বৈশ্বিক মন্দার আশঙ্কার মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতায় জোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীর

বর্তমানে আইওআরএ এবং আইওআরবিএফ-এর সভাপতি বাংলাদেশ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Nov 2022, 03:03 PM
Updated : 20 Nov 2022, 03:03 PM

কোভিড মহামারী আর রাশিয়া-ইউক্রেইন ‍যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বৈশ্বিক মন্দার পদধ্বনির মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।

ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ইন্ডিয়ান ওশান রিম বিজনেস ফোরাম (আইওআরবিএফ) আয়োজিত ‘লিডারশিপ’ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ বক্তব্য দেন তিনি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি বিস্তৃত এবং অপ্রত্যাশিত স্থবিরতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতি। জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, বেশিরভাগ অঞ্চলে অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সংকোচন, ইউক্রেইন সংকট এবং কোভিড-১৯ মহামারীর চলমান ধাক্কা সামগ্রিক বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ওপর ব্যাপক আকারে প্রভাব ফেলেছে।”

আইএমএফের বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসে ২০২১ সালের ৬ শতাংশ থেকে চলতি বছর ৩ দশমিক ২ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বিশ্বব্যাপী মন্দা আসন্ন হওয়ার এই সময়ে আমাদের আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার করা প্রয়োজন।”

২৩ দেশের জোট ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশেনের (আইওআরএ) আওতাধীন আইওআরবিএফ দুই দিনব্যাপী এই লিডারশিপ সামিট আয়োজন করেছে।

বর্তমানে আইওআরএ এবং আইওআরবিএফ-এর সভাপতির দায়িত্ব পালন করছে বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার একই ভেন্যুতে আইওআরএর মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক হবে।

লিডারশিপ সামিট থেকে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো যেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে, তার দিকনির্দেশনা পাওয়ার আশা প্রকাশ করেন মোমেন।

টেকসই উন্নয়নে সামুদ্রিক সম্পদের ব্যবহারকে অন্যতম প্রধান উপাদান বর্ণনা করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “সুনীল অর্থনীতিকে অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের অন্যতম চালিকাশক্তি হিসাবে বিবেচনা করে বাংলাদেশ। সুনীল অর্থনীতির সর্বোচ্চ উপকার ঘরে তুলতে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতার ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা প্রয়োজন।”

উন্নয়নের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত উপাদানকে অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে সুনীল অর্থনীতির ক্ষেত্রে আঞ্চলিক লক্ষ্য ঠিক করার কথাও বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, “বিস্তৃত ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ব্যবসায়িক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য সম্মিলিতভাবে অনেক কিছু করার রয়েছে।”

বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে বাংলাদেশ বর্তমানে অনেক সুযোগ সৃষ্টি করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ বিদেশি বিনিয়োগ পেতে আগ্রহী। এজন্য বিনিয়োগ শর্ত অনেক শিথিল করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

“আইওআরএ সদস্য দেশগুলোর মধ্যে যারা চায়, তারা আমাদের এখানে বিশেষ করে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে বিনিয়োগ করতে পারে।”

‘ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চল বাণিজ্য ও বিনিয়োগের কেন্দ্র’ উল্লেখ করে অনুষ্ঠানে আইওআরএ মহাসচিব সালমানি ফারিসি বলেন, “বিশ্ব অর্থনীতি বর্তমানে বহু রকম চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় উপায় খুঁজে বের করতে আমাদেরকে একযোগে কাজ করতে হবে।”

এই সম্মেলন আয়োজনের বিষয়ে আইওআরবিএফের সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম সাংবাদিকদের বলেন, “আইওআরবিএফ এর প্রথম লিডারশিপ সামিট বাংলাদেশে হচ্ছে। এখান থেকে যেসব সিদ্ধান্ত আসবে, সেগুলো আমরা কাউন্সিল অব মিনিস্টার্স এবং জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বৈঠকে আমরা তুলে ধরব।

“বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতি, মূল্যস্ফীতি, জ্বালানি ও খাদ্য নিরাপত্তা প্রভৃতি বিষয় নিয়ে এখানে আলোচনা হচ্ছে। এগুলোর মধ্য থেকে আঞ্চলিকভাবে নীতি নির্ধারণের জন্য কীভাবে কাজ করা যায়, সেটা নিয়ে আলোচনা করছি আমরা।”

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, সিএসিসিআইয়ের সভাপতি সামির মোদী, বাংলাদেশে অস্ট্রেলিয়ার হাই কমিশনার জেরেমি ব্রুয়ার, সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত আব্দুল্লা আলী আহমেদ আল হামুদি বক্তব্য দেন।