বর্তমানে সর্বনিম্ন ২৬ দশমিক ২ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৫৮ দশমিক ৬ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক রয়েছে।
Published : 14 Apr 2023, 06:40 PM
বাজেটের আগেই সৌর বিদ্যুৎ সংক্রান্ত যন্ত্রপাতির উচ্চ শুল্ক কমিয়ে গড়ে ১ শতাংশে নামানোর দাবি জানিয়েছে রপ্তানিমুখী পোশাক ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিজিএমইএ।
সংগঠনটির সভাপতি ফারুক হাসান এ অনুরোধ জানিয়ে বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে চিঠি দিয়েছেন।
সরকার সৌর বিদ্যুতের প্রসার ঘটাতে চাইলেও জমি স্বল্পতার কারণে প্রকল্প হাতে নিতে পারছে না। আবার বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো শুল্ক বাধার কারণে এই খাতে বিনিয়োগ করতে পারছে না বলে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ শোনা যাচ্ছে।
সৌর বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতির ওপর সর্বনিম্ন ২৬ দশমিক ২ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৫৮ দশমিক ৬ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক নির্ধারণ করে রেখেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর।
চিঠিতে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, দেশে জ্বালানি সংকট নিরসনে সরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানি শিল্পখাতে ব্যবহারের জন্য উদ্যোক্তাদের উদ্বুদ্ধ করছে। কিন্তু শিল্প প্রতিষ্ঠানে সোলার সিস্টেম স্থাপনের ক্ষেত্রে উচ্চহারে শুল্ক আরোপ থাকার কারণে উদ্যোক্তাদের পক্ষে তা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে জ্বালানি সাশ্রয় করা এবং সবুজ কারখানা স্থাপন ও পরিচালনার ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদেরকে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
“বিদেশি ক্রেতারা শিল্প কারখানাগুলোতে কমপ্লায়েন্সের আওতাভুক্ত হওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে চাপ দিচ্ছে। শিল্প কারখানায় সোলার প্যানেল সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব শিল্প কারখানা গড়ে তোলা সম্ভব।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪১ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্য ঠিক করেছেন। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ২০ শতাংশ বিদ্যুৎ পাওয়ার পরিকল্পনা হাতে রয়েছে। দেশের মোট উৎপাদন সক্ষমতা এখন ২৫ হাজার মেগাওয়াট হলেও সৌর শক্তি থেকে বিদ্যুৎ ১ হাজার মেগাওয়াটেরও কম। তবে সম্প্রতি সারাদেশে সৌর বিদ্যুতের নতুন নতুন প্রকল্পে হাতে নেওয়ার উদ্যোগ নিতে দেখা যাচ্ছে সরকারকে।
শিল্প কারখানার মধ্যে পোশাকশিল্পের বিশাল অবকাঠামো থাকায় সেখানে উচ্চ শুল্কের মধ্যেও অনেকে ইতোমধ্যে সৌর বিদ্যুতের প্যানেল বসিয়েছেন। পরিবেশবান্ধব সুখ্যাতি অর্জনের জন্য আরও উদ্যোক্তা তাদের নিজস্ব শিল্প এলাকায় সৌর প্যানেল বসানোর আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে বিজিএমইএর পক্ষ থেকে সৌর প্যানেলের শুল্ক কমানোর প্রস্তাব এল।
ফারুক হাসান বলেন, সোলার পিভি সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে তৈরি পোশাক কারখানাগুলো নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির সাথে বিদ্যুৎ খরচ সাশ্রয়, কার্বনডাই অক্সাইড নির্গমন কমানোর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনসহ প্রধানমন্ত্রীর নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের ভিশন অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। পোশাক কারখানাগুলো ইতোমধ্যে সোলার প্যানেলভিত্তিক নবায়নযোগ্য এনার্জি প্ল্যান্ট স্থাপনে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ করেছে। কিন্তু সোলার প্যানেল সিস্টেমের সরঞ্জামাদির উচ্চমাত্রার শুল্ককরের কারণে দেশের নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহারের যাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করছে।
চিঠিতে বলা হয়, বর্তমানে সোলার বা সৌর প্যানেল সংক্রান্ত যন্ত্রপাতির মধ্যে সোলার প্যানেলে ২৬ দশমিক ২ শতাংশ, ইনভার্টারে ৩৭ শতাংশ, অ্যালুমিনিয়াম স্ট্রাকচারে ৫৮ দশমিক ৬ শতাংশ, ওয়াকওয়ের ওপর ৫৮ দশমিক ৬ শতাংশ, ডিসি ক্যাবেলে ৫৮ দশমিক ৬ শতাংশ, ফুয়েল সেভার কন্ট্রোলারের ওপর ৩৭ শতাংশ, স্কেডা সংক্রান্ত যন্ত্রপাতির ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক রয়েছে।
“বিজিএমইএর পক্ষ থেকে এসব শুল্ক গড়ে ১ শতাংশ করার দাবি জানাচ্ছি,” বলেন ফারুক হাসান।
গত ২০২১-২০২২ অর্থবছরে বিশ্বের ১৬৭টি দেশে ৪২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এটি দেশের মোট রপ্তানির ৮৪ শতাংশ এবং জিডিপির ১১ শতাংশ।
পরিবেশবান্ধব শিল্প স্থাপনেও বাংলাদেশ বিশ্বে একটি অন্যান্য অবস্থান অর্জন করেছে। বিশ্বের সর্বাধিক পরিবেশবান্ধব কারখানা এখন রয়েছে বাংলাদেশে।
দেশে ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলের (ইউএসজিবিসি) সনদপ্রাপ্ত ১৯৩টি লিড সার্টিফায়েড গ্রিন কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে প্লাটিনাম ৬৯টি ও ১১০টি গোল্ড। বিশ্বের সেরা ১০০টি লিড সনদপ্রাপ্ত কারখানার মধ্যে ৫৩টি রয়েছে বাংলাদেশে।