বদলির আদেশ হলেও কেরুতেই থাকছেন আনছারী

দেশে অ্যালকোহলজাত পানীয় প্রস্তুতকারী একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান কেরু অ্যান্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহেদ আলী আনছারীর বদলির আদেশ দিয়েও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সমালোচনার মধ্যে তাকে আর না সরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

ফয়সাল আতিকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 March 2020, 12:41 PM
Updated : 31 March 2020, 12:52 PM

বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন বলছে, চাকরির মেয়াদ প্রায় শেষ হয়ে আসায় নিয়মিত বদলির অংশ হিসেবেই আনছারীকে দর্শনা থেকে ঢাকায় সদর দপ্তরে বদলির আদেশ হয়েছিল। তবে আপাতত তিনি কেরুতেই থাকছেন।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে হঠাৎ বিক্রির চাপে বাজার থেকে যখন হ্যান্ড স্যানিটাইজার উধাও হয়ে গেল, তখন ওই পণ্যটি উৎপাদন করার ঘোষণা দিয়ে আলোচনার জন্ম দেয় কেরু অ্যান্ড কোং।

কিন্তু গত ২৩ মার্চ উৎপাদন শুরুর পরদিনই কোম্পানির এমডি আনছারীর বদলির আদেশ আসে। তার জায়গায় দায়িত্ব পান সদর দপ্তরের আইন শাখার মহাব্যবস্থাপক আবু সাঈদ।

কিন্তু সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে এই বদলির সিদ্ধান্ত নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তোলেন। আনছারী নিজেও মর্মবেদনার কথা প্রকাশ করেন।

মঙ্গলবার তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত ২৩ মার্চ স্যানিটাইজারটা লঞ্চ করেছি, ২৪ তারিখে বদলির আদেশ হয়েছে। করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের এই সময়ে এমন কী ঘটনা ঘটলো যে এমন করে অর্ডারটা করতে হয়েছে?”

আগামী ১৯ এপ্রিল চাকরির মেয়াদ শেষ হচ্ছে জানিয়ে আনছারী বলেন, “আমি ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। উনারা বলেছেন, আদেশ যাই হউক, জীবনের শেষ কর্মদিবস পর্যন্ত আমি যেন এই কোম্পানিতেই থাকি।”  

শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠান কেরু এন্ড কোম্পানি চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনায় অবস্থিত। ১৯৩৮ সাল থেকে এ কারখানা স্পিরিট উৎপাদন করে আসছে।

চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান চাইলেই তার করপোরেশনের অধীন যে কোনো কোম্পানির এমডি বা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে বদলি করতে পারেন। কিন্তু দেশের এই জরুরি পরিস্থিতিতে এখনই কেন আনছারীকে বদলি করতে হল, সেই প্রশ্ন অনেকে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তোলেন।

কাজল আব্দুল্লাহ নামের একজন ফেইসবুক ‘করোনা অ্যাওয়ারনেস’ নামের একটি পেইজে প্রশ্ন করেন- “দেশপ্রেমের মূল্য কি এই?”

 
 

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান সনৎ কুমার সাহা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কোনো এমডি অবসরে যাওয়ার আগে তাকে সাধারণত সদর দপ্তরে বদলি করা হয়।

“এর সঙ্গে হ্যান্ড স্যানিটাইজার উৎপাদনকে কেন মিলিয়ে ফেলা হল তা আমার বোধগম্য নয়। বদলির আদেশ দেওয়া হলেও জাহেদ আলী আনছারী আপাতত দর্শনার ওই প্রতিষ্ঠানেই থাকছেন।”

নতুন যাকে এমডি করা হয়েছে, তিনি আগামী ১৬ এপ্রিলের আগে কেরুতে যোগ দিচ্ছেন না বলে নিশ্চিত করেন সনৎ।

২৩ মার্চ উৎপাদন শুরুর পর প্রথম দিন ৩০০ লিটার (তিন হাজার বোতল) হ্যান্ড স্যানিটাইজার উৎপাদন করে কেরু অ্যান্ড কোং। পরে তা আরও বাড়তে থাকে। এখন দিনে ১০ হাজার বোতল বা এক হাজার লিটার উৎপাদন করা হচ্ছে।

পুলিশসহ সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিসহ বিভিন্ন সেচ্ছাসেবী সংগঠনের কাছে পাইকারি দরে এই স্যানিটাইজার সরবারহ করছে কেরু।

কেরুর ১০০ মিলিলিটারের স্যানিটাইজারের বোতলে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য লেখা রয়েছে ৬০ টাকা। কিন্তু বাজারে কোনো কোনো কোম্পানির ৫০ এমএল বোতলের দামও ১৪৫ টাকা রাখা হচ্ছে।

আনছারী দাবি করেন, “কেরুর স্যানিটাইজার বাজারে ছাড়ার পর মার্কেটটা স্থিতিশীল হয়েছে। অনেকে বেশি দাম নেবে বলে যে পরিকল্পনা করেছে তা থেকে সরে আসতে হয়েছে তাদের।”