চালের সঙ্গে বস্তাও এখন দামি

মূল্য বৃদ্ধি ঠেকাতে মিল পর্যায়ে বস্তা প্রতি চালের দাম বেঁধে দিয়েছে সরকার, কিন্তু সেই দামে বাজারে চাল মিলছে না। খোঁজ নিয়ে জানা গেল এতদিন বিনামূল্যে দেওয়া চালের বস্তারও এখন দাম ধরছেন মিল মালিকরা।

ফয়সাল আতিক নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Oct 2020, 12:10 PM
Updated : 16 Oct 2020, 12:10 PM

এই সুযোগে আরও খানিকটা বাড়িয়ে বাড়তি দামে রাজধানীর বাজারে চাল বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।

চালের দাম অব্যাহতভাবে বাড়তে থাকায় গত ২৯ সেপ্টেম্বর পাইকারি বিক্রেতা ও মিল মালিকদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করে অক্টোবর মাসের জন্য মিল পর্যায়ে দাম নির্ধারণ করে দেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।

৫০ কেজি ওজনের ভালো মানের এক বস্তা মিনিকেট চালের দাম মিল গেইটে ২৫৭৫ টাকা এবং মাঝারি মানের চালের দাম ২১৫০-২২৫০ টাকা নির্ধারণ করেন তিনি। বিপণনের পরবর্তী স্তরগুলোতে যৌক্তিক মুনাফা করেই চাল বিক্রি হবে বলে সেই বৈঠকে মন্ত্রীকে কথা দিয়েছিলেন মিল মালিক ও ব্যবসায়ীরা।

তবে বৃহস্পতিবার রাজধানীর বেশ কয়েকটি খুচরা দোকান ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৭ টাকা থেকে ৫৮ টাকায়, বস্তায় যার দাম পড়ছে ২৯০০ টাকা। মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৪ টাকায়, বস্তায় যার দাম দাঁড়াচ্ছে ২৭০০ টাকা।

বেশি দাম কেন জানতে চাইলে কয়েকজন মুদি দোকানি বললেন, সরকার দাম ঠিক করে দিলেও বাস্তবে তা সেই দামে চাল আসছে না। বেশি দামে কিনতে হওয়ায় বাড়তি দামেই বিক্রি করছেন তারা।

মিরপুরের শাহ আলী মার্কেটে চালের পাইকারি বিক্রেতা মহিউদ্দিন হারুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সরকার দাম নির্ধারণ করে দেওয়ায় বাজার কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আছে। গত সাত দিনের প্রথম কয়েক দিন নির্ধারিত দামে চাল কেনা গেলেও এখন আবার দাম কিছুটা বাড়তে শুরু করেছে। মিল মালিকরা চালের সঙ্গে বস্তার মূল্য বাবদ আরও ৫০ টাকা যোগ করছেন।

“এছাড়া জেলা শহর থেকে ঢাকায় চাল পরিবহনে প্রতি বস্তায় ৬০ টাকা খরচ হয়। পরিবহন খরচ ও বস্তার খরচ মিলিয়ে প্রতি বস্তা মিনিকেট চালের দাম দাঁড়ায় ২৬৮০ টাকা। কিছুটা লাভ করার জন্য ২৭০০ টাকা বা তার চেয়ে কিছুটা বেশি দামে এখন চাল বিক্রি হচ্ছে। বিআর আটাশ আর পাইজাম বিক্রি হচ্ছে ২৩৫০ টাকা।”

পীরেরবাগ বিসমিল্লাহ রাইস এজেন্সির একজন বিক্রয়কর্মী জানান, তারা রশিদ ও মোজাম্মেল ব্র্যান্ডের ৫০ কেজির মিনিকেট চালের বস্তা বিক্রি করছেন ২৮০০ টাকায়। ডলফিন ব্র্র্যান্ডের মিনিকেট চাল ২৭৫০ টাকা, বিভিন্ন কোম্পানির স্বর্ণা, পাইজাম ও বিআর আটাশ চাল বিক্রি করছেন প্রতি বস্তা ২৩৮০ টাকা থেকে ২৪০০ টাকায়।

সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সরকার যেই দাম নির্ধারণ করেছে আসলে সেই দামে চাল কেনা যাচ্ছে না। মিল মালিকরা চালানপত্রে প্রতি বস্তা মিনিকেট ২৫৭৫ টাকা লিখলেও বাস্তবে রাখা হচ্ছে ২৬৫০ টাকা থেকে ২৬৮০ টাকা। এর সঙ্গে পরিবহন খরচ বাবদ আরও ৬০ টাকা যোগ হচ্ছে। এ কারণেই দাম কিছুটা বেড়ে গেছে।”

পশ্চিম আগারগাঁওয়ে রাসেল ট্রেডার্সের মোহাম্মদ রাসেল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তীর ব্র্যান্ডের মিনিকেট চাল ৫০ কেজির বস্তা ২৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ২৩৫০ টাকায়। মিলগুলো এখন নতুন করে ব্স্তার দামও যোগ করা শুরু করেছে।”

তবে বিক্রেতাদের এসব যুক্তিকে অতিমুনাফার ফন্দি হিসেবে দেখছেন কারওয়ান বাজারে কেনাকাটা করতে আসা রাজাবাজার এলাকার বাসিন্দা মাহতাম উদ্দিন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মুদি দোকানগুলোতে ৫০ টাকার নিচে কোনো চাল নেই। মিনিকেট চালের দাম প্রতি কেজি প্রায় ৬০ টাকার ঘরে। অথচ সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী, সরু চাল প্রতি কেজি ৫৫ টাকার মধ্যে এবং মোটা চাল ৫০ টাকার নিচে হতে পারত।

“সরকার শক্তিশালী সিন্ডিকেট ভাঙতে পারেনি।”

দেশের অন্যতম বৃহৎ চালের মিল রশিদ রাইস এজেন্সির বিপণন কর্মকর্তা তারিক আনাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ধানের দাম অব্যাহতভাবে বাড়তে থাকায় সরকার নির্ধারিত মূল্যে চাল বিক্রি করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তবুও আমরা সরকার নির্ধারিত মূল্যেই চাল বিক্রি করে যাচ্ছি। তবে ধানের দাম যেভাবে বাড়তেছে তাতে এই দামে খুব বেশি দিন চাল বিক্রি করা যাবে না। দাম বাড়াতে হবে।”

বর্তমানে হাটবাজারে অধিকাংশ ধানের দাম প্রতি মণ ১৩০০ টাকা হয়ে গেছে দাবি করে তিনি বলেন, “এক সপ্তাহে ধানের দাম বেড়েছে ৫০ টাকা। সরকার ধানের দিকে নজর না দিয়ে কেবল মিল মালিকদের চাপ দিচ্ছে। কিন্তু সব পক্ষের ওপর নজরদারি না দিয়ে কেবল মিলগুলোর ওপর জোরাজুরি করলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।”

চালের সঙ্গে বস্তার দাম রাখার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এখন তো লাভ খুব কম হচ্ছে। সেক্ষেত্রে প্রতিটি বস্তার জন্য আরও ৫২ টাকা খরচ করতে হচ্ছে। আমরা যদি এই টাকা না নেই তাহলে লাভের মার্জিন থাকবে না।”