বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে বিদ্যুৎ বিভাগের তোলা এ সংক্রান্ত পৃথক পাঁচটি প্রস্তাবে অনুমোদন দেয়া হয় বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নুরুল করিম জানিয়েছেন।
পৃথক পাঁচ কোম্পানির মেয়াদ বৃদ্ধি হওয়া পাঁচটি ভাড়াভিত্তিক কেন্দ্রের মধ্যে রয়েছে- দেশ এনার্জির ১০০ মেগাওয়াট, এনার্জিস পাওয়ার করপোরেশনের ৫৫ মেগাওয়াট, প্রিসিশন এনার্চির ৫৫ মেগাওয়াট, কোয়ান্টাম পাওয়ার সিস্টেমের ১১০ মেগাওয়াট এবং আরজেড পাওয়ারের ৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
নুরুল করিম জানান, ক্রয় কমিটির বৈঠকে পাঁচটি কেন্দ্র থেকে সরকারের বিদ্যুৎ কেনার দামও পুনঃনির্ধারণ হয়েছে।
প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের নতুন দর দেশ এনার্জি ১৯ টাকা ৫৩ পয়সা (আগে ছিল ২২ টাকার মতো), এনার্জিস ১৫ টাকা ৮৩ পয়সা ((আগে ছিল ১৮ টাকা), প্রিসিসন এনার্জি ২ টাকা ৯১ পয়সা (আগে ছিল ৩ টাকা ৭১ পয়সা), কোয়ান্টাম পাওয়ার ১৬ টাকা ((আগে ছিল ১৮ টাকা) এবং আরজেড পাওয়ার ১৯ টাকা ৫৫ পয়সা (আগে ছিল ২২ টাকার মতো)।
নতুন করে মেয়াদ বাড়ানো দেশ এনার্জি, এনার্জিস, কোয়ান্টাম পাওয়ার সিস্টেম ও আরজেড পাওয়ার সময়মতো উৎপাদন শুরু করতে না পারায় এ তিনটি কোম্পানিকেই জরিমানা করেছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড।
পোশাক ব্যবসায়ী আনিসুল হকের মালিকানাধীন ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দেশ এনার্জি উৎপাদনে আসার আগে থেকেই নানা ধরনের বিতর্কে জড়িয়েছে।
উৎপাদনে আসতে দেরি, কেন্দ্র বন্ধ থাকা এবং অতিরিক্ত তেল ব্যবহারের কারণে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এ পর্যন্ত ১৫ মিলিয়ন ডলার জরিমানা করেছে দেশ এনার্জিকে, যা নিয়ে গণমাধ্যমে খবরও প্রকাশিত হয়েছে।
অবশ্য আদালতে গিয়ে পিডিবির ওই জরিমানার ওপর স্থগিতাদেশ পেয়েছে দেশ এনার্জি।
একই ঘটনা ঘটেছে আরেক ভাড়াভিত্তিক কেন্দ্র ৫৫ মেগাওয়াটের এনার্জিসের ক্ষেত্রেও, যেটির মালিক হিসেবে রয়েছেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও জাতীয় পার্টি নেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।
বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় থেকে দেশে ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অনমুতি দেয়া শুরু হয়।
বর্তমানে দেশে ৩২টি ভাড়া ও দ্রুতভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে, যেগুলোর মোট উৎপাদন ক্ষমতা ২ হাজার ১৬৯ মেগাওয়াট।
পিডিবির হিসাবে, বর্তমানে দেশের মোট বিদ্যুতের এক তৃতীয়াংশ ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্রগুলো থেকে কেনা হচ্ছে। এর জন্য যে অর্ধ ব্যয় হচ্ছে তা বিদ্যুত কেনায় মোট ব্যয়ের দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি।
২০১১-১২ অর্থবছরে ৬ হাজার কোটিরও বেশি টাকা বিদ্যুত খাতে ভর্তুকি দিয়েছে সরকার। ভাড়াভিত্তিক কেন্দ্রের জন্যই বিশাল এ অংকের ভর্তুকি লাগছে বলে সমালোচনাও রয়েছে।
সমালোচনার জবাবে সরকারের বক্তব্য,ক্রমবর্ধমান চাহিদার জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে এর বিকল্প ছিল না।
সিদ্ধিরগঞ্জে স্থাপিত দেশ এনার্জির কেন্দ্র থেকে ১৯ টাকা ৫৭ পয়সায় প্রতি ইউনিট বিদ্যুত কেনার জন্য ২০১১ সালে চুক্তি করে পিডিবি। তিন বছরের ওই চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ফেব্রুয়ারিতে।
পিডিবির উৎপাদন প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, কারিগরি ত্রুটির কারণে দেশ এনার্জির একটি অংশ প্রায়ই বন্ধ থাকছে।
২০১০ সালের ১ নভেম্বর উৎপাদনের আসার কথা থাকলেও প্রতিষ্ঠানটির বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে আসা শুরু করে ২০১১ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি। এই দেরির জন্যও প্রতিষ্ঠানটিকে জরিমানা করেছিল পিডিবি।
চাহিদা অনুযায়ী জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে না পারার অভিযোগও রয়েছে দেশ এনার্জির বিরুদ্ধে।
অথচ আগের চুক্তি অনুযায়ী দেশ এনার্জিকে প্রতিমাসে প্রায় ১৫ কোটি টাকা (১ দশমিক ৯২ মিলিয়ন ডলার) করে শোধ করে যাচ্ছে পিডিবি।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আর্ষণ করলে দেশ এনার্জির চেয়ারম্যান আনিসুল হক বলেন, “আমাদের ক্যাপাসিটি আছে ৮৭%। এর মধ্যে কখনো কখনো মেনটেইনেন্সের সমস্যা বা কারিগরি ত্রুটির কারণে প্ল্যান্ট বন্ধ রাখতে হয়। তারপরও পিডিবি যা চাইছে, তা আমরা দিতে পারছি।”
কিছুদিন আগে প্ল্যান্টে বড় ধরনের জটিলতা দেখা দিলেও তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে বলে দাবি করেন এফবিসিসিআইয়ের এই সাবেক সভাপতি।
পিডিবির জরিমানা প্রসঙ্গে আনিসুল হক বলেন, “তেল ব্যবহারের বিষয়ে একটি কমিটি হয়েছে। তারাই ঠিক করবে, কত তেল লাগবে। ওই কমিটির প্রতিবেদন পেলে পিডিবির সঙ্গে বসে আমরা সুরাহা করব, কিভাবে জরিমানা শোধ করা হবে।”