আহসান এইচ মনসুর বলেন, “ডেপুটি গভর্নর নির্বাচনের জন্য আমি সার্চ কমিটিতে নাই। এখন দেখা যাক, অন্তর্বর্তী সরকার কী সিদ্ধান্ত নেয়।”
Published : 12 Aug 2024, 08:57 PM
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর খুঁজতে সার্চ কমিটি পুনর্গঠন করা হয়েছে, যেখানে বাদ পড়েছেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর।
তার পরিবর্তে নেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মোস্তফা কামাল মুজেরিকে।
সোমবার এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।
উপসচিব আফসানা বিলকিসের সই এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, পুনর্গঠিত কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে সাবেক মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মুহাম্মদ মুসলিম চৌধুরীকে। সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে মোস্তফা কামাল মুজেরি এবং সাবেক ডেপুটি গভর্নর নজরুল হুদাকে।
কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্মসচিব বদরে মুনির ফেরদৌস।
ক্ষমতার পালাবদলের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আগের সরকারের সময়ে নিয়োগ পাওয়া ডেপুটি গভর্নরদের সরিয়ে দেওয়ার দাবির মধ্যে রোববার নতুন সার্চ কমিটি গঠন করে অর্থ মন্ত্রণালয়।
সার্চ কমিটিতে আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে সাবেক অর্থ সচিব এবং সাবেক মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মুহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী ও সাবেক ডেপুটি গভর্নর নজরুল হুদাকে রাখা হয়েছিল।
আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রোববার চার সদস্যের একটি সার্চ কমিটি গঠন করা হয়। সেখানে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুরকে রাখা হয়েছিল। কিন্তু সোমবার সেই কমিটিতে আহসান এইচ মনসুরের পরিবর্তে ড. মোস্তফা কামাল মুজেরিকে রাখা হয়েছে।”
রাতে আহসান এইচ মনসুর বলেন, “গতকাল সিদ্ধান্ত হয়েছিল কমিটিতে আমি থাকব। তবে আজকে সেই সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আনা হয়েছে। তাই ডেপুটি গভর্নর নির্বাচনের জন্য আমি সার্চ কমিটিতে নাই। এখন দেখা যাক, অন্তরবর্তী সরকার কী সিদ্ধন্ত নেয়।”
এদিকে গভর্নরের পর সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের দুই ডেপুটি গভর্নরসহ চার শীর্ষ কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন।
এরা হলেন– ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান ও খুরশীদ আলম, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইনটিলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান মাসুদ বিশ্বাস ও পলিসি উপদেষ্টা আবু ফরাহ নাসের।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একদল আন্দোলনকারী সোমবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এসে সময় বেঁধে দেওয়ার পর তারা পদত্যাগ করেন বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান।
পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডেপুটি গভর্নর খুরশীদ আলম।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি পদত্যাগ করেছি। সরকার থেকে আমাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা তাদের অন্যতম সমন্বয়ক মহিউদ্দিন রনির নেতৃত্বে দুপুর সাড়ে ১২ দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে উপস্থিত হন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের পদত্যাগের জন্য তারা দুপুর ১টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন।
পরে আন্দোলনকারীদের ডেকে নিয়ে তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা। সেখানে তাদের চারজনের পদত্যাগের কথা জানানো হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকে ডেপুটি গভর্নরের চারটি পদেই নিয়োগ দেয় সরকার।
সবশেষ গত ২৮ ফেব্রুয়ারি নির্বাহী পরিচালক মো. খুরশীদ আলম এবং প্রধান অর্থনীতিবিদ মো. হাবিবুর রহমান ডেপুটি গভর্নরের দায়িত্ব পান।
এর আগে ২০১৯ সালেও একবার সার্চ কমিটি করা হয়েছিল। ডেপুটি গভর্নর নিয়োগের জন্য পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান কাজী খলীকুজ্জমানকে প্রধান করে সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছিল।
ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরদিনই অস্থিরতা শুরু হয় আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকে। গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার এবং চার ডেপুটি গভর্নরের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেন কর্মকর্তারা।
চার ডেপুটি গভর্নরের পাশাপাশি বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান এবং পলিসি অ্যাডভাইজরের পদত্যাগের দাবি তোলেন বিক্ষোভে অংশ নেওয়া কর্মকর্তারা।
এরপর শুক্রবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার অর্থ মন্ত্রণালয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন।
পরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক অফিস আদেশে বলা হয়, নতুন গভর্নর যোগদানের আগ পর্যন্ত ‘দৈনিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার স্বার্থে’ বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নররা নিজ নিজ ক্ষেত্রে তাদের দৈনন্দিন কার্যক্রম সম্পাদন করবেন।