ডলার সংকটে বীজ আমদানি সম্ভব হবে না: বিএসএ

তিন দিনের বীজ মেলা বসছে আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Feb 2023, 12:42 PM
Updated : 9 Feb 2023, 12:42 PM

প্রয়োজনীয় ডলার না মেলায় সামনের দিনগুলোতে ব্যবসায়ীদের তরফ থেকে বীজ আমদানি করা সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সিড অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসএ) উপদেষ্টা আনোয়ার ফারুক।

তিনি বলেছেন, “রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধের জন্য অন্যদের মত ডলার ক্রাইসিস আমরাও ফেইস করছি। এর জন্য আমরা সামনে বীজ আমদানি করতে পারব না। সেজন্য আমাদের পক্ষ থেকে আমরা সরকারকে বারবার বলছি, আমরা যেন খাবারটাকে প্রাধান্য দিই।”

আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে অনুষ্ঠেয় তিন দিনের ‘বাংলাদেশ সিড কংগ্রেস’ সামনে রেখে বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।

আনোয়ার ফারুক বলেন, “আমরা যখন হাইব্রিড বীজ উৎপাদন, আমদানি শুরু করি; তখন অনেক সমালোচনা ছিল। কিন্তু আজ আমরা নিজেদের প্রয়োজনে হাইব্রিড বীজ আনছি। তখন সবাই বলত, প্রাইভেট সেক্টরের কারণে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, এটা ঠিক না। প্রাইভেট সেক্টর না থাকলে আজ সবজির ফলন এত ভালো হত না। সবজির বীজের ৯০ শতাংশ সরবরাহ করছে প্রাইভেট সেক্টর।”

মানসম্মত বীজ ছাড়া যে কৃষিতে ভালো ফলন সম্ভব নয়, তা মনে করিয়ে দিয়ে সাবেক এই কৃষি সচিব বলেন, “একটি জমিতে ফসল বাড়বে কি কমবে, তার মূল বিষয় হল কোয়ালিটি বীজ। বীজ উন্নত না করতে পারলে ফলনবৃদ্ধির কোনো সম্ভাবনা থাকবে না। তবে বীজ ব্যবসাকে শক্তিশালী করার জন্য সিড সার্টিফেকেশন এজেন্সিকে আরও সচেতন হতে হবে।”

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কৃষির যে ক্ষতি হচ্ছে, তা পুষিয়ে নিতে কৃষকদের ‘জ্ঞানমান’ করা দরকার বলে মনে করেন সিড কংগ্রেস সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক আনোয়ার ফারুক।

তিনি বলেন, “দেশের সামগ্রিক কৃষি যতটা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তার পেছনে জলবায়ু পরিবর্তন একটা প্রধান কারণ। তবে দেশের কৃষকদের জ্ঞানমান যদি একটু বাড়ানো যায়, তবে তা পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব।

“কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পেছনে অনেক কারণ আছে। প্রধান কারণ ক্লাইমেট চেঞ্জ। কিন্তু সর্বপ্রথম যদি আমরা আমাদের চাষীদেরকে স্মার্ট করতে পারি, তাহলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে সহজেই।”

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কৃষকের হালনাগাদ জ্ঞানের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন বিএসএর সিনিয়র সহসভাপতি ড. আলী আফজাল।

তিনি বলেন, “বলা হয়- ফলন বাড়ছে না সেভাবে। কিন্তু কৃষকের জ্ঞানমানকে যদি একটু আপডেট করা যায়, তাহলে বর্তমান প্রযুক্তি দিয়েই ফলনটা বাড়ানো যাবে।” 

ড. আফজাল জানান, ২০০৯ সালে দেশের মোট বীজ চাহিদার মাত্র ২০ শতাংশ ছিল মানসম্পন্ন বীজ, বর্তমানে এ হার ৩৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। তবে আলু, সবজি, ভুট্টা, ধান, পাট ইত্যাদি বীজের ক্ষেত্রে এ হার ৫৯ দশক ২ শতাংশ। 

দেশে এখন বছরে সাড়ে ১২ লাখ টন বীজের প্রয়োজন জানিয়ে এই সরবরাহকারী বলেন, মোট বীজের ৫৩ শতাংশই সরবরাহ করে বেসরকারি খাত। ধান বীজের ৪৪ শতাংশ, হাইব্রিড ধানের ৯৭ শতাংশ, ভুট্টার ৯৯ শতাংশ, সবজি বীজের ৮৬ শতাংশ, আলু বীজের ৭৪ শতাংশ, পাট বীজের ৮৩ শতাংশ বীজ আসে বেসরকারি খাত থেকে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আগামী ১১ থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি ‘বাংলাদেশ সিড কংগ্রেস ২০২৩’ হবে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় বাংলাদেশ সিড অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত এ মেলায় দেশি-বিদেশি বিজ্ঞানী, সম্প্রসারণ কর্মী, বীজ ডিলার, বীজ ব্যবসায়ী, বীজ শিল্প প্রতিষ্ঠান, কৃষিবিদ, ব্যাংকার, শিক্ষক ও কৃষক প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন।

প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলা এ মেলায় জনা পঞ্চাশেক বিদেশি প্রতিনিধি থাকবেন।মেলায় মোট ১৩টি প্যাভিলিয়ন ও ৬০টি স্টল থাকবে, যার মধ্যে ১০টি বিদেশি স্টল থাকবে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন সব প্রতিষ্ঠানের স্টল মেলায় থাকছে বলে সম্মেলনে জানানো হয়।

আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টায় মেলা উদ্বোধন করবেন কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক। কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তার, ইন্টারন্যাশনাল সিড ফেডারেশনের (আইএসএফ) সেক্রেটারি জেনারেল মাইকেল কেলার, এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিক সিড অ্যাসোসিয়েশনের (এপিএসএ) সভাপতি ড. মানিশ প্যাটেল ও জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) বাংলাদেশ প্রতিনিধি রবার্ট ডি সিমসনের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।

সম্মেলনে জানানো হয়, তিন দিনের মেলায় মোট পাঁচটি কারিগরি সেশন থাকবে, যেখানে দেশি-বিদেশি বিজ্ঞানী ও বীজ গবেষকরা ১৫টি কারিগটি পেপার উপস্থাপন করবেন।

মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম উপস্থিত থাকবেন। বাংলাদেশের বীজ শিল্প বিকাশে অবদান রাখায় ২০ জন বীজ ব্যবসায়ীকে মরণোত্তর সম্মাননা দেওয়া হবে সেদিন।

অন্যদের মধ্যে বিএসএ সভাপতি এসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট এম আনিস উদ দৌলা, সংগঠনের প্রচার সম্পাদক ব্র্যাক সিডের প্রধান মো. আজিজুল হক, বিএসএ সদস্য ইস্পাহানি অ্যাগ্রো লিমিটেডের পরিচালক ফৌজিয়া ইয়াসমিন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।