বাজারে ক্রেতার আকাল, প্রভাব দামেও

নভেল করোনাভাইরাস ঠেকাতে সরকারের সাধারণ ছুটি ঘোষণা ও নাগরিকদের ঘরে থাকার আহ্বানে ক্রেতা কমেছে ঢাকার কাঁচাবাজারগুলোতে, যার প্রভাব পড়েছে সবজির দামে।

ফারহান ফেরদৌসবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 March 2020, 11:49 AM
Updated : 28 March 2020, 12:08 PM

বিক্রেতারা বলছেন, ক্রেতার অভাবে তাদের বিক্রি কমেছে কয়েক গুণে। পচনশীল এসব পণ্য ধরে রাখা যায় না বলে দামও কমেছে।

অবরুদ্ধ এই দশায় বিক্রি কমেছে সুপারশপগুলোতেও। মীনা বাজারের মগবাজার শাখার ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জ রাসেল জানালেন, গত দুই দিনে তাদের বিক্রি কমে চার ভাগের এক ভাগে নেমেছে।

শনিবার বিকালে তিনি টেলিফোনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এই মাসের মাঝামাঝিতে মানুষের মাঝে করোনাভাইরাস ভীতি ছড়িয়ে পড়ার পর তাদের বিক্রি বেড়ে গিয়েছিল দুই থেকে তিনগুণ। সপ্তাহখানেক তা চলার পর ২৬ মার্চ সরকারি ছুটি শুরুর দিন থেকে ক্রেতা কমতে শুরু করে।

“গতকাল আর আজকে ক্রেতা অনেক কমে গেছে। স্বাভাবিক সময়ে যে বিক্রি হয় তার চার ভাগের এক ভাগে নেমেছে।”

এর আগে দুপুরে রাজধানীর সবচেয়ে বড় বাজারগুলোর অন্যতম কারওয়ান বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সবজির পসরা সাজিয়ে বসে আছেন বিক্রেতারা, কিন্তু ক্রেতা নেই।

পাইকারি মরিচ বিক্রেতা দেলোয়ার বলেন, “হোটেলগুলা সব বন্ধ। আমাদের পণ্যের চাহিদা কমে গেছে। এদিকে মানুষজন বাজারে নেই। তাই দাম অনেক কমে গেছে।”

কাঁচা মরিচ ২০ টাকা কেজি বিক্রি করছেন দেলোয়ার। ধনিয়া পাতারও একই দাম রাখছিলেন তিনি। যেখানে দুই দিন আগেও এসব পণ্য দ্বিগুণ-তিনগুণ দামে বিক্রি হয়েছে।

টমোটে বিক্রেতা বিল্লাল বলছেন, বিক্রি নেমেছে পাঁচ ভাগের এক ভাগে।

“আগে দিনে ৩০ হাজার টাকা বিক্রি করেছি। গতকালকে বিক্রি করেছি মাত্র ৫ হাজার টাকা।”

এক কেজি পাকা টমেটো ১০ থেকে ১৪ টাকায় বিক্রি করছেন তিনি।

বাজারে বেশিরভাগ সবজির দাম নেমে এসেছে ২৫ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে। বেচা-বিক্রি কমে যাওয়ায় মন খারাপ সবজি বিক্রেতা সোহেলের। তিনি বলেন, বেলা দেড়টা পর্যন্ত মাত্র তিন হাজার টাকার মতো বিক্রি করেছেন ।

“অথচ এই বন্ধের আগে দিনে ২৪ হাজার টাকার মাল কিনে অনেক টাকায় বিক্রি করতাম।”

এই বাজারে করলা বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়। গাজরের কেজি ২০ থেকে ২৫ টাকা, পটল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, শসা ২৫ থেকে ৩০ টাকা, মুলা ২০ থেকে ২৫ টাকা, কচুর লতি ৪০ টাকা, বেগুন ৩০ থেকে ৪০ টাকা এবং শিম ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

কারওয়ানবাজারে অনেক লাউ পড়ে থাকতে দেখা যায়। এমনি সময়ে ৩০-৪০ টাকার লাউ ১০ টাকায় দিতে চাইছিলেন বিক্রেতা। ছোট আকারের মিষ্টি কুমড়া বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ২০ টাকায়।

কমেছে আলুর দামও, ৫ কেজির এক পাল্লা আলু বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। দেশি পেঁয়াজের কেজি ৩৮ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আমদানি করা রসুনের কেজি ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা, আর আদা ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

দাম কেমেছে মুরগি ও মুরগির ডিমের। ফার্মের মুরগির ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায়। দুই দিন আগেও ডিমের ডজন ছিল ১০৫ থেকে ১০৮ টাকা।

ফার্মের ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা থেকে ১২০ টাকা কেজি, বন্ধের আগে যা ছিল ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা। লেয়ার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা কেজি, যা আগে ছিল ১৮০ টাকা কেজি।

মাঝারি আকারের রুই-কাতল মাছ ২৩০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি, চিংড়ি আকার ভেদে ৩৫০ থেকে ৫৫০ টাকা কেজি, কোরাল মাছ ৬০০ টাকা কেজি এবং বড় রূপচাঁদা মাছ ৭০০ টাকা কেজি বিক্রি হতে দেখা যায়।