একটি রিট আবেদনে সোমবার বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাই কোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ (বিআরপিডি) গত ১৬ মে দুই শতাংশ অর্থ আগাম পরিশোধ সাপেক্ষে খেলাপিদের ঋণ পুনঃতফসিলের যে সার্কুলার জারি করেছিল, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ গ্রহীতাদের বেলায় একই ধরনের সার্কুলার জারির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের নিষ্ক্রিয়তা ও ব্যর্থতা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না এবং বাংলাদেশ ব্যাংককে একই ধরনের সার্কুলার জারি করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের মহাব্যবস্থাপক, ব্যাকিং প্রবিধি ও নীতিমালা বিভাগের মহাব্যবস্থাপক, ফনিক্স ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ পাঁচ বিবাদীকে চার সপ্তাহের মধ্যে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী পলাশ চন্দ্র রায়। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নুরউস সাদিক।
পলাশ রায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায় একই নীতি-প্রবিধি অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনেই পরিচালিত বা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। শুধু তাই না, ঋণ ঘোষণা, ঋণের পুনঃতফসিল, সুদের হারসহ অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাংলাদেশে ব্যাংক একই ধরনের নীতি, প্রবিধি, সার্কুলার, নির্দেশনা জারি করে থাকে।
“ঋণ পুনঃতফসিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা ওই সার্কুলার আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে অসঙ্গতি, অন্যায্যতা, বৈষম্য, স্বেচ্ছাচারিতা ও অসমতার সৃষ্টি করবে। যে কারণে বিআরপিডির ওই বিজ্ঞপ্তি আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত এবং অকার্যকর।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারটি শুধু ব্যাংক খাতের ঋণ খেলাপিদের জন্য হওয়ায় রিট আবেদনকারীসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ গ্রহীতারা বঞ্চিত হচ্ছেন বলে দাবি করেন এই আইনজীবী।
“বিবাদীদের এ ধরনের পদক্ষেপ সম্পূর্ণভাবে বৈষম্যমূলক এবং সংবিধানের ২৭, ৩১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মৌলিক অধিকার পরিপন্থি।”
দুই শতাংশ অর্থ আগাম পরিশোধসাপেক্ষে খেলাপিদের জন্য ঋণ পুনঃতফসিলের বিশেষ সুযোগ দিয়ে বাংলাদেশর ব্যাংকের বিআরপিডি গত ১৬ মে বিজ্ঞপ্তি দেয়।
একই সুবিধা পেতে ফনিক্স ফাইন্যান্স থেকে ঋণ নেওয়া ব্যবসায়ী মো. ইউনুস পাটওয়ারী গত ৩ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগ (ডিএফআইএম) ও বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করেন।
তখন তাকে জানানো হয়, এই সুবিধা শুধু ব্যাংকের ঋণ গ্রহীতাদের জন্য প্রযোজ্য। আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ গ্রহীতাদের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য নয়।
পরে গত ১২ সেপ্টম্বর তিনি বিশেষ সুবিধার একই ধরনের সার্কুলার জারি করতে ফনিক্স ফাইন্যান্স ও বাংলাদেশ ব্যাংককে আইনি নোটিস দেন।
কিন্তু নোটিসের জবাব না পেয়ে বিআরপিডির সার্কুলারের মত বিশেষ সুবিধার সার্কুলার জারির নির্দেশনা চেয়ে গত ৭ নভেম্বর হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট আবেদন করেন।
এদিকে দুই শতাংশ অর্থ আগাম পরিশোধসাপেক্ষে খেলাপিদের জন্য ঋণ পুনঃতফসিলের বিশেষ সুযোগ দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা সার্কুলারকে বৈধ ঘোষণা করে গত ৩ নভেম্বর রায় দেয় হাই কোর্ট।