“চায়নিজ জিনিস বিক্রি হয় বেশি এখন। আমাদের বিক্রি কী হবে! বেচাবিক্রি নাই৷ ওই জিনিসে পুরা মার্কেটে ভরা৷”
Published : 16 Jun 2024, 01:10 PM
কোরবানির ঈদের আগে আগে কামারদের ব্যস্ততা বাড়লেও তারা প্রত্যাশিত অর্ডার পাচ্ছেন না বলে তথ্য মিলেছে। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, আমদানি করা সরঞ্জামে মার্কেট ছেয়ে আছে, তাই কাদের কদর কমেছে।
মিরপুর ১১ নম্বরের ইরানি ক্যাম্পের লোটাপট্টিতে মাংস কাটার ছুরি, চাপাতি ও অন্যান্য সরঞ্জাম তৈরি ও বিক্রির দোকান আছে পাঁচটি।
ঈদের দুদিন আগে শনিবার ঘুরে দেখা গেল, কামাররা ধারালো নতুন অস্ত্র তৈরির পাশাপাশি পুরনোগুলো কয়লার আগুনে গরম করে পিটিয়ে ব্যবহার উপযোগী করছেন।
দুদিন আগেও দোকানের পাশ দিয়ে কেউ গেলেই ‘কী লাগবে’ বলে মনোযোগ আকর্ষণ করতেন শান্ত সরকার; তখন সাড়া না মিললেও এখন ক্রেতারাই আসছেন তার কাছে।
শান্ত বলেন, “আজকে থেকে ভালো ভিড় হচ্ছে৷ এখন গরু কেনা হইছে, তাই কিনতে আসছে। গরু না কিনে এগুলা কিনতে আসে না কেউ। আর ঢাকায় তো রাখার জায়গা কম ঢাকায় কম তাই ঈদের দুই-তিন দিন আগে ছাড়া এ মার্কেট জমে না।”
পাশের দোকানের বাবু কামার বলেন, নতুন জিনিস বিক্রির পরিমাণ কমে আসছে; পুরোনো দা-বটি ঠিক করেই সময় কাটছে তাদের।
“চায়না জিনিস বিক্রি হয় বেশি এখন। আমাদের বিক্রি কী হবে! বেচাবিক্রি নাই৷ ওই জিনিসে পুরা মার্কেটে ভরা৷”
ওজন আর মানের উপর নির্ভর করে বাজারটিতে ছুরি ২০০ থেকে ৫০০ টাকা, চাপাতি ৬০০ থেকে ৯০০ টাকা, বটি ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা, হাত দা ৪০০ টাকা এবং জবাই করার ছুরি ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বিক্রেতারা জানিয়েছেন, ক্রেতা চাইলে বসে থেকেও বানিয়ে নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে দাম কিছুটা বেশি পড়বে৷
শেওড়াপাড়া থেকে ছুরি, চাপাটি কিনতে এসেছিলেন আফজাল হোসেন। তিনি তিনটি চাপাটি ৫৫০ টাকা কেজি দামে কিনেছেন। আর ছুরি কিনেছেন ২০০ টাকায়।
তিনি বলেন, “দাম কিছুটা বাড়ছে এবার, সব কিছুর দামই তো বেশি। অন্য জায়গায় ৭০০, সাড়ে সাতশর কমে চাপাটি কেনা যায় না। এখানে কিছুটা কমে পাওয়া যায়।”
নতুন ছুড়িতে শান দিচ্ছিলেন মো. জহির। তিনি বলেন, তাদের কাজের চাপ থাকবে দুইদিন। তবে প্রত্যাশিত বিক্রি নেই বলেই জানালেন তিনি।
“এখন আর আগের মতো আমাদের সুদিন নেই৷ গতবারের চেয়ে এবার কিছুটা কম বিক্রি হচ্ছে।
“সব অনলাইনে জিনিস চলে গেছে৷ আগে তো মানুষ আমাদের এখানে আসত, এসে কিনত। এখন অনলাইনে অর্ডার দেয়, বাসায় জিনিস চলে যায়।”
কারওয়ান বাজারে কামারপট্টিতে ছুরি-চাপাতির অর্ধশতাধিক দোকান রয়েছে। প্রতিটি দোকানেই ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেল, কেউ আবার পুরনোগুলো ধার করিয়ে নিচ্ছেন।
কল্যাণপুর থেকে আসা নাঈম ইসলাম ছুরি, চাপাতির গুণাগুন যাচাই বাছাই করছিলেন জেরিন হার্ডওয়্যারে।
তিনি বলেন, “একটা কিনলেই অনেক বছর চলে যায়। ইউটিউবে উনার ভিডিও দেখে এখানে চলে আসলাম। উনার উপর নির্ভর করছে ভালোটা পাব নাকি খারাপটা নিয়ে বাড়ি যাব।”
সাভার থেকে এসেছিলেন মনিরা আক্তার। তিনি বলেন, “কারওয়ান বাজারে গরুর মাংস কাটার সরঞ্জাম বেশি বিক্রি হওয়ার খবর পেয়ে এখানে এসেছেন তিনি।
“দেখতেছি ঘুরে ঘুরে, যেখানে কম পাব সেখান থেকেই কিনব। দাম কম না বেশি বুঝতেছি না, কারণ আমি আগে কখনও কিনিনি।”
কারওয়ান বাজারে পাঁকা লোহার চাপাতি ৮০০ টাকা কেজি, কাঁচা লোহার চাপাতি ৬০০ টাকা কেজি, জবাই ছুরি ১ হাজার টাকা, ছুরি ২০০ টাকা এবং কুড়াল ৮০০ থেকে এক হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মায়ের দোয়া নোয়াখালী হার্ডওয়্যারের স্বত্বাধিকারী আনোয়ার হোসেন বলেন, শুক্রবারের পর থেকে বেড়েছে বেচাবিক্রি।
“গরু কেনা শেষ হওয়ার পর মানুষ ছুড়ি, চাপাতি কিনতে আসে। আরও ভিড় বাড়তে পারে সামনে। কারণ, ঢাকা শহরে গরু কিনে মানুষ চান রাইতের একদিন আগে।”
দোকানটিতে পুরনো চাপাতি শান দিতে এসেছিলেন নাখালপাড়ার বাসিন্দা রুবেল হোসেন।
তিনি বলেন, “একবার কিনলে সেগুলো অনেক বছর যায়। তবে ধার দিতে হয় কাজ করার আগে। এ কারণে ধার করাতে নিয়ে আসলাম।”