করোনাভাইরাস: খাবারের বাজারে প্রভাব কতটা

নভেল করোনাভাইরাসের কারণে সারাবিশ্বেরই অর্থনৈতিক অবস্থা টালমাটাল। যার মারাত্মক প্রভাব পড়েছে খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থাতেও। একদিকে বিঘ্নিত হচ্ছে খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থা, অন্যদিকে কৃষিশ্রমিকের ঘাটতির প্রভাব পড়ছে উৎপাদনেও।

>>রয়টার্স
Published : 3 April 2020, 10:15 AM
Updated : 3 April 2020, 10:15 AM

চীন থেকে ভাইরাসটি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে দেশে দেশে ‘লকডাউন’ ঘোষণা করা হয়। দীর্ঘদিন ঘরবন্দি হয়ে থাকতে হবে, এমন প্রস্তুতির চিন্তা থেকে আতঙ্কিত মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ে সুপার মার্কেট, শপিংমল, দোকানপাটে। ঘরে খাবার মজুদের চেষ্টায় দোকানগুলো দ্রুত শূন্য হয়ে যায়।

মাংস, দুগ্ধপণ্য উৎপাদনকারীদের পাশাপাশি ফল ও সবজি চাষিদেরও রেস্তোরাঁ থেকে শুরু করে মুদি দোকানে পণ্য সরবরাহে হিমশিম খেতে হয়।ফলে খাদ্য ঘাটতির একটা ধারণা তৈরি হয় ভোক্তাদের মধ্যে।

যদিও খুচরা বিক্রেতা এবং উৎপাদনকারীরা বলে আসছে, খাদ্যের বড় ধরনের কোনো সঙ্কট নেই, তাছাড়া সরবরাহে যতটুকু ঘাটতি তৈরি হয়েছে, তাও পূরণ করা সম্ভব। এই সঙ্কটের মধ্যেও ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার বেকারি ও পাস্তা কোম্পানিগুলো উৎপাদনও বাড়িয়েছে।

খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, এখন আতঙ্কিত সেই কেনাকাটায় কিছুটা ভাটা পড়েছে। কারণ এখন ঘরে ঘরে খাদ্যের মজুদ তৈরি হয়েছে এবং মানুষ লকডাউন পরিস্থিতিতে অনেকটাই অভ্যস্থ হয়ে গেছে।

কিন্তু এখন একেবারে মাঠ থেকে মানুষের প্লেট পর্যন্ত খাবার পৌঁছে দেওয়ার সমস্যাটাই বাড়ছে দিনকে দিন, যা আরও দীর্ঘায়িতও হতে পারে।

খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী- দুই ধরনের সঙ্কট তৈরি হয়েছে।

স্বল্পমেয়াদের সঙ্কট হচ্ছে, আকাশপথে পণ্য পরিবহন বন্ধ হওয়া এবং সড়কপথে যানবাহন সঙ্কট বিঘ্ন ঘটাচ্ছে খাদ্য সরবরাহে।

অন্যদিকে কৃষিশ্রমিকের ঘাটতি প্রভাব ফেলছে মাঠে ফসল উৎপাদনে। এতে খাদ্য ঘাটতি দেখা দেওয়ার পাশাপাশি প্রধান খাদ্য শস্যগুলোর দামও বেড়ে যেতে পারে। যার ফলে এক দশক আগে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে কাঁপিয়ে দেওয়া খাদ্য সঙ্কটের মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। এটিকে বলা হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদী সঙ্কট।  

সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়ার কারণগুলো কী?

চীনে করোনাভাইরাস সঙ্কট দেখা দেওয়ার পর বন্ধ হয়ে যায় অনেক ফ্লাইট ও পণ্যের কনটেইনারবাহী জাহাজ চলাচল; আফ্রিকা থেকে ইউরোপে সবজি এবং দক্ষিণ আমেরিকা থেকে যুক্তরাজ্যে ফল সরবরাহও বাধাগ্রস্ত হতে থাকে।

অন্যদিকে কৃষিশ্রমিকের সঙ্কটের কারণে মাঠেই নষ্ট হয়ে যেতে পারে বিপুল পরিমাণ ফসল।

ইউরোপের দেশগুলো সীমান্তগুলো বন্ধ করে দেওয়ার পর বসন্তে সেখানে দেখা দেয় শ্রমিক সঙ্কট। সে সময় মাঠ থেকে স্ট্রবেরি এবং অ্যাসপারাগাস তোলার জন্য কৃষি খামারগুলোকে হন্যে হয়ে শ্রমিক খুঁজতে হয়। ফ্রান্সে দুই লাখ শ্রমিকের ঘাটতি পূরণে নাগরিকদের কাছে সহায়তা চাইতে হয়েছে।

শস্য উৎপাদনে ভারতও বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়েছে। লকডাউনের কারণে সেখানে শ্রমিকরা ঘরবন্দি হয়ে পড়ায় গম কাটার মৌসুমেও খামার এবং বাজারগুলোকে হাত গুটিয়ে বসে থাকতে হচ্ছে।

ব্যয় বাড়ছে খাবারে?

বেকারি এবং পাস্তা জাতীয় খাবারের উৎপাদন কিছুটা বাড়ায় দুই মাসের মধ্যে মার্চে বিশ্ববাজারে দামও বেড়ে যায়। কিন্তু অন্যদিকে তেলের দাম পড়ে যাওয়ায় বায়োফুয়েলের কাঁচামাল ভুট্টার দাম সাড়ে তিনবছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে পৌঁছায়। আর গত আটবছরের মধ্যে থাইল্যান্ডে এখন চালের দাম সর্বোচ্চ।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, যেসব দেশ প্রধান কিছু খাদ্যশস্য আমদানি করে, ভালো মজুদ থাকার পরও তারা ব্যাপকভাবে কেনা শুরু করলে বিশ্বজুড়ে খাদ্যস্ফিতি বেড়ে যেতে পারে।

দীর্ঘ সঙ্কট সামলানোর মতো খাবার আছে তো?

বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে বেশি চাহিদাসম্পন্ন খাদ্য শস্যগুলোর পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। এ বছর বিশ্বে গমের রেকর্ড উৎপাদন হবে বলেও আভাস দিয়েছেন তারা।

তবে বড় বড় সরবরাকারীদের অল্প কিছু দেশে খাণ্যপণ্য রপ্তানিতে মনোযোগী হওয়া এবং রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার কারণে বিশ্বব্যাপী সরবরাহ ব্যবস্থাকে আরও সঙ্কটের মুখে ফেলতে পারে।   

বৈশ্বিক খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে চীনও। শাটডাউন অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে থাকায় বিদেশ থেকে কৃষিজাত পণ্য সংগ্রহে ঝোঁকার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে সেখানে। শূকরের মহামারী কাটিয়ে ওঠার পর বিশাল এই খাতটি পুনর্গঠনেও মনোযোগী হয়েছে দেশটি।