বিতর্ক ছাপিয়ে ইফতারে জমজমাট সুলতান'স ডাইন

রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষ বলছে, তাদের খদ্দের আরও বেড়েছে। আর একজন খদ্দের বললেন, বাংলাদেশে কুকুরের মাংস দিয়ে কাচ্চি বানাবে, এটা তার বিশ্বাস হয় না।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 March 2023, 03:27 PM
Updated : 24 March 2023, 03:27 PM

ইফতারের তখনও আধাঘণ্টা বাকি, সুলতান’স ডাইনের ধানমন্ডি শাখায় এসে কিছুটা 'বিস্মিত' চার বন্ধু। তারা ভেবেই নিয়েছিলেন, সাম্প্রতিক বিতর্কের কারণে এ রেস্তোরাঁয় ভোক্তাদের আগ্রহে ভাটা পড়েছে; সে কারণে সেখানে বসে আরাম-আয়েশে ইফতার সারা যাবে। কিন্তু আধা ঘণ্টা আগেই যে ফাঁকা নেই কোনো টেবিল! 

ফিরে যাওয়ার সময় তাদের একজন আহমেদ ইমতিয়াজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বললেন, "ফিরে যাচ্ছি- মন তো খারাপই। কিন্তু ভালো লাগছে যে সামাজিক মাধ্যমের সেই আলোচনা দীর্ঘমেয়াদে কোনো প্রভাব ফেলেনি।"  

সুলতান'স ডাইনের এই শাখায় ১৭০টি আসন আছে জানিয়ে রেস্তোরাঁটির কর্মকর্তারা জানালেন, এই শাখায় শুক্রবার দুইশর বেশি ‘অতিথি’ ইফতার করতে এসেছেন। অনেকেই জায়গা না পেয়ে দাঁড়িয়ে হালকা কিছু খেয়েছেন, তারপর আসন খালি হলে বসে ইফতার সেরেছেন। আরেক দল ‘অতিথি’ জায়গা না পেয়ে ফিরে গেছেন। 

অপেক্ষমানদের একজন বেসরকারি চাকুরে মোবাশ্বের আনাম শোভন বললেন, "ওই আলোচনা যখন চলেছে, তখনও এসেছিলাম বন্ধুকে নিয়ে। সুলতানে নিয়মিত খাই। আমি কখনও খারাপ কিছু পাইনি। সেই প্রেক্ষিতেই ইফতার করতে আসা। 

“ফেইসবুকে নানাকিছু বলে। কেউ কেউ একটা রেপুটেড কোম্পানির নাম খারাপ করতেই পারে, তাই বলে সেসবে বিশ্বাস করার কোনো মানে হয় না।" 

সুলতান'স ডাইনের এবারের ইফতারে ভোজনরসিকদের জন্য রাখা হয়েছে দুই ধরনের প্ল্যাটার। তাদের ৭৯৯ টাকার প্ল্যাটারে রয়েছে সুলতান'স ডাইনের কাচ্চি, বিফ রেজালা, চিকেন রোস্ট, জালি কাবাব, জর্দা, ফিরনি। এর সাথে কমপ্লিমেন্টারি হিসেবে থাকছে শরবত, বোরহানি, আপেল, খেজুর ও সালাদ। আর ৬৪৯ টাকার প্ল্যাটারে কাচ্চির পরিবর্তে তারা রেখেছে পোলাও। বাকি আইটেম থাকছে একই।  

এবারের রমজানের ইফতারে বিশেষ আয়োজন হিসেবে তারা রেখেছে সুলতান স্পেশাল হালিম। ৭০০, ৪০০ ও ৩০০ টাকায় পরিমাণভেদে মিলবে এই হালিম।  

ইফতার করতে আসা চাকরিজীবী মো. আসিফ বলেন, "সুলতানের ওপর বিশ্বাস আছে। হালাল খাবারই দেয়৷ রিউমারে বিশ্বাস করে লাভ নেই।" 

বন্ধুদের নিয়ে ইফতার করতে আসা ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) শিক্ষার্থী সামিন ইরাম খান বলেন, "আমার এক বন্ধু দেশের বাইরে থেকে এসেছে। তাকেসহ আমরা চারজন সব কন্সপিরেসি শোনা সত্ত্বেও প্রথম রোজায় সুলতানস ডাইনকে বেছে নিয়েছি। 

