মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আলোচনায় ঢাকা-ওয়াশিংটন

করোনাভাইরাস মহামারী পরবর্তী সময়ে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের অংশ হিসাবে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) সম্ভাবনা নিয়ে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনা শুরু হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Oct 2020, 06:03 PM
Updated : 15 Oct 2020, 02:33 PM

সফররত যুক্তরাষ্ট্রের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টিভেন বিগানের সঙ্গে বুধবার রাতে ঢাকার একটি হোটেলে বৈঠক শেষে একথা জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।

কোভিড পরবর্তী অর্থনীতি ‍পুনরুদ্ধারে যুক্তরাষ্ট্রের ‘বিল্ট অ্যাক্ট’র আওতায় বেশ কিছু দেশকে সুবিধা দেওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “সেটা (দিয়েছে প্রেফারেন্সিয়াল সুবিধা) দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য এবং সম্পর্কের উপর নির্ভর করে। বাংলাদেশ যদিও ভালো করছে…

“আমরা বলেছি কোভিড পরবর্তী রিকভারি আরও দ্রুত হতে পারে, যদি বাংলাদেশকেও সেটার সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হয়। সেক্ষেত্রে তিনি বলেছেন যে, বাংলাদেশের বাণিজ্যের আকার সে দেশগুলোর তুলনায় অনেক বড়। সেক্ষেত্রে আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে আরও বড় আকারের আলোচনা করতে পারি।

“সেটা দুই দেশের মধ্যে শুল্ক মুক্ত সুবিধা, যেটাকে ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট বলে, সে ধরনের একটি আলোচনার ব্যাপারে তিনি আমাদেরকে উৎসাহিত করেছেন।”

এক প্রশ্নে শাহরিয়ার বলেন, “জিএসপি বেনিফিটসটা আছে, সেটা এমনিতে ৩০ শে ডিসেম্বর শেষ হয়ে যাবে। হয়ত নতুন কোনো মেকানিজম আসবে, এর মধ্যে তাদের নির্বাচন আছে। এটাকে হয়ত রোল আউট করা হবে। তখন এটা নিয়ে আলোচনা হবে।

“তবে বাংলাদেশের সক্ষমতা, অর্থনীতির আকার যেহেতু বেড়েছে, বাংলাদেশের মানুষের ক্যাপাসিটিও অনেক বেড়েছে। এই সার্বিক বিষয়গুলো আলোচনা করে তিনিই বলেছেন যে, আমরা আরও বড় কিছু এইম করতে পারি। তখনই এসছে ফ্রি ট্রেডের কথা।”

তিন দিনের সফরে বুধবার বিকালে ঢাকায় পৌঁছান উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিগান। এরপর রাতে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়।

অর্থনীতিতে সহায়তা জোরদারের পাশাপাশি বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় গ্যাস অনুসন্ধানে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ত হওয়ার বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার।

অনশোর ও অফশোরে গ্যাস অনুসন্ধানে যুক্তরাষ্ট্রকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “সমুদ্র সীমা নিশ্চিত করার পর সেটাকে প্রায় ২০টি ব্লকে বিভক্ত করা হয়েছে। আমরা কিছু কিছু কোম্পানিকে সম্পৃক্ত করেছি ইতোমধ্যে।

“তিনি (বিগান) সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন এবং সাধুবাদ জানিয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি কোম্পানি বাংলাদেশে প্রথম এলএনজি সাপ্লাই শুরু করেছে, এক্সিলেটর সম্ভবত নাম। আরও কোম্পানি যেন সামনের দিনে আসে, সেটা তিনি দেখবেন।”

বিশেষ কোনো কোম্পনির গ্যাস অনুসন্ধানের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে কি না- এ প্রশ্নে শাহরিয়ার আলম বলেন, “এগুলি ওপেন বিডিংয়ের মাধ্যমে হয়ে থাকে, আপনারা জানেন।

“তবে সরকারি ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের অনেক বড় বড় প্রজেক্ট দেখেছেন, ডাইরেক্ট নেগোসিয়েশনও হয়েছে। আমরা যদি সেরকম মার্কিন কোম্পানি পাই, সরাসরি আলোচনার করে এক্সপ্লোর করার মতো, অবশ্যই সরকার সেটা বিবেচনা করবে। স্পেসিফিক কোম্পানির কথা বলেনি, তবে তাদের আগ্রহ আছে।”

পোশাক খাতের বাইরে পাট ও পাটজাত পণ্য, জাহাজ তৈরি, আইসিটি, ফার্মাসিউটিক্যালস, সু অ্যান্ড লেদার এবং আইটিকেন্দ্রিক সেবাখাতে বিনিয়োগ ও অংশীদারিত্বের বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হওয়ার কথা জানান শাহরিয়ার আলম।

তিনি বলেন, কোভিড-১৯ টিকার যে ট্রায়াল যুক্তরাষ্ট্রে হচ্ছে, সেটার বিস্তারিত বিগান জানিয়েছেন।

“এগুলোতে বাংলাদেশের প্রাইভেট সেক্টর সম্পৃক্ত হতে সার্বিক সহযোগিতা তারা করবেন। এটা আমাদেরকে তারা জানিয়েছেন।”

শাহরিয়ার বলেন, বড় পরিসরে টিকা উৎপাদন শুরু হলে বাংলাদেশও যেন পেতে পারে, সে বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন মার্কিন উপ-পররাষ্ট্র মন্ত্রী।

যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের বিষয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, “এটা নিয়ে স্পেসিফিক আলোচনা হয়নি। বাংলাদেশ চায় ওপেন, ইনক্লুসিভ, বেইজড অন শেয়ারড প্রসপ্যারিটি এন্ড ফর মিউচ্যুয়াল বেনিফিটস, সেটার পক্ষে আমরা আছি।”

যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে যেতে ইচ্ছুক বাংলাদেশিদের ভিসা জটিলতা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “এক্ষেত্রে সময় নিচ্ছেন তারা। তবে ক্লোজলি আলোচনা চলবে।”

রোহিঙ্গাদের নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা চায় না ঢাকা

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বিষয়ে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনায় ঢাকার অনীহার কথা যুক্তরাষ্ট্রের উপমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরা হয়েছে।

বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে থাকা ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা সাজাতে ২২ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের যৌথ উদ্যোগে জয়েন্ট রেসপন্স প্রোগ্রাম আয়োজন করেছে।

প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, “সেখানে বাংলাদেশকে তারা আমন্ত্রণ করেছেন।

“আমরা খুব বেশি লংটার্ম পরিকল্পনায় যেতে চাই না। কারণ আমাদের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে বা প্রধান লক্ষ্যই হচ্ছে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো।”

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে জোর দেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে, তারা তাদের দিক বিভিন্ন ধরনের অবরোধ ইতোমধ্যে দিয়েছেন এবং সামনের দিনগুলোতে তারা অপেক্ষা করবেন মিয়ানমারে নির্বাচন হয়ে যাবার (পর), মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও নির্বাচন। নভেম্বরের ৮ তারিখে মিয়ানমারের নির্বাচন। এরপর তাদের (মিয়ানমারের) সঙ্গে নতুন করে সম্পৃক্ত হবেন।”

সফরের দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার আগে সকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের সঙ্গে দেখা করবেন বিগান।

এর আগে সকালে ধানমণ্ডি-৩২ নম্বরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাবেন তিনি।