মালয়েশিয়ার সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করার পরামর্শ

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে জোরালো অবস্থান তৈরির জন্য মালয়েশিয়াসহ এশিয়ার কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোর সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) উদ্যোগ নিতে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 May 2021, 03:32 PM
Updated : 26 May 2021, 03:32 PM

রাজধানীতে বুধবার এবিষয়ে ভার্চুয়াল আলোচনায় এমন পরামর্শ শুনে বিষয়টি সরকার সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে বলে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানান।

বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার জিডিপির আকার কাছাকাছি হলেও আয়তন ও জনসংখ্যার দিক থেকে বিপরীত অবস্থানে রয়েছে দেশ দুটি। ফলে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যসহ অর্থনীতির নানা সূচকে মালয়েশিয়া থেকে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ।

২০১৯ সালে মালয়েশিয়ার জিডিপির আকার ছিল ৩৬৪ বিলিয়ন ডলার, যেখানে বাংলাদেশের জিডিপির আকার ছিল ৩২৯ বিলিয়ন ডলার। ওই বছর বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ১৯৭০ ডলার হলেও মালয়েশিয়ার মাথাপিছু আয় ছিল ১১ হাজার ৪১৪ ডলার।

এর অন্যতম কারণ হচ্ছে- বাংলাদেশে জনসংখ্যা মালয়েশিয়ার চেয়ে ৫ গুণ বেশি। অথচ মালয়েশিয়া আয়তনে বাংলাদেশের চেয়ে তিনগুণ বড়।

২০১৯ সালে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ, যেখানে মালয়েশিয়ার ছিল ৪ দশমিক ৪১ শতাংশ।

বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিএমসিসিআই) আয়োজিত ‘বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া এফটিএ:  চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড অপারচুনিটি’ শীর্ষক আলোচনায় এ বিষয়গুলো তুলে ধরেন আলোচকরা।

সঞ্চালক বিএমসিসিআই সভাপতি রাকিব মোহাম্মদ ফখরুল (রকি) বলেন, বাংলাদেশ ২০২৪ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা (এলডিসি) থেকে মধ্য-আয়ের দেশে উন্নীত হলে রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা হারাতে হবে এবং প্রচুর বাণিজ্য হারাতে হবে। তখন বাণিজ্য সুবিধা মূলত দ্বিপক্ষীয় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির উপর নির্ভর করবে।

“এফটিএ এবং পিটিএর মতো চুক্তিগুলো বাংলাদেশকে শুল্ক সুবিধা পেতে সহায়তা করবে। উভয় দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়েরই এটির জন্য প্রস্তুত থাকা প্রয়োজন,“ বলেন তিনি।

২০২০ সালের ডিসেম্বরে প্রথমবারের মতো ভুটানের সঙ্গে অগ্রাধিকারমূলক দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি বা পিটিএ স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ। ওই সময় মালয়েশিয়ার সঙ্গে এফটিএ চুক্তি হওয়ার কথা থাকলেও পরে তা আর হয়নি।

১৯৭৭ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে মালয়েশিয়ার দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি (বাইলেটারেল ট্রেড এগ্রিমেন্ট), ১৯৮৩ সালে সমুদ্র পরিবহণ চুক্তি, ১৯৯২ সালে ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিকেল কো-অপারেশন এগ্রিমেন্ট এবং ১৯৯৪ সালে এভোয়েডেন্স অফ ডাবল টেক্সেশন এগ্রিমেন্ট হয়।

অনুষ্ঠানের মূল উপস্থাপনায় বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড টেরিফ কমিশনের সদস্য মোস্তফা আবিদ খান বলেন, বাংলাদেশের বাণিজ্য নীতি মালয়েশিয়ার থেকে অনেক বেশি রক্ষণশীল। বাংলাদেশে আমদানির ক্ষেত্রে গড়ে ১৪ শতাংশ ট্যারিফ রয়েছে যেখানে মালয়েশিয়াতে রয়েছে মাত্র ৫.৬ শতাংশ। এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে এফটিএ চুক্তি হলে বাংলাদেশের রপ্তানি সক্ষমতা আরও জোরদার হবে।

তিনি বলেন, “এশিয়ার দেশ ভারত, পাকিস্তান, চীন, জাপান, তুরস্ক, নিউ জিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে এফটিএ চুক্তি করে রেখেছে মালয়েশিয়া। যদিও বাংলাদেশ কোনো দেশের সঙ্গেই এই চুক্তি করেনি। বাংলাদেশ থেকে শীর্ষ ১০টি রপ্তানি দেশের মধ্যে এশিয়ার শুধুমাত্র জাপান রয়েছে। অথচ মালয়েশিয়ার ১০টি শীর্ষ রপ্তানি লক্ষ্যের নয়টিই এশিয়ার মধ্যে।”

মালয়েশিয়ার অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের পরিচালক আমরী বুখাইরি বখতিয়ার বলেন, ২০২০ সালে মালয়েশিয়ার সামগ্রিক বাণিজ্যের ৬৬ শতাংশই হয়েছে এফটিএভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে। এ থেকে বোঝা যায় মালয়েশিয়ায় এধরনের চুক্তির গুরুত্ব কতটুকু।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ২০২৪ সালে এলডিসি গ্রাজুয়েশন সামনে রেখে মালয়েশিয়ার সঙ্গে এফটিএ নিয়ে আলোচনা খুবই সময়োপযোগী।  মালয়েশিয়ার সঙ্গে আমদানি শুল্ক কমিয়ে দিলে দেশ রাজস্ব হারাবে সেই চিন্তা অবান্তর। কারণ এই চুক্তির ফলে কম মূল্যে শিল্পের কাচামাল আসবে।

“উৎপাদন খরচ কমার ফলে রপ্তানি সক্ষমতা শক্তিশালী হবে। অভ্যন্তরীণ বাজারের জন্য উৎপাদিন পাণ্যের দামও কমবে। ফলে নতুন বাণিজ্য থেকে সরকার বেশি বেশি রাজস্ব পাবে, কর্মসংস্থান বাড়বে।”

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, মালয়েশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধির অনেক সুযোগ রয়েছে। এফটিএর মতো বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিভিন্ন দেশের সাথে টেকসই বাণিজ্য সুবিধা সৃষ্টির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মালয়েশিয়ার সাথে এফটিএ স্বাক্ষরের জন্য বাংলাদেশ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশে নির্মাণাধিক ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করার জন্য মালয়েশিয়ার বিনিয়োগকারীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান বাণিজ্যমন্ত্রী।

বাংলাদেশে নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাই কমিশনার হাজনাহ মো. হাসিম, মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার গোলাম সারওয়ার, বিএমসিসিআইয়ের বিদায়ী সভাপতি ও এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন, বিএমসিসিআইয়ের সহসভাপতি আনোয়ার শহীদ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।