাধনী: ৬ মাসে ৪ কারখানায় অভিযান, মালিক একই
একইসঙ্গে বৈধ ও অবৈধ আমদানিকারক, ব্যবসায়ীদের মধ্যে অসম প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হচ্ছে যেখানে বৈধ ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।
আরও যেসব অসঙ্গতি
>> অনেক কসমেটিকস পণ্যের মোড়কে আমদানিকারকের তথ্য এবং সর্বোচ্চ খুচরা বিক্রয় মূল্য, উপাদান, পরিমাণ, ব্যবহারবিধি, উৎপাদনের তারিখ ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ উল্লেখ থাকে না।
>> ‘প্রাইসগান মেশিনের’ সাহায্যে খুচরা বিক্রেতা নিজেই সর্বোচ্চ খুচরা বিক্রয় মূল্য বসিয়ে দেয়।
>> আমদানিকারকের দেওয়া সর্বোচ্চ খুচরা বিক্রয় মূল্য কেটে অধিক মূল্য লিখে দেন অনেক খুচরা বিক্রেতা।
>> বিদেশি পণ্য নকল করে দেশের অভ্যন্তরে তৈরি করে বিদেশি পণ্য হিসেবে বিক্রি করা হয়।
গত ১২ অক্টোবর জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে কসমেটিকস পণ্য আমদানিকারক, বাজারজাতকারী ও ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণে একটি মতবিনিময় সভা হয়। ওই বৈঠকে ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে বলা হয়, লাগেজ ব্যবসায়ীরা তুলনামূলক কম শুল্ক দিয়ে বিদেশি পণ্য আমদানি করেন। কসমেটিকস পণ্যের আমদানিকারকদের হয়ে ফ্রেইট এজেন্সিগুলো এক্ষেত্রে জড়িত থাকে।
>> কিছু কিছু পণ্যের শুল্ক বেশি হওয়ায় বাজারে অনেক সময় সেগুলোর সরবরাহ কমে যায়। তখন কিছু সুযোগ সন্ধানী অসাধু ব্যবসায়ী সেগুলো নকল করে বাজারে সরবরাহ করে থাকে।
মতবিনিময় সভায় আমদানিকারকরা তাদের ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা তুলে ধরে জানান, কতিপয় কাস্টমস কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় ফ্রেইট এজেন্সিগুলো অবৈধভাবে অনেক পণ্য ছাড় করে বাজারে ছেড়ে দেয়। এতে সুষ্ঠু ব্যবসার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।
কখনও কখনও তারা যে পরিমাণ পণ্য আনার ঘোষণা দেন, তার চেয়েও বেশি পরিমাণে পণ্য আনেন এবং কাস্টমসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যোগসাজশে জরিমানা ছাড়াই তা বন্দর থেকে বের করে আনেন।
এতে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে কসমেটিকস পণ্য আমদানি রোধে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণসহ সাতটি সুপারিশ করা হয়।
কসমেটিকস পণ্যের মোড়কে দাম ও আমদানিকারকের নামসহ অন্যান্য তথ্য না থাকার বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট দপ্তর-সংস্থার তদারকি অব্যাহত রাখতে হবে।
সঠিক মানদণ্ড নিশ্চিত করতে বিএসটিআইসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আর নকল ঠেকাতে গোয়েন্দা সংস্থাসহ সবার তদারকি বাড়াতে জোর দেওয়া হয়েছে।