পেটেন্ট আইন না মানলে শাস্তি বাড়ছে

পেটেন্ট না মানার শাস্তি বাড়িয়ে ‘বাংলাদেশ পেটেন্ট আইন, ২০২১’ এ চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Feb 2021, 12:36 PM
Updated : 14 Nov 2021, 01:32 PM

সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এ তথ্য জানান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল মাধ্যমে মন্ত্রিসভার এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “পেটেন্ট ও ডিজাইন আইন ছিল ১৯১১ সালের। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন জটিলতার জন্য ২০১৬ সালে এই আইনটিকে দুই ভাগ করে একটা পেটেন্ট আইন, আরেকটি ডিজাইন আইনের খসড়া করা হয়েছিল। শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে আইনটি আনা হয়েছে।’

“আইনের বিভিন্ন ধারা আদেশ পালনে কেউ যদি ব্যর্থ হয় তারা সুপারিশ করেছিলেন ২০ থেকে ৮০ হাজার টাকার ক্ষতিপূরণ। এটাকে ৫ লাখ থেকে ১০ লাখে উন্নীত করে দেওয়া হয়েছে।’

আইনের নতুন বিষয়গুলো উল্লেখ করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আইন অনুযায়ী নতুনত্ব ও উদ্ভাবনী বিষয় বিদ্যমান থাকলে প্রযুক্তিগত যে কোনো পণ্য উদ্ভাবনী পেটেন্ট যোগ্য হবে এটা আইনের মধ্যে বিধান রাখা হয়েছে।

“আইন অনুযায়ী নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে কোন একটি পেটেন্টের একক বা যৌথ উদ্ভাবনকে আবেদনের ফলে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে উদ্ভাবকরা যৌথ উদ্ভাবকের পেটেন্টের সুরক্ষা দেওয়া হবে।”

প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী, পেটেন্ট মালিকের ২০ বছরের জন্য মালিকানা স্বত্ব সংরক্ষিত থাকবে। ২০ বছর পর তা ‘পাবলিক’ সম্পদ হয়ে যাবে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “কোনো ক্ষেত্রে যদি জেনেটিক রিসোর্সের অবৈধ ব্যবহার হয়, সেক্ষেত্রে পেটেন্ট হস্তান্তর করে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে দেওয়া যাবে। পেটেন্ট বাতিল এবং অধিকার কার্যকর করার বিধান এই আইনে আছে।

“এই আইনে যেসব মামলা-মোকদ্দমা হবে সেগুলো সিভিল ন্যাচারের হবে। সিভিল কোর্ট এগুলো হ্যান্ডেল করবে। কেউ যদি চিটিং করে সেগুলো তো আলাদা, সেগুলো পেনাল কোড অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, আইনের অধীনে এখানে একটা রেজিস্ট্রারের দপ্তর থাকবে। এই ব্যবস্থার দপ্তর থেকে সবাই নিবন্ধন করবে। একই সঙ্গে সুপারভিশন ও মনিটরিং করা হবে। এই রেজিস্টার ডিজাইনের আইনেরও অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অধিদপ্তর হিসেবে কাজ করবে।

শিল্প নকশা আইনের খসড়া নীতিগত অনুমোদন

‘বাংলাদেশ শিল্প-নকশা আইন, ২০২১’ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয় বৈঠকে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “আগের আইনের অধীনে ডিজাইন এবং ট্রেডমার্কস রেজিস্ট্রার অধিদপ্তর ছিল, সেটা বহাল থাকবে। এই অধিদপ্তরের অধীনে একটি শিল্প ইউনিট থাকবে। এই আইনের অধীনে শিল্প নকশা নিবন্ধন সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম সম্পন্ন হবে।”

মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, আইনের অধীনে বিধি দিয়ে নির্ধারিত পদ্ধতিতে এবং ফি প্রদান সাপেক্ষে শিল্প নকশার নিবন্ধনের মেয়াদ হবে পাঁচ বছর।

“কারও যদি এক্সক্লুসিভ এক্সট্রা অর্ডিনারি কোনো রকম থাকে, তাহলে সে দরখাস্ত দিলে তাকে আরও পাঁচ বছরের জন্য মেয়াদ বাড়ানো হবে। আগের আইনের মধ্যে এটা ছিল না।”

“কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অনুকুলের যদি শিল্প নকশা নিবন্ধিত হয় অন্যকে প্রতারণামূলকভাবে যদি ব্যবহার করে তবে মালিক ক্ষতিপূরণ পাবে সিভিল আইন অনুযায়ী এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় গৃহীত প্রস্তাব অনুযায়ী এই দুটি আইন করা হয়েছে বলে জানান খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।

আরকাইভস আইনের চূড়ান্ত অনুমোদন

‘বাংলাদেশ জাতীয় আরকাইভস আইন, ২০২১,’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “জাতীয় আরকাইভস সুষ্ঠভাবে পরিচালনার জন্য ১৯৮৩ সালের একটি অধ্যাদেশ ছিল, হাই কোর্টের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে যেহেতু এটি আইনে পরিণত করতে হবে সেহেতু এটি রিভাইস করে ২০২১ এ খসড়ায় নিয়ে আসা হয়েছে।”

জাতীয় আরকাইভস পরিচালনায় একটি উপদেষ্টা পরিষদ থাকবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এই উপদেষ্টা পরিষদের কাজ এখানে বলা হয়েছে। এখানে একজন মহাপরিচালক থাকবেন। অধ্যাদেশে এই মহাপরিচালক ছিলেন না।

“রেকর্ড বিনষ্ট করার যে বিধান ছিল তা বাদ দেওয়া হয়েছে এগুলোর সফট কপি নিয়ে যত রেকর্ড থাকবে কালিয়াকৈরের ডাটা সেন্টারে লঞ্চ করতে হবে। দেশের সব রেকর্ডরুম যা আছে সবগুলোকে একটি নির্দিষ্ট সময় পরে আর্কাইভে দিয়ে দিতে হবে।”

মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, প্রস্তাবিত আইনের গবেষক ও তথ্য সেবা গ্রহীতাদের অনলাইন ডিজিটাল সেবা দেওয়ার জন্য আরকাইভ ডিজিটাল সেবা বা তথ্য প্রযুক্তি সেবা দিতে নির্দেশনা রয়েছে। পেমেন্ট দিয়ে তারা কর্তৃপক্ষের কাছে দরখাস্ত দিলে গোপন কোন দলিল না হলে সরবরাহ করবে।

প্রস্তাবিত আইনে আরকাইভের ক্ষতি সাধন করলে এবং অন্যান্য ক্ষতি সাধনের জন্য এক থেকে ৫ বছর কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা কারাদণ্ড রয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।