“কারণ নিজের তো একটা জাজমেন্ট আছে তাই না। বাংলাদেশের মত একটা দেশে কুকুরের মাংস দিয়ে কাচ্চি বানাবে এটা একটা অবিশ্বাস্য জিনিস।" 

ধানমণ্ডির এই শাখার ব্যবস্থাপক মো. জিয়াউর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "যে রিউমার ছিল সেটা উপেক্ষা করে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। মাশাল্লাহ আমাদের গেস্ট আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। খাবার কম হয়ে যাচ্ছে, সবাইকে খাবার দিতে পারছি না। 

“এ বছর আমরা কাচ্চির সাথে হালিমের আয়োজন করেছি। অনেকে অনেক কথা বলবে, আপনারা এসব বিশ্বাস করবেন না। আমরা হালাল খাবার ও খাসি দিয়ে যাচ্ছি, সামনেও দেব।"  

সুলতান'স ডাইন ধানমন্ডি শাখার আরেক ব্যবস্থাপক মো. মহসিন বলেন, "আমরা সব ব্রাঞ্চ থেকেই আপডেট নিচ্ছি। প্রথম রমজানে সবাই পরিবারের সাথে ইফতার করে, তবু আমরা দারুণ সাড়া পেয়েছি। সব ব্রাঞ্চেই আশানুরূপ গেস্ট ছিল। আশা করছি সব ছাপিয়ে সামনেও গেস্টরা আমাদের বেছে নেবেন।" 

২০১৭ সালে সুলতান’স ডাইন কাচ্চি বিরিয়ানি বিক্রি শুরু করে। এর আগে তারা পিৎজা, পাস্তা জাতীয় খাবার বিক্রির দোকান খোলে। কিন্তু সেই উদ্যোগ সফল না হওয়ায় পরে বিয়ে বাড়িতে বিরিয়ানি সরবরাহ শুরু করে। 

পরে ধানমণ্ডিতে দোকান খুলে শুরু হয় কাচ্চি বিরিয়ানি এবং এ জাতীয় খাবার বিক্রি। জনপ্রিয় এই খাবার তৈরি করতে নিজস্ব একটি রেসিপিও আছে তাদের। 

জনপ্রিয়তা পাওয়ার পর ঢাকার গুলশান, বেইলি রোডসহ একাধিক এলাকায় শাখা খোলে সুলতান’স ডাইন। ঢাকার বাইরে পাশাপাশি চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জেও আছে তাদের শাখা। 

মার্চের মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরুতে অনলাইনে অর্ডার করে এক গ্রাহক মাংসের হাড় দেখে সন্দেহ হওয়ার কথা জানান। তাদের কল পেয়ে ছুটে যান সুলতান’স এর কর্মকর্তারা। 

সেই ভোক্তার সন্দেহ ছিল, এটি খাসির মাংস নয়। অন্য প্রাণীর। পরে ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়ে যে, সুলতান’স কুকুর বেড়ালের মাংস ব্যবহার করে। 

ওই অভিযোগ উঠার পর ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ সংরক্ষণ অধিদপ্তর গত ৯ মার্চ সুলতান’স এর গুলশান শাখায় অভিযান চালায়। সেখানে গিয়ে ২৫ কেজির মাংসের গড়মিল পাওয়া যায়।

পরে ১৩ মার্চ জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মণ্ডল স্বাক্ষরিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, “খাসি বাদে অন্য প্রাণীর মাংসের ব্যবহার সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান সুলতান’স ডাইনকে অন্য প্রাণীর মাংস ব্যবহারে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া যেতে পারে।” 

তিনি জানান, যে মোবাইল ফোন নম্বর থেকে ফোন করে সুলতান’স ডাইনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছিল, সেই নম্বরটি পরে বন্ধ পেয়েছেন তারা।

Also Read: সুলতানসে ‘অন্য প্রাণীর’ মাংস ব্যবহারের প্রমাণ মেলেনি: ভোক্তা অধিদপ্তর