অনলাইনে টিসিবির পেঁয়াজ বিক্রি শুরু

সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির পেঁয়াজ অনলাইনে বিক্রি শুরুর প্রথম দিনে ক্রেতাদের ব্যাপক আগ্রহ দেখা গেছে বলে বিক্রেতারা জানিয়েছে।

ফয়সাল আতিক নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Sept 2020, 02:23 PM
Updated : 21 Sept 2020, 04:54 PM

সোমবার প্রথম দিন সীমিত পরিসরে চালু হলেও ভার্চুয়াল ওয়ালে পেঁয়াজ প্রদর্শনের কিছুক্ষণের মধ্যেই অধিকাংশ এলাকায় দিনের বরাদ্দ পেঁয়াজ শেষ হয়ে যায় বলে অনলাইন শপগুলো জানিয়েছে।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি রোববারই ‘ঘরে বসে স্বস্তির পেঁয়াজ’ নামে অনলাইনে পেঁয়াজ বিক্রির এ কর্মসূচি উদ্বোধন করেন। প্রথম সারির ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান চালডাল, স্বপ্ন, সিন্দাবাদ, সবজিবাজার ও যা-চাই ডটকম প্ল্যাটফর্মকে টিসিবির পেঁয়াজ বিক্রির জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে। পরে ধীরে ধীরে মোট ৩০টি ই-কমার্স সাইট এর সঙ্গে যুক্ত হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

সোমবার প্রথম দিনে নিজেদের প্রস্তুতি শেষ করে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করতে পেরেছে শুধু স্বপ্ন অনলাইন ও চালডাল ডটকম। দুপুরে প্রদর্শনের পর বিকাল নাগাদ দিনের বরাদ্দ ফুরিয়ে গেছে বলে প্রতিষ্ঠান দুটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। 

এই সপ্তাহের মধ্যেই বাকি অনলাইন সাইট সিন্দাবাদ ডটকম, সবজিবাজার ডটকম ও যা-চাই ডটকম পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করবে বলে জানিয়েছে।

পেঁয়াজ বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে চালডাল ডটকমের কাস্টমার কেয়ার সার্ভিস থেকে বলা হয়, দুপুরে বিক্রি শুরু হওয়ার পর সন্ধ্যার আগেই ফকিরবাড়ি, গাবতলী, হাজারীবাগ, যাত্রাবাড়ী, কল্যাণপুর, মিরপুর, রাজারবাগ, রামপুরা, তেজগাঁও উত্তরা এলাকার বিপণন কেন্দ্রগুলোতে পেঁয়াজ শেষ হয়ে গেছে। সন্ধ্যা নাগাদ বাড্ডা, উত্তরখান, বনানীসহ আরও কিছু কেন্দ্রে পেঁয়াজ ছিল।

আরেক বিপণন প্রতিষ্ঠান স্বপ্নের দিনের বরাদ্দ বিকাল নাগাদ শেষ হয়ে গেছে বলে প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে দেখানো হয়েছে। তবে এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

সিন্দাবাদ, সবজিবাজার ও যা-চাই ডটকমের কাস্টমার কেয়ারে যোগাযোগ করা হলে সেখান থেকে বলা হয়, প্রথম দিনে তারা পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করতে না পারলেও অনেক ক্রেতাই ফোন করে পেঁয়াজের বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। অচিরেই বিক্রি শুরু হচ্ছে বলে ক্রেতাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে।

হোসাইন আহমদ নামের ঢাকার একজন ক্রেতা বলেন, “সকাল থেকে সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটগুলো ঘুরে কেবল সবজিবাজার ডটকমে টিসিবির পেঁয়াজের সন্ধান পেলাম। তারা অর্ডার রিসিভ করল। কিন্তু কখন পেঁয়াজ দেবে সে বিষয়ে কিছুই জানায়নি। সর্বোচ্চ শিপমেন্ট চার্জ ৩০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও তারা কেটেছে ৫০ টাকা।”

বাড়তি শিপমেন্ট চার্জের বিষয়ে জানতে সবজিবাজার ডটকমের সিইও মোহাম্মদ শাহীনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

ওয়েবসাইটগুলোতে গিয়ে পেঁয়াজ না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন আরও কয়েকজন ক্রেতা।

যোগাযোগ করা হলে ই-কমার্স সাইট যা-চাই’র প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল আজিজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের গাইডলাইন মেনে আবেদন করার পর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। গাইডলাইন অনুযায়ী পণ্যের প্যাকেজিংয়ে ই-ক্যাব, টিসিবি ও সংশ্লিষ্ট ই-কমার্স সাইটের লোগো বসাতে হবে। আমরা সেই কাজটি চূড়ান্ত করতে দুয়েক দিন সময় নিচ্ছি।

“টিসিবির দিক থেকে পণ্য কেনার প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত হয়েছে। যেহেতু পেঁয়াজ একটি পচনশীল পণ্য তাই এখনই আমরা নিজেদের গুদামে তা নিয়ে আসিনি। যখনই প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে তখনই পেঁয়াজ রিসিভ করব। তার জন্য হয়ত দুয়েকদিন সময় প্রয়োজন হবে।”

এই প্রতিষ্ঠানের আরেকজন কর্মী জানান, রোববার থেকেই অনেকে কাস্টমার কেয়ারে ফোন করে পেঁয়াজের বিষয়টি জানতে চাচ্ছেন।

“আমরা তাদের বলেছি যে, আমাদের দুয়েকদিন সময় লাগবে।”

সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রাথমিক পর্যায়ে প্রতিটি ই-কমার্স সাইটকে তিন দিন পর পর ১৫০০ কেজি করে পেঁয়াজ দেবে টিসিবি। একজন গ্রাহক এসব প্রতিষ্ঠান থেকে ৩৬ টাকা কেজি দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি পেঁয়াজ কিনতে পারবেন। বিপণন প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকের কাছ থেকে শিপমেন্ট চার্জ বাবদ সর্বোচ্চ ৩০ টাকা নিতে পারবে।

আরেক বিপণন প্রতিষ্ঠান সিন্দাবাদ ডটকমের সিইও জিসান কিংশুক হক বলেন, “আমরা দাপ্তরিক কাজ শেষ করেছি। মঙ্গলবার থেকে কাস্টমারের কাছে পেঁয়াজ পৌঁছাতে পারব। ওই দিনই ওয়েবসাইটে পেঁয়াজের ক্যাটাগরিটি প্রকাশ করা হবে।

“যথেষ্ট দ্রুততার সঙ্গে কাজ হচ্ছে। শনিবার রাতে আলোচনা শুরু হয়েছে। ওই দিনই গাইডলাইন প্রস্তুত হয়েছে। রোববার বাণিজ্যমন্ত্রী বিষয়টি উদ্বোধন করলেন। মাঝখানে একদিন গেছে, আর আগামী কাল থেকে আমরা বিপণন শুরু করব।”

আরেক বিপণন প্রতিষ্ঠান সবজিবাজারের পক্ষ থেকে বলা হয়, সব প্রক্রিয়া শেষ করে বিপণন শুরু করতে তাদের বুধ কিংবা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। তাই তারা আপাতত অনলাইনে ৪৮ ঘণ্টার সময় নিয়ে অর্ডার রিসিভ করছেন।

সম্প্রতি প্রতিবেশী দেশ ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করার পর দেশের বাজারে পণ্যটির দাম হু হু করে বাড়তে শুরু করে। বাজার ঠিক রাখতে নানামুখী পদক্ষেপ নেয় টিসিবি। ডিলারদের মাধ্যমে খোলা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রির পাশাপাশি এবারই প্রথমবারের মতো প্রতিষ্ঠিত ই-কমার্স সাইটগুলোর মাধ্যমে ক্রেতার দোরগোড়ায় পেঁয়াজ পৌঁছানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।