ব্র্যান্ডের নকল প্রসাধনী: ৬ মাসে ৪ কারখানায় অভিযান, মালিক একই

প্রথম তিনটি অভিযানে গ্রেপ্তার এড়িয়ে আবারও অন্য জায়গায় নামকরা ব্র্যান্ডের নকল প্রসাধনী তৈরি শুরু করেন; এমনকি উচ্চ আদালত থেকে জামিনও নেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Oct 2022, 07:05 PM
Updated : 12 Oct 2022, 07:05 PM

ঢাকার নকল প্রসাধনী তৈরির চারটি কারখানায় গত ছয় মাসে অভিযান চালিয়ে গোয়েন্দা পুলিশ বিপুল পণ্য উদ্ধারের পর দেখতে পায় সবগুলো কারখানারই মালিক একই ব্যক্তি।

প্রথম তিনটি অভিযানে গ্রেপ্তার এড়িয়ে আবারও অন্য জায়গায় নকল প্রসাধনী তৈরি শুরু করেন; এমনকি উচ্চ আদালত থেকে জামিনও নেন। তবে তার শেষ রক্ষা হয়নি, ছয় মাসের মধ্যে চতুর্থ অভিযানে ধরা পড়েন গত ৮ অক্টোবর।

ওই কারখানা মালিকের নাম নবী উল্লাহ (৫০), যিনি এখন পাঁচ দিনের রিমান্ডে রয়েছেন বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপ কমিশনার মো. মশিউর রহমান।

তার ভাষ্য, গত ছয় মাসে নবীউল্লাহ এবং তার সহযোগীরা ভেজাল কসমেটিকস ও প্রসাধনী উৎপাদন, মোড়কজাত, মজুদদারি ও বাজারজাত করার অভিযোগে তিনবার বিশেষ ক্ষমতা আইনের আসামি হওয়ার পরও জামিন নিয়ে পরে একই অপরাধে লিপ্ত থেকেছে।

গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ বিভাগ ৮ অক্টোবর চকবাজারের বড় কাটারার একটি বাসায় ভারী যন্ত্রপাতি দিয়ে স্থাপিত একটি কারখানায় বিভিন্ন দেশের ও ব্র্যান্ডের কসমেটিক্স, হেয়ার টনিক, পেইন রিমুভার, ক্রিম তৈরির সময় হাতেনাতে ধরে ফেলে নবী উল্লাহকে। এসময় গ্রেপ্তার করা হয় আরও তিনজনকে।

গোয়েন্দা কর্মকর্তা মশিউর জানান, এর আগে গত ১৩ মার্চ চকবাজারের বকশি বাজার যাদব নারায়ণ দাস লেইনের একটি ভবনের ছয় তলায় অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন দেশের নামিদামি ব্র্যান্ডের বেবি লোশন, বেবি সোপ, বেবি অয়েল, ন্যাচারাল স্কিন কেয়ার, ভেসলিন হেয়ার টনিক, এলোভেরা শুটিং জেল, জাফরান হেয়ার গ্রোথসহ প্রায় ২০ লাখ টাকার ভেজাল প্রসাধনীসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে কারখানা মালিক নবী উল্লাহ তখন পালিয়ে যান।

অভিযানের সময় কারখানাটিতে ভারত, পাকিস্তান, কোরিয়া, চায়না, থাইল্যান্ড ও আমেরিকার দামি ব্র্যান্ডের প্রসাধনী পণ্য তৈরি এবং বারকোড, কিউআর কোডসহ ঝকঝকে-চকচকে মোড়ক ও লেভেল লাগিয়ে বাজারজাতকরার কাজ দেখতে পাওয়া যায়।

এরপর গত ১৬ অগাস্ট গোয়েন্দা পুলিশ ওই চকবাজারেরই সোয়ারিঘাটের আরেকটি কারখানায় অভিযান চালিয়ে জনসন বেবি সোপ, মুভ পেইন রিলিফ স্পেসিয়ালিস্ট, ফেসওয়াশ, ক্রিমসহ নানান ভেজাল প্রসাধনী জব্দ করে।

উপ কমিশনার মশিউর জানান, এরপরও আরও কারখানায় অভিযানকালে নকল প্রসাধনী ধরা পড়ে। ওই কারখানারও মালিক নবীউল্লাহ।

এসব অভিযানের সময়ও বাইরে থাকায় তাকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। তবে মামলার এজাহারে তাকে অন্যতম আসামি করা হয়। পরে ২৮ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেন তিনি।

পড়াশোনা না জানা নবী উল্লাহ বিভিন্ন সময়ে বাড়িওয়ালাদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া দিয়ে কখনও বাড়ির নিচতলা, কখনও উপরের তলায় অবৈধ ও ভেজাল পণ্য তৈরির কারখানা স্থাপন করে ভাতের মাড়, আটা-ময়দা, মেয়াদোত্তীর্ণ ও পরিত্যক্ত প্রসাধনী, কিছু কেমিক্যালের রঙ, সুগন্ধি ব্যবহার করে ক্ষতিকারক বাহারি এসব প্রসাধনী উৎপাদন করে আসছে বলে অভিযানে দেখতে পান গোয়েন্দারা।

এসব কারখানায় তৈরি পণ্যগুলো চকবাজার হয়ে দেশের বিভিন্ন সুপার শপ, গ্রোসারি শপ, সেলুন ও বিউটি পার্লারে বিক্রি করা হয়।