চামড়া নিয়ে বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে আগাম প্রস্তুতিতে সরকার

গেল বছরের মতো কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিপণন নিয়ে যাতে বিশৃঙ্খলা তৈরি না হয় সেজন্য এবার আগেভাগেই একগুচ্ছ প্রতিকারমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Feb 2020, 12:39 PM
Updated : 12 Feb 2020, 12:39 PM

চামড়ার ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত না হলে সরকারি উদ্যোগে চামড়া সংরক্ষণ ও কাঁচা চামড়া রপ্তানির বিষয়টিও বিবেচনায় রাখা হয়েছে।

বুধবার শিল্প মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে চামড়া শিল্পের উন্নয়নে গঠিত টাস্ক ফোর্সের প্রথম সভায় এসব পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা হয়।

শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের সভাপতিত্বে টাস্ক ফোর্সের সভায় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়কমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।

গত বছর কোরবানির সময় ঢাকার ভেতরে প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৪৫ টাকা থেকে ৫০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৩৫ টাকা থেকে ৪০ টাকা নির্ধারন করেছিল সরকার। তবে দাম পড়ে যাওয়ায় মাঠের চিত্র ছিল ভিন্ন।

দেশের বিভিন্ন স্থানে আড়তদারদের কাছে চামড়া বিক্রি করতে না পেরে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বিপুল পরিমাণ চামড়া মাটিতে পুঁতে ফেলেন কিংবা ফেলে দেন।

চট্টগ্রাম, সিলেট, উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অন্তত তিনশ কোটি টাকার চামড়া নষ্ট হওয়ার শঙ্কা করা হলেও ব্যবসায়ীরা ১০ হাজার চামড়া নষ্ট হওয়ার তথ্য দিয়েছিলেন।

সভায় সিদ্ধান্ত হয়, আসন্ন কোরবানির ঈদে পশুর চামড়া যথাযথভাবে সংগ্রহ ও সংরক্ষণের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে শিল্প, বাণিজ্য, পরিবেশ ও বন, ধর্ম, তথ্য মন্ত্রণালয়, এনবিআর, অর্থ বিভাগ, ট্যারিফ কমিশন, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং চামড়া শিল্পসংশ্লিষ্টদের অংশগ্রহণে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি আগামী সাত কর্মদিবসের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে একটি সুপারিশ জমা দেবে। 

চামড়া ব্যবসায়ী ও ট্যানারি মালিকরা আড়তদারদের কাছ থেকে যথাসময়ে কোরবানির পশুর চামড়া না কিনলে সেগুলো সরকারি উদ্যোগে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের বিভিন্ন গুদামে ন্যূনতম তিন মাস সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া চামড়া সংরক্ষণের জন্য কওমি মাদ্রাসাগুলোকে প্রস্তুত রাখা হবে; এজন্য তাদের ভর্তুকি দেওয়া হবে।

প্রয়োজন হলে উপজেলা পর্যায়ে ন্যূনতম দুইজন ডিলারকে চামড়া সংরক্ষণ ও বিপণনের জন্য নিয়োগ দেওয়া হবে এবং তাদেরকে প্রণোদনা দেওয়া হবে।

পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রয়োজন হলে নীতি সংশোধন করে সাময়িকভাবে কাঁচা চামড়া/ওয়েট ব্লু চামড়া রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হবে।

সভায় আরও জানানো হয়, গত কোরবানির ঈদে আড়তদারদের কাছ থেকে চামড়া কেনার জন্য ট্যানারি মালিকদের ৬৯৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হলেও ট্যানারিগুলো মোট ৪৩৮ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ করে। গতবারের অভিজ্ঞতার আলোকে আগামীতে কোরবানির পশুর চামড়া কেনার জন্য ট্যানারি মালিকদের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংস্থানের বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সভায় শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, চীনে করোনা ভাইরাস বিস্তারের ফলে দেশিয় চামড়া শিল্প যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য সরকার বিকল্প বাজার অনুসন্ধান করছে। ইউরোপের বাজারে চামড়াজাত পণ্য রপ্তানির জন্য ট্যানারিগুলোকে লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপ্র (এলডব্লিউজি) এর সার্টিফিকেশন অর্জন করতে হবে।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, কোরবানির চামড়ার সাথে ধর্মীয় অনুভূতি জড়িত। দেশিয় চামড়া শিল্পের স্বার্থে ট্যানারিগুলোকে রক্ষা করতে হবে। সে সঙ্গে কোরবানির পশুর চামড়া যাতে নষ্ট না হয় এবং তৃণমূলের ব্যবসায়ীরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে বিষয়টিও দেখতে হবে।

এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল হালিম, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শাখাওয়াত হোসেন, মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন, জন নিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জাহাঙ্গীর আলম, বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ডের মহাপরিচালক মনোয়ারুল ইসলাম, বিসিকের পরিচালক আব্দুস ছালাম, বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টাস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন, বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সচিব নূরুল ইসলাম, বিডার নির্বাহী সদস্য মোহসিনা ইয়াসমিন, বুয়েটের অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান রিয়াজুল হক, বিল্ডের সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট কানিজ ফাতেমা, ঢাকা চামড়া শিল্প নগরীর প্রকল্প পরিচালক জিতেন্দ্র নাথ পাল সভায় অংশ নেন।