বাণিজ্য মেলা এবার নতুন ঠিকানায় ভিন্ন রূপে

কোভিড মহামারীর কারণে এক বছর ছেদ পড়ার পর পূর্বাচলের নতুন ঠিকানায় আবারও শুরু হতে যাচ্ছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Dec 2021, 04:28 PM
Updated : 31 Jan 2022, 04:05 PM

তবে এবার মেলা দেখতে যেতে হবে শেরে বাংলা নগরের পুরোনো ঠিকানা থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে পূর্বাচলে বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে।

মেলার সব আয়োজন যখন চূড়ান্ত, তখন করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের প্রাদুর্ভাব উদ্বেগ ছড়ালেও মেলা শুরুর দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে আয়োজক প্রতিষ্ঠান রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, ইপিবি।

মেলার পরিচালক ইপিবির সচিব ইফতেখার আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম বলেন, ১ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাসব্যাপী এই মেলার উদ্বোধন করবেন।

তবে মহামারী পরিস্থিতি বিবেচনায় সীমিত করা হয়েছে এবার মেলার পরিসর। ছোটবড় মিলিয়ে ২২৫টি স্টল-প্যাভিলিয়ন দিয়ে সাজানো হচ্ছে মেলা; যেখানে ২০২০ সালে ৪৫০টি এবং ২০১৯ সালে ৫৫০টি স্‌টল নিয়ে শেরে বাংলা নগরে মেলা বসেছিল।

ইপিবি সচিব ইফতেখার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম বলেন, “এবারের মেলার চমক হচ্ছে আগের মতো খোলা আকাশের নিচে এবারের মেলা হচ্ছে না। প্রদর্শনী কেন্দ্রের স্থায়ী অবকাঠামোর ভেতরে ও বাইরে মিলিয়ে এবারের মেলা সাজানো হয়েছে।”

আগের মতো এবারও টিকেটের দাম রাখা হচ্ছে শিশুদের জন্য ২০ টাকা আর বড়দের জন্য ৪০ টাকা।

ইফতেখার জানান, স্থায়ী অবকাঠামো হওয়ার কারণে এবারের মেলায় শিশুপার্ক কিংবা শিশুদের বিনোদন কেন্দ্র রাখা হয়নি। তবে বিশ্রামের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকছে। ছোট ফুড কোর্ট, রেস্টুরেন্ট ও অন্যান্য খাবার দোকান থাকবে।

মেলা উপলক্ষে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে বিআরটিসির ৩০টি বাস পূর্বাচলে যাতায়াত করবে বলে জানান তিনি।

বুধবার বিআরটিসির চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, কমলাপুর থেকে রামপুরা, বাড্ডা, কুড়িল বিশ্বরোড হয়ে বাণিজ্য মেলা এবং শেওড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে কুড়িল হয়ে বাণিজ্য মেলা পর্যন্ত এসব বাস চলাচল করবে।

তিনি বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে দর্শনার্থীদের চাহিদা অনুযায়ী দোতলা বাস সরবরাহ করবে বিআরটিসি। জোয়ারসাহারা ও কমলাপুর ডিপোর বাস দিয়ে এ সেবা দেওয়া হবে।

২০২০ সালে শেরে বাংলা নগরে বাণিজ্য মেলায় ছিল এমন ভিড়। ফাইল ছবি

কমেছে বিদেশি স্টল

মেলা শুরু হলেও বিদেশি স্টলের উপর মহামারীর প্রভাব রয়ে গেছে। কেবল তুরস্ক, ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়ার কয়েকটি কোম্পানি স্টল নিয়ে মেলায় অংশ নিচ্ছে। থাইল্যান্ডের কয়েকটি কোম্পানি তাদের এদেশীয় প্রতিনিধি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মেলায় অংশ নিচ্ছে।

ইফতেখার বলেন, “মেলার নিয়মিত অংশ নেওয়া ইরান এবার থাকছে না কেবল কোভিডের কারণে। সেই দেশে কোভিডের হার অনেক বেড়েছে। তুরস্ক, ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়া এবার অংশ নিচ্ছে।”

১৯৯৫ সাল থেকে শেরেবাংলা নগরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। এই কারণে স্থানটি মেলা মাঠ নামেও পরিচিতি পেয়েছে।

সর্বশেষ ২০২০ সালের জানুয়ারিতে শেরে বাংলানগরে ২৫তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা বসেছিল। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে পূর্বাচলে মেলা আয়োজনের প্রস্তুতি শুরু হলেও কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে তা আর মাঠে গড়ায়নি। এবার ২৬তম আসর পূর্বাচলেই বসতে যাচ্ছে।

রাজউকের নতুন শহর পূর্বাচলে ২০ একর জমির উপর নির্মিত বাংলাদেশ-চীন ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে রয়েছে দুটি বড় হলরুম। ফাইল ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

এক্সিবিশন সেন্টারে যা রয়েছে

পূর্বাচলে কাঞ্চন ব্রিজের কাছে ৪ নম্বর সেক্টরে ২০ একর জমির উপর বাংলাদেশ-চীন ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারটি নির্মাণ করা হয়েছে।

২০১৭ সালের ১৭ অক্টোবর মেলার অবকাঠামো নির্মাণ শুরু করে চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন। ২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর নির্মাণ কাজ শেষ করার ঘোষণা দেয় তারা।

চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি প্রদর্শনী কেন্দ্রটি ইপিবির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

সেখানে ৯ বর্গফুট আয়তনের ৮০০টি স্টল রয়েছে। এর বাইরে রয়েছে ছয় একর খোলা জায়গা। চাইলে সেখানেও অস্থায়ী স্টল বসানো যাবে।

শেরেবাংলা নগরে আগের বাণিজ্যমেলা মাঠে গাড়ি রাখার স্থানসহ মেলা প্রাঙ্গণের আয়তন ছিল ৩২ একর। সর্বশেষ মেলায় স্টল-প্যাভিলিয়নের সংখ্যা ছিল ৪৮৩টি।

প্রদর্শনী কেন্দ্রের মোট ফ্লোর স্পেস ৩৩ হাজার বর্গমিটার। ভবনের মোট ফ্লোর স্পেস ২৪ হাজার ৩৭০ বর্গমিটার। এক্সিবিশন হলের মোট আয়তন ১৫ হাজার ৪১৮ বর্গমিটার।

দোতলা পার্কিং ভবনে ৭ হাজার ৯১২ বর্গ মিটার জায়গায় ৫০০ গাড়ি রাখা যাবে। এছাড়া এক্সিবিশন বিল্ডিংয়ের সামনে খোলা জায়গায় আরও এক হাজার গাড়ি রাখা যাবে।