বেতন কমাবে না অধিকাংশ ব্যাংক

মহামারীকালে বেসরকারি ব্যাংক মালিকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) ব্যাংকারদের বেতন কমানোর যে পরামর্শ দিয়েছে, সেই পথে হাঁটছে না অধিকাংশ ব্যাংক।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 June 2020, 07:40 PM
Updated : 20 June 2020, 10:24 AM

ইউসিবি ও এসবিএসি ব্যাংকের পর আরও পাঁচটি বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তাদের বেতন না কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। এই ব্যাংকগুলো হল- প্রাইম ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া ও মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক।

এছাড়া ইস্টার্ন ব্যাংক ও এনসিসি ব্যাংকও কর্মকর্তাদের বেতন কমাবে না বলে আভাস পাওয়া গেছে।

বেসরকারি খাতের সবচেয়ে বড় ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকও কর্মকর্তাদের বেতন কমানোর বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। বৃহস্পতিবারের পরিচালনা পর্ষদের সভায় বিষয়টি নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। আগামী ২৭ জুনের বোর্ড সভার আলোচ্যসূচিতেও এ বিষয়টি রাখা হয়নি।

সম্প্রতি বিএবির পরামর্শে এক্সিম ও সিটি ব্যাংক কর্মকর্তাদের বেতন কমানোর ঘোষণা দিলে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ ও উৎকণ্ঠা দেখা দেয়।

তবে বৃহস্পতিবার ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) এবং সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স (এসবিএসি) ব্যাংক এই মহামারীর মধ্যে কর্মকর্তাদের বেতন না কমানোর ঘোষণা দিলে ব্যাংকারদের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসে।

বিএবি’র চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার

বেসরকারি ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বিএবি’র চেয়ারম্যান হলেন নজরুল ইসলাম মজুমদার। তিনি এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান। এক্সিম ব্যাংকের যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৯ সালে।

১৯৯৩ সালে নয়টি সদস্য ব্যাংক নিয়ে বিএবির যাত্রা শুরু হয়। ২০০৮ সালের ২১ জানুয়ারি থেকে বিএবির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন নজরুল ইসলাম মজুমদার।

এই নজরুল ইসলাম মজুমদারই বিএবির পক্ষ থেকে সব ব্যাংকের চেয়ারম্যানদের চিঠি দিয়ে আগামী দেড় বছর ব্যাংকারদের বেতন ১৫ শতাংশ হ্রাস, সব ধরনের মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন বন্ধসহ ১৩ দফা পদক্ষেপ নিতে বলেছিলেন।

ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো. শিরিন শুক্রবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বেতন কমানোর প্রশ্নই আসে না। কোনো অবস্থাতেই আমরা এমন অমানবিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব না। যে কর্মকর্তারা ব্যাংকটিকে এমন ভালো জায়গায় নিয়ে এসেছেন এই মহামারীকালে তাদের বেতন কমাব কেন?

“কোভিড-১৯ মহামারীর সময়ে ব্যাংকাররা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গ্রাহকদের সেবা দিচ্ছেন। সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের অবদান রাখছেন। এ অবস্থায় তাদের বেতন কমানোর চিন্তা করছি না।”

ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুরও একই ধরনের কথা বলেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বর্তমান প্রেক্ষাপটে কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা কমানোর কোনো চিন্তা আমরা করছি না।

“এ কথা ঠিক যে এই বছরে ব্যাংকের মুনাফা অনেক কমে যাবে। কিন্তু সেটার কারণে কর্মকর্তাদের বেতন কমানোর মতো কঠিন সিদ্ধান্ত ব্র্যাক ব্যাংক নেবে না।”

প্রাইম ব্যাংকের চেয়ারম্যান তানজিল চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ব্যাংকের কর্মকর্তারা হচ্ছেন আমাদের পরিবারের একটি অংশ। এই কঠিন সময়ে তাদের বেতন কমাব কেন? সংকট মোকাবেলার জন্য আমরা ব্যয় সংকোচন করব ঠিক, কিন্তু সেটা ভিন্ন পথে। পরিবারের সদস্যদের বেতন কমিয়ে নয়।”

“আমরা ইতোমধ্যে সারা দেশে আমাদের যে শাখাগুলো আছে সেগুলোর ভাড়া কমানোসহ অন্যান্য খরচ কমানোর উদ্যোগ নিয়েছি। যাদের কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে শাখাগুলো করা হয়েছে তাদের সংকটের কথা বুঝিয়ে ভাড়া কমানোর চেষ্টা করছি। সবাই ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন।”

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের (এমটিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা বেতন কমাইনি। এই মুহূর্তে কমানোরও কোনো পরিকল্পনা নেই।”

ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরফান আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের ব্যাংকে কর্মকর্তাদের বেতন কমানো হবে না। আমরা ভালো আছি। কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে সংকট মোকাবেলা করা হবে। ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ তাই মনে করে।”

ইস্টার্ন ব্যাংক ও এনসিসি ব্যাংকও কর্মকর্তাদের বেতন কমাবে না বলে জানা গেছে।

ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ইস্টার্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী রেজা ইফতেখার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখন পর্যন্ত বেতন কমানোর কোনো চিন্তাভাবনা আমাদের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ করেনি।”

এরইমধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুও হয়েছে ব্যাংক কর্মকর্তাদের।

তিনি বলেন, “বিএবি কোনো ব্যাংকের রেগুলেটরি বডি নয়, তারা পরামর্শ দিতেই পারে। বেতন কমানোসহ যে কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। আমাদের পর্ষদ এখনও এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।”

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনসিসি ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের ব্যাংকে বেতন কমানো হবে না। কর্তৃপক্ষ এমন সিদ্ধান্তের কথা বিভাগীয় প্রধানদের জানিয়ে দিয়েছে।”

ইসলামী ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান শাহাবুদ্দিন চুপ্পু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ব্যাংকের বোর্ড এখন পর্যন্ত বেতন কমানোর কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। বৃহস্পতিবার বোর্ডের সভা ছিল। সভায় এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। ২৭ জুন বোর্ডের আরেক সভা হবে। সে সভার আলোচ্যসূচিতেও বেতন কমানোর এজেন্ডা নেই।”

গত রোববার ব্যাংক কর্মকর্তাদের বেতন ১৫ শতাংশ কমানোর সুপারিশ করে দেশের সব বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি দেয় বিএবি। চিঠিতে কর্মীদের পদোন্নতি, ইনক্রিমেন্ট, ইনসেনটিভ বোনাস বন্ধসহ ১৩ দফা সুপারিশ করা হয়।

সেই সুপারিশের আলোকে সিটি ব্যাংক তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ১৬ শতাংশ বেতন-ভাতা কমিয়েছে। এক্সিম ব্যাংক কমিয়েছে ১৫ শতাংশ। এবি ব্যাংক মে ও জুন মাসের বেতন ৫ শতাংশ কমিয়েছে।

বৃহস্পতিবার আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক (এআইবিএল) কর্মকর্তাদের বেতন কমিয়েছে ১০ থেকে ২৫ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে কার্যরত ৬০টি ব্যাংকে বর্তমানে জনবল রয়েছে ১ লাখ ৭৮ হাজার ৪৩০ জন। এর মধ্যে বেসরকারি ব্যাংকে আছে ১ লাখ ৯ হাজার ১২৭ জন। বিদেশি ব্যাংকে তিন হাজার ৮৫৮ জন। আর সরকারি ব্যাংকে ৬৫ হাজার ৪৪৫ জন।