“অন্য বছরের তুলনায় এবার বিক্রি কম। দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এর একটা কারণ হতে পারে।”
Published : 29 Mar 2025, 09:02 AM
প্রতিবছর ঈদে নিজের কেনাকাটা অনলাইনে সারেন ফার্মগেটের বাসিন্দা নুজাইফা ইসলাম। তবে এবার অনলাইন পেইজগুলো থেকে তিনি কিছুই কেনেননি।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকের সঙ্গে আলাপচারিতায় এ শিক্ষার্থী বলেন, এবার বাড়ি থেকে কেনাকাটার টাকা আসতে আসতে অনলাইন পেইজগুলো বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে শেষ সময়ে তাকে বিপণি বিতানগুলোয় দৌড়াতে হচ্ছে।
“গতবারও দুটো ড্রেস কিনেছিলাম অনলাইনে। ভালোই পেয়েছি, তাই অনলাইনে একটা আস্থা তৈরি হয়েছে। মার্কেটে ধাক্কাধাক্কিতে বিরক্ত লাগে, একটুতেই অস্থির লাগে। এবার না গিয়ে উপায় নাই। বাসায় ক্রাইসিস ছিল, আগে টাকা পাঠাতে পারেনি।”
অনলাইনে ঈদের পোশাক বিক্রেতারা বলছেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতির কারণে এবার বিপণি বিতানগুলোর মত তারাও ক্রেতার অভাবে ভুগছেন।
অনলাইন থেকে এবার ঈদে কুর্তি কিনেছেন মহাখালীর বাসিন্দা মেরিনা আক্তার।
তিনি বলেন, “ইউনিক ডিজাইন পাওয়া যায়, তাই অনলাইনেই কেনাকাটা করি। তবে জিনিসের দাম, বাসায় টাকার শঙ্কট- সব মিলিয়ে তেমন কেনাকাটা হয়নি।”
অনলাইনে কুর্তি, কামিজ, শাড়ি, শার্ট, টি-শার্টি বিক্রি করে ‘হরিতকী’।
এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা বলরাম পাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঈদ এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতা কিছুটা বাড়লেও গতবারের চেয়ে প্রায় ১০ শতাংশ কম।
“গতবারের চেয়ে এবার ঈদে বিক্রিবাট্টা কমই মনে হয় সবার। দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতেই মানুষ কেনাকাটা কম করতেছে। অনলাইন, অফলাইন সব জায়গাতেই বিক্রিতে কিছুটা ভাটা পড়েছে।”
‘রঙিন সুতো’ পেইজের মাধ্যমে বিক্রি হয় শাড়ি, শার্ট ও প্যান্ট। এবার কম বিক্রির তথ্য দিয়েছেন তারাও।
পেইজটির স্বত্বাধিকারী নাহার জিমি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মানুষ অনলাইনভিত্তিক হয়ে যাচ্ছে। যানজট কিংবা ধাক্কাধাক্কি করে মার্কেটে যেতে চাচ্ছেন না। ঘরে বসে অর্ডার করতে পারছেন, প্রতারণা জিনিসটা কমে গেছে, তাই আস্থা তৈরি হয়েছে।
“তবে যাদের হাতে টাকা ছিল, তাদের অনেকের আয় কমে গেছে। আবার দেশের পরিস্থিতির কারণে মানুষও হিসাব করে কেনাকাটা করছে। এসব কারণে বিক্রি তেমন হচ্ছে না।”
অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ২০ থেকে ৩০ শতাংশ ক্রেতা হারানোর কথা বলছেন ‘লং’ এর স্বত্বাধিকারী ও ডিজাইনার তাজিয়া তন্বী।
তারা মেয়েদের টপস, ওয়ান পিস ও থ্রি পিস বিক্রি করেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তন্বী বলেন, “অন্য বছরের তুলনায় এবার বিক্রি কম। সেটা মোটামুটি সব পর্যায়ের উদ্যোক্তারাই ফেইস করছেন কম-বেশি। দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এর একটা কারণ হতে পারে।”
ক্রেতার আস্থা কতটুকু বেড়েছে?
দিন দিন অনলাইন কেনাকাটায় আস্থা বাড়ার কথা বলছেন মিরপুরের বাসিন্দা সামিয়া রহমান। নিজের জন্য তিনি এবার একটি থ্রি পিস কিনেছেন।
সামিয়া বলেন, রোজা আর গরমে মার্কেটে ঘোরাঘুরির মত পরিস্থিতি না থাকায় অনলাইনেই ভরসা রাখছেন তিনি।
“সরাসরি কিনতে গেলে মার্কেটে অনেক দামাদামি করতে হয়। ঈদে কাস্টমারদের ভিড় থাকায় বিক্রেতারা একটু বেশি ভাব নিয়ে থাকেন। পোশাকটা অনেক সময় ভালো করে দেখার সুযোগও হয় না। আবার না কিনে চলে এলে তর্কাতর্কি করে।
“অনলাইনে এখন লাইভে নানা ধরনের পোশাক দেখাচ্ছে, সেসব পোশাক থেকে সহজে একটা পোশাক বাছাই করতে পারছি। ফলে সরাসরি দেখে কেনার যে ব্যাপারটা সেটাও এখন অনলাইনে হয়ে যাচ্ছে। আর কেনাকাটা করতে করতে এখন কিছু ভালো শপের ওপর আস্থা তৈরি হয়েছে।”
বনশ্রীর বাসিন্দা সুমাইয়া আক্তার অনলাইন থেকে এবার থ্রি পিস ও শাড়ি কিনেছেন।
তিনি বলেন, ভালো পণ্য পাওয়ায় অনলাইন কেনাকাটায় তার আস্থা বেড়েছে।
“যতবার কিনেছি কখনো সমস্যা হয়নি। কিছু ফ্রড পেইজ আছে; দেখে কিনতে হয়; তাহলে সমস্যা হয় না। রিভিউ ভালো যাদের, তাদের পেইজ থেকে কেনাকাটা করা হয়।”
সাভারের বাসিন্দা রিদওয়ান আহমেদ সময় বাঁচাতে বরাবরই অনলাইনে কেনাকাটা করেন। এবারও বেশির ভাগ কেনাকাটা তার অনলাইনেই হয়েছে।
কেনাকাটার জন্য ৭০ থেকে ১০০ শতাংশ ভালো রিভিউ রয়েছে এমন পেইজ বেছে নেন তিনি।
রিদওয়ান বলেন, “রিভিউ ও রিসার্চ করে কিনলে পুরোপুরি ভরসা করা যায়। সরাসরির চেয়ে অনলাইনে বেশি কালেকশন পাই। আর রিভিউ দেখে কেনা কোনো কাপড় খারাপ পাইনি।
তিনি বলেন, “সাভারে অনেক কিছু পাওয়া গেলেও আপডেটেড জিনিস নিতে ঢাকায় যাওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। জ্যাম আর গরমে যাওয়াটা আমার জন্য কষ্টের।
“তাই শ্রম আর সময় দুটোই বাঁচাতে অনলাইনকেই প্রেফার করি।”