পুঁজিবাজার শান্ত করতে সক্রিয় সরকার

একদিনের লেনদেনে সূচকের রেকর্ড পতনের পর অস্থিতিশীল পুঁজিবাজারকে শান্ত করার চেষ্টা হিসেবে 'পুরস্কার-তিরষ্কার কৌশল' নিয়েছে সরকার।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Jan 2011, 02:05 PM
Updated : 9 Jan 2011, 02:05 PM
ঢাকা, জানুয়ারি ০৯ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- একদিনের লেনদেনে সূচকের রেকর্ড পতনের পর অস্থিতিশীল পুঁজিবাজারকে শান্ত করার চেষ্টা হিসেবে 'পুরস্কার-তিরষ্কার কৌশল' নিয়েছে সরকার।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ঘোষণা দিয়েছেন সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের এক হাজার সাতশ কোটি টাকা মূল্যমানের আইপিও (ইনিশিয়াল পাবলিক শেয়ার) 'খুব শিগগিরই' বাজারে ছাড়া হবে।
অন্যদিকে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিয অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যক্তিঋণের সীমা তুলে নিয়েছে। এই সীমা ছিলো ১০ কোটি টাকা।
বিও অ্যাকাউন্টধারীদের ঋণ নেয়ার সময়সীমা কমানোরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে এসইসি। বিও অ্যাকাউন্ট খোলার পর ৩০ দিনের বদলে ১৫ দিনে ঋণ নেওয়া যাবে।
রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী জানান, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের রক্ষায় তার ক্ষমতা অনুযায়ী সবই করবেন। অন্যদিকে শেয়ায়বাজারকে চাঙ্গা করতে এদিন সকালেই একাধিক সিদ্ধান্ত নেয় এসইসি।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, "বাজার যখন চাঙ্গা থাকে তখন কেউ মিষ্টি বিতরণ করে না। কিন্তু একটু নামলেই রাস্তায় বিক্ষোভ শুরু হয়।"
"সরকার এটা মেনে নেবে না।"
রোববারের সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর জিয়াউল হাসান সিদ্দিক ও এসইসি চেয়ারম্যান জিয়াউল হক খন্দকারও ছিলেন।
এদিন সাধারণ সূচকের রেকর্ড ৬০০ পয়েন্ট পতন হয় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, "সূচক অস্বাভাবিক বেড়ে গিয়েছিলো। ৮০০০ পয়েন্ট থেকে ২০০০ পয়েন্টে নেমে একে স্বাভাবিক হতে হবে।
"বাজার অস্বাভাবিক হয়ে উঠেছিলো। এখন এটি সংশোধনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।"
"কেউ কেউ মাছ শিকারের চেষ্টা করছে [ঘোলা পানিতে]। কেউ কেউ তাদের স্বার্থে বাজারকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে," বলেন মুহিত।
তিনি বিনিয়োগকারীদের সাবধানে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরামর্শ দেন।
তারল্যে কোনো সংকট নেই
মশিউর রহমান বলেন, "শেয়ারবাজারের বৃদ্ধি আমাদের জাতীয় বৃদ্ধির হিসেবের সঙ্গে মেলে না।"
"বাজার বড় হয়েছে, কিন্তু মানুষ যতো কিনতে চায় সে পরিমাণ শেয়ার নেই।"
"শেয়ারের অভাব আছে। বাজার চলছে অনুমানের ওপর। যারা স্বাভাবিক লেনদেনে যুক্ত তাদের লোকসান হবে না," বলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা।
জিয়াউল হাসান বলেন, বাজারে তারল্য সংকট থাকার কথাটি ঠিক নয়।
"রেপো ও নগদ অর্থ সহায়তার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রোববার বাজারে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি সরবরাহ করেছে," বলেন জিয়াউল।
জিয়াউল হক খন্দকার জানান, এসইসি একটি স্থিতিশীল পুঁজিবাজার তৈরির চেষ্টা করছে এবং বিনিয়োগকারীদের সাবধানে বিনিয়োগ করা উচিত।
তিনি বলেন, "আমার ১০ কোটি টাকার বিনিয়োগ সীমা প্রত্যাহার করেছি এবং বাজারকে স্থিতিশীল করতে গ্রামীণফোনকে নেটিং পদ্ধতির আওতায় আনা হয়েছে।"
রাতারাতি লাভ নয়
অর্থমন্ত্র বলেন, "রাতারাতি লাভের আশা করবেন না। বাজারের অস্থিতিশীলতায় মানুষের অভ্যস্ত হওয়া উচিত।"
"কিছু মানুষ মনে করে বাজারের পড়তি অবস্থায় তারা লাভবান হতে পারে এবং শেয়ার কিনতে পারে সস্তায়; কিন্তু তা হবে না ," বলেন আবুল মাল আবদুল মুহিত।
ওইভাবে শেয়ার কেনার চিন্তা কারা করে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।
তিনি বলেন, "গভর্নর ও অন্য অংশীদারদের সঙ্গে আজ [রোববার] কথা বলেছি। আমার মনে হয় না বাজারে মারাত্মক কিছু ঘটবে।"
চট্টগ্রামভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইউনিপে২ এর বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী।
"প্রতিষ্ঠানটি এক সপ্তাহে দ্বিগুণ লাভ দেওয়ার কথা বলে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা নেয়," বলেন তিনি।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে সাধারণ সূচক দাঁড়ায় ৭১৩৫ দশমিক ০২, যা দিনের শুরুর চেয়ে ৬০০ দশমিক ২১ পয়েন্ট বা ৭ দশমিক ৭ শতাংশ কম।
এদিন মোট ২৪৪টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ২৪১টির দামই কমেছে, বেড়েছে বাকি ৩টির।
সূচক ও দাম কমে গেলেও কেনার প্রবণতার কারণে শেয়ার লেনদেনের পরিমাণবেড়ে যায়। পুরো দিনে ১ হাজার ৩৩১ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়।
ব্যাপক দরপতনের পরও আগের মতো কোনো ধরনের বিােভ দেখা যায়নি। গত সপ্তাহের বিােভের পর রোববার ডিএসই'র সামনে সকাল থেকেই বিপুল সংখ্যক র‌্যাব-পুলিশ অবস্থান নেয়।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম /এসএসজেড/এমআর/এসএইচ/পিকেএস/বিডি/পিডি/০১৫৭ ঘ.