অফশোর ব্যাংকিং নীতিমালা শিথিল

ব্যাংকগুলোর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অফশোর ব্যাংকিং নীতিমালা শিথিল করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 June 2020, 05:40 PM
Updated : 18 June 2020, 05:40 PM

এখন থেকে এই ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে মাত্র ২ শতাংশ সিআরআর সংরক্ষণ করলেই হবে। সাধারণভাবে যেখানে রাখতে হয় সাড়ে ৪ শতাংশ।

আর অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে একটি ব্যাংকের মূলধনের ২০ শতাংশের পরিবর্তে এখন থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত তহবিল সংগ্রহ করা যাবে।

এছাড়া বিদ্যমান নীতিমালায় আরও কিছু সংশোধনী এনে বৃহস্পতিবার ছে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি নির্দেশনা জারি করে তা সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠিয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, সিআরআর সংক্রান্ত নীতিমালা আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে। অন্য সব নির্দেশনা এখন থেকে কার্যকর হবে।

বাংলাদেশি শিল্পদ্যোক্তা মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদি ঋণ দেওয়ার আগে ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের অনুমোদন নেওয়ার শর্ত তুলে দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে ঋণ দেওয়ার পর বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগকে অবহিত করতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ব্যাংকের অফশোর কার্যক্রমের তহবিল আহরণের সুযোগ বৃদ্ধি, বৈদেশিক তহবিলের ব্যবহার নিশ্চিত করা, তহবিল ব্যবস্থাপনা যথাযথ রাখার মাধ্যমে অফশোর ব্যবসার সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং অফশোর ব্যাংকিং কার্যক্রমের আরও সুষ্ঠু বিকাশের জন্য এসব সংশোধনী আনা হয়েছে।

অফশোর ব্যাংকিংয়ে ঋণের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলো এর নীতিমালা শিথিল করতে দাবি জানিয়ে আসছিল।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশ চেম্বারের সভাপতি ও বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অফশোর ব্যাংকিংয়ে ঋণের সুদের হার কম হওয়ায় অনেকেই এখন থেকে ঋণ নিয়ে থাকে। সে কারণে এই ঋণের চাহিদা বেশ বেড়েছে।

“কোভিড-১৯ মহামারীর এই সংকটের সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে আমি মনে করি।”

দেশের বাইরে থেকে তহবিল সংগ্রহ করে রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানের মাঝে বিতরণের জন্য ১৯৮৫ সাল থেকে বাংলাদেশে অফশোর ব্যাংকিং কার্যক্রমের অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে এত দিন নীতিমালা ছাড়াই চলছিল কার্যক্রম।

গত বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রথমবারের মতো অফশোর ব্যাংকিং পরিচালনার নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ওই নীতিমালা অনুযায়ী একটি ব্যাংক যে ঋণ বিতরণ করবে, তার অন্তত ৭৫ শতাংশ দেশেই বিনিয়োগ হতে হবে। আর কোনো অবস্থায় ব্যাংকের মোট মূলধনের ২০ শতাংশের বেশি আমানত অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সংগ্রহ করা যাবে না। এ ছাড়া ব্যাংকের দায়-সম্পদ ব্যবস্থাপনা, মূলধন, সিআরআর ও এসএলআর সংরক্ষণসহ সব ক্ষেত্রে সাধারণ ব্যাংকিংয়ের মতো নিয়ম মেনে চলতে হবে।

পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা না থাকার সুযোগ নিয়ে অফশোর ব্যাংকিং থেকে ঋণ নিয়ে নানা অপব্যবহারের তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন পরিদর্শনে উঠে আসে।

অফশোর ব্যাংকিং হলো ব্যাংকের অভ্যন্তরে পৃথক ব্যাংকিং। বিদেশি কোম্পানিকে ঋণ প্রদান ও বিদেশি উৎস থেকে আমানত সংগ্রহের সুযোগ রয়েছে অফশোর ব্যাংকিংয়ে।

স্থানীয় মুদ্রার পরিবর্তে বৈদেশিক মুদ্রায় হিসাব হয় অফশোর ব্যাংকিংয়ে। ব্যাংকের কোনো নিয়ম-নীতিমালা অফশোর ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে প্রয়োগ হয় না। কেবল মুনাফা ও লোকসানের হিসাব যোগ হয় ব্যাংকের মূল হিসাবে।

অফশোর ব্যাংকিংয়ে ঋণের সুদ হার ৬ শতাংশের নিচে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত অফশোর ব্যাংকিংয়ের ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৫৯ হাজার ২২৭ কোটি টাকা।

এক বছর আগে অর্থাৎ ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ছিল ছিল ৫১ হাজার ৬৯১ কোটি টাকা। এ হিসাবে এক বছরে অফশোর ব্যাংকিংয়ের ঋণ বেড়েছে ১৪ দশমিক ৫৮ শতাংশ।