কীভাবে সেটা হবে, তারও একটা রূপরেখা একেঁছেন বিগত সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল।
বাড়তি দামের কারণে এখন থেকে দেশের মানুষ বাড়ির খোলা জায়গায় পেঁয়াজের চাষ করবে বলে মনে করছেন তিনি।
২০১৪ সালে বিজেপি ভারতের ক্ষমতায় আসার পর দেশের ভেতরে ‘গো রক্ষা’ আন্দোলন শুরু হওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশেও দেশটির গরু আসা কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। এরপর এই পাঁচ-ছয় বছরে গরু উৎপাদন বেড়ে দেশে মাংসের চাহিদা অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে পূরণের সক্ষমতা তৈরি হয়েছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে।
রোববার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির পাশাপাশি পেঁয়াজ নিয়ে কথা বলেন কমিটির সভাপতি তোফায়েল আহমেদ।
ভারত হঠাৎ করে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় এই সংকট তৈরি হয়েছে জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, পেঁয়াজের জন্য শুধু তাদের ওপর নির্ভরতা ভুল ছিল।
“এখন পেঁয়াজের দাম বাড়ল। আমরা মনে করি, আমাদের দেশে সাধারণ মানুষ বাড়ির খোলা জায়গায় পেঁয়াজ চাষ করবে। আগামী দুই বছরের মধ্যে ইনশাল্লাহ পেঁয়াজ রপ্তানিকারক দেশে পরিণত করব।”
পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি নিয়ে তিনি বলেন, “পৃথিবীর সব দেশেই এখন পেঁয়াজের দাম বেশি। মিয়ানমারে কম ছিল, এখন বেড়েছে। ভারতে পেঁয়াজের দাম বাংলাদেশি টাকায় ১৪২ টাকার মতো।”
বাজারে পণ্যের দাম বাড়া নিয়ে খবর প্রকাশ না করে ‘সাহায্য’ করার আহ্বান জানান বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল।
আগামী রোজার আগে যাতে পেঁয়াজসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম না বাড়ে সে লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন অংশীজনদের নিয়ে বৈঠক করা হবে বলে জানান তিনি।
সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ভবিষ্যতে পেঁয়াজে সুদিন দেখলেও আপাতত এই খাদ্যপণ্য নিয়ে কোনো সুখবর দিতে পারলেন না বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
কবে নাগাদ পেঁয়াজের দাম কমবে, সে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, “আমদানি করা পেঁয়াজের বড় অংশ মিশর থেকে আসলে এবং দেশীয় উৎপাদন বাজারে আসলে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি বা শেষ নাগাদ পেঁয়াজের দাম কমতে পারে।
“যদি আমাদের বাইরে থেকে ইমপোর্ট করে আনতে হয়, যদি শুধু মিশর থেকে চালাতে পারি, তাহলে ল্যান্ডেড কস্ট পড়বে আনুমানিক ৪০-৪৫ টাকা। সেই জায়গায় যেতে আমাদের সময় লাগবে। অনেক চেষ্টা করার পর মাত্র পরশু দিন আমাদের সেই চালানটা আসছে। আমাদের চেষ্টা করতে হবে যাতে বেশিরভাগ সেখান থেকে আনা যায়।”
সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ার পর বাংলাদেশে এই নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকে। যে পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৫০-৬০ টাকায় পাওয়া যেত, তার দাম কয়েক দিনের মধ্যে ১০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। এরপর ক্রমশ বাড়তে থাকে পেঁয়াজের দাম। এরমধ্যে নভেম্বরের প্রথমার্ধে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতের পর সরবরাহ বিঘ্নিত হয়ে পেঁয়াজের দাম আড়াইশ টাকা ছাড়িয়ে যায়।
অস্বাভাবিক এই মূল্য বৃদ্ধির মধ্যে সরকার কার্গো বিমানে করে পেঁয়াজ আনার ঘোষণা দেওয়ার পর নভেম্বরের দ্বিতীয় ভাগে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমলেও কয়েক দিনের মধ্যে আবার তা বেড়ে গেছে।
“আমাদের দেশীয় উৎপাদন বাড়ানো। উৎপাদন বাড়াতে হলে যেটা করতে হবে কৃষকরা যাতে ন্যায্য দাম পায়। আগামীতে যেটা চিন্তা করছি, আমাদের উৎপাদন বাড়লে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আনা কমিয়ে দেব।”
প্রধানমন্ত্রীর বাসায় রান্নায় পেঁয়াজ ব্যবহার করা হচ্ছে না-এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বাণিজ্যমন্ত্রীর পরিবারের কথা জানতে চান এক সংবাদিক।
জবাবে টিপু মুনশি বলেন, “একটা কথা বলি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কী পরিপ্রেক্ষিতে বলেছেন সেটা আমার জানা নাই। আমাদের পরিবারে চেষ্টা করি, সবাইকে বলব, ট্রাই টু ইউজ লেস।”
সংবাদ সম্মেলনে সবজির বাড়তি দাম নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তোফায়েল আহমেদ বলেন, পরিবহন খরচের কারণে ঢাকার বাজারে সবজির দাম বেশি।
ভোজ্য তেলের দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়েছে।”
এক প্রশ্নের জবাবে তোফায়েল আহমেদ বলেন, “বাজার সিন্ডিকেট বলতে আসলে কিছু নেই। ব্যবসায়ীরা সরকারের বন্ধু। তাদের সহযোগিতা নিয়েই সরকার কাজ করতে চায়। ধরপাকড় করে বা জবরদস্তি করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যায় না।”
এর আগে তোফায়েল আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটির সদস্য বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন, মোহাম্মদ হাছান ইমাম খাঁন, সেলিম আলতাফ জর্জ ও সুলতানা নাদিরা অংশ নেন।
বাণিজ্য সচিব জাফর উদ্দিন, ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান নূর-উর-রহমানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।