আইসিটির উন্নয়নে হুয়াওয়ের সঙ্গে চুক্তি

দেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) খাতের প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে একসঙ্গে কাজ করবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ (আইসিটি) বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) এবং বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক অথরিটি (বিএইচটিপিএ)।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Nov 2020, 06:14 PM
Updated : 12 Nov 2020, 06:14 PM

একটি সমঝোতা স্মারকের আওতায় শিগগিরই শিক্ষার্থী, গবেষক, বিশ্ববিদ্যালয়, ডেভেলপার, স্টার্টআপ ও সংশ্লিষ্টদের জন্য বাংলাদেশ আইসিটি কম্পিটিশন-২০২০, আইসিটি জয়েন্ট ইনোভেশন সেন্টার, হুয়াওয়ে আইসিটি একাডেমি’ এবং কিউরেটিং বাংলাদেশি স্টার্টআপস – শীর্ষক চারটি ভিন্ন ভিন্ন প্রকল্প শুরু হবে।

এর মধ্য থেকে বাংলাদেশ আইসিটি কম্পিটিশন-২০২০, আইসিটি জয়েন্ট ইনোভেশন সেন্টার এবং কিউরেটিং বাংলাদেশি স্টার্টআপস -এই তিনটি আয়োজনে হুয়াওয়ের সঙ্গে একযোগে কাজ করবে বিসিসি।

হুয়াওয়ে আইসিটি একাডেমির সংশ্লিষ্ট কাজে থাকবে বিএইচটিপিএ। উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানগুলো উদ্বোধনের দিন থেকে পরবর্তী অন্তত তিন বছরের জন্য নিজ নিজ প্রকল্প ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে।

বৃহস্পতিবার ঢাকার আগারগাঁওয়ের বিসিসি মিলনায়তনে এই সমঝোতা স্মারক সই হয় বলে হুয়াওয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন এলআইসিটি প্রকল্পের পরিচালক রেজাউল করিম। অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন হুয়াওয়ে টেকনোলজিস (বাংলাদেশ) লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী ঝ্যাং ঝেংজুন।

অনুষ্ঠানে পলক বলেন, “এই চুক্তিটি তরুণ শিক্ষার্থী, আমাদের গবেষক এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আমাদের উদ্ভাবকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দিতে সক্ষম হবে। একই সাথে হুয়াওয়ের উদ্ভাবিত বিশ্বের সর্বশেষতম প্রযুক্তিগুলির অভিজ্ঞতা নেওয়ার সুযোগ তৈরি করবে। এই চুক্তির আওতায় শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং একাডেমিয়ার মধ্যকার ব্যবধানও কমাতে সক্ষম হব।”

হুয়াওয়ে টেকনোলজিস (বাংলাদেশ) লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ঝ্যাং ঝেংজুন বলেন, “আমাদের এই উদ্যোগ বাংলাদেশের তরুণদের মধ্যে আইসিটি খাতে দক্ষতা বৃদ্ধির উৎসাহ তৈরি করবে, যার ফলশ্রুতিতে, ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্নটি ধীরে ধীরে বাস্তবতার পথে এগিয়ে যাবে।”

ছবি: রয়টার্স

হুয়াওয়ে জানিয়েছে, দুই মাসব্যাপী ‘বাংলাদেশ আইসিটি কম্পিটিশন ২০২০’ কর্মসূচি আগামী ডিসেম্বর থেকে শুরু হবে। হুয়াওয়ে ও বিসিসি’র পক্ষ থেকে দেশের নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় বাছাই করা হবে।

এছাড়া, প্রাথমিকভাবে যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ও প্রকৌশল সংক্রান্ত বিভাগের পক্ষ থেকে বিসিসি বা হুয়াওয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেও তালিকাভুক্ত হওয়া যাবে। শুধু নিবন্ধিত বিশ্ববিদ্যালয়ের আগ্রহী শিক্ষার্থীরা এই প্রতিযোগিতায় তালিকাভুক্ত হতে পারবে এবং অনলাইনে কোর্স ও পরীক্ষা সম্পন্ন করতে পারবে।

শিক্ষার্থীদের গ্রুপগুলোকে প্রশিক্ষণের জন্য থাকবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দিষ্ট শিক্ষক। প্রিলিমিনারি, সেমিফাইনাল এবং জাতীয় পর্যায়ের পর শীর্ষ তিনটি গ্রুপ হুয়াওয়ে আইসিটি কম্পিটিশনের রিজিওনাল ফাইনালে এবং বৈশ্বিক ফাইনালে অংশ নিতে পারবে।

‘আইসিটি জয়েন্ট ইনোভেশন সেন্টার’ কর্মসূচিতে বিসিসি ও হুয়াওয়ে’র সমন্বয়ে একটি যৌথ দল গঠন করা হবে, যার উদ্দেশ্য হবে এই ইনোভেশন সেন্টারের মাধ্যমে সরকারি মালিকানাধীন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা ও উন্নয়ন (আরএন্ডডি) কাঠামো তৈরিতে সহায়তা করা।

এর মধ্য দিয়ে আইসিটি কর্মক্ষেত্র তৈরি, আইসিটি-মেধাবীদের বের করে আনা এবং আইসিটি ভিত্তিক প্রযুক্তি ও ইকোসিস্টেম তৈরি – ইত্যাদি প্রসঙ্গে বিসিসি’কে সহায়তা দান করা হবে। পাশাপাশি, ডেভেলপাররা এর মাধ্যমে হুয়াওয়ে ও বিসিসি’র কাছ থেকে আইসিটি প্রশিক্ষণ ও সহায়তাও গ্রহণ করতে পারবে।

হুয়াওয়ে বলছে, “এতে একদিকে যেমন ডেভেলপাররা বিনামূল্যে কম্পিউটার ও এআই প্ল্যাটফর্মের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন, অন্যদিকে অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট ও বাজার পরিচিতির প্রশ্নে সময়ও সাশ্রয় করতে পারবেন।”

এ অংশীদারিত্বের মাধ্যমে হুয়াওয়ে আইসিটি অ্যাকাডেমি প্রাসঙ্গিক প্রশিক্ষণ দেবে, হুয়াওয়ের সনদ গ্রহণে শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করবে এবং আইসিটি শিল্পখাত এবং কমিউনিটির জন্য মেধার বিকাশ করবে।

পাশাপাশি চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর এবং খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শেখ কামাল আইটি ইনকিউবেশন সেন্টারে একটি করে আইসিটি অ্যাকাডেমির কাঠামো এবং ধারণা প্রতিষ্ঠা করা হবে, যার দায়িত্বে যৌথভাবে নিয়োজিত থাকবে হুয়াওয়ে এবং বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক অথরিটি -বিএইচটিপিএ।

‘কিউরেটিং বাংলাদেশ স্টার্টআপ’ হতে যাচ্ছে এমন একটি কেন্দ্রস্থল যেখানে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, উদ্যোক্তা, গবেষক, বিনিয়োগকারী, সরকারসহ অনুরূপ যে কোনো পক্ষ একসাথে যুক্ত হয়ে আইসিটি পণ্য উদ্ভাবনে কাজ করবে।

এছাড়া বাংলাদেশের স্টার্টআপ কালচারের জন্য লোকাল এবং গ্লোবাল ফ্রন্টিয়ার সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করার পরিকল্পনা করছে বিসিসি এবং বিএইচটিপিএ, যার মাধ্যমে দেশের এবং দেশের বাইরের উদ্যোক্তাগণ একসাথে মিলে পরিকল্পনা গঠন, পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং বাস্তবায়নের জন্য কাজ করবে।

হুয়াওয়ে বলছে, উল্লেখিত কর্মসূচিগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ আইসিটি কম্পিটিশনটি আগামী মাস থেকে শুরু করার পরিকিল্পনা রয়েছে।

এই প্রতিযোগিতাটি মূল দুইটি অংশে বিভক্ত থাকবে, যেমন- প্রাক্টিক্যাল কম্পিটিশন এবং ইনোভেশন কম্পিটিশন, ফলে অংশগ্রহণকারীদের পুঁথিগত দক্ষতার পাশাপাশি হাতে-কলমে কাজের দক্ষতা এবং প্রযুক্তিগত খাতে পরিকল্পনা ও নকশা প্রণয়নে উদ্ভাবনীক্ষমতার দক্ষতাও যাচাই করা সম্ভব হবে।

সুরক্ষা, বিগ ডাটা ও এআই (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) প্রভৃতির মত কৌশলগত বিষয়াদি এই প্রতিযোগিতায় উঠে আসবে। ইনোভেশন কম্পিটিশন অংশে আইওটি সলিউশন ও ক্লাউড সার্ভিস সলিউশনের মত দক্ষতার জায়গাগুলোতে জোর দেওয়া হবে